উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাঁচা নুন খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। রান্নায় নুনের পরিমাণ কমাতে মশলার ব্যবহার এবং সৈন্ধব লবণের মতো বিকল্প বেছে নেওয়া যেতে পারে। তবে শরীরকে সুস্থ রাখতে নুন পুরোপুরি বর্জন করাও অনুচিত কারণ এটি বিপাকক্রিয়া ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য জরুরি।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে বাইরের খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। কিন্তু বাড়ির তৈরি খাবার কি নিরাপদ? উচ্চ রক্তচাপের শত্রু হলো নুন। বাড়ির তৈরি নোনতা খেলে কিংবা কাঁচা নুন খেলে প্রেশার বাড়তে বাধ্য।
রান্নায় স্বাদমতো নুন ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু কাঁচা নুন খেলেই তখন বিপদ। যদি আপনি খাবার পাতে আলাদা করে নুন নিয়ে বসেন, তখন বাড়ির খাবার খেয়েও রক্তচাপ বশে রাখা সম্ভব নয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কাঁচা নুন খাওয়া চলবে না।
** কোন উপায়গুলি অনুসরণ করলে খাবারে নুন খাওয়া কমতে পারে :
* টেবিল সল্ট অর্থাৎ যে নুন নিয়মিত খাবারে ব্যবহার করা হয়, তা উচ্চ রক্তচাপে এড়িয়ে চলাই ভালো। ১ চামচ টেবিল সল্টে প্রায় ২,৩২৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম রয়েছে। এই নুন মাত্রাতিরিক্ত খেলে রক্তচাপ বাড়তে পারে।
* উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা সৈন্ধব লবণ খেতে পারেন। এই নুনের এক চামচে ১,৮৭২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম পাওয়া যায়। এ ছাড়াও এতে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে। এই নুন সীমিত পরিমাণে খেতে পারেন।
* মিনারেলে ভরপুর হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট। এই গোলাপি নুনেও সোডিয়াম রয়েছে। এক চামচ পিঙ্ক সল্টে ১, ৬৮০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম পাওয়া যায়। প্রেশার বাড়লে এই নুনও খাওয়া যায়।
* কম নুন দিয়ে রান্না করুন। একেবারে নুন কমিয়ে দেবেন না, ধীরে ধীরে রান্নায় নুনের ব্যবহার কমান। প্রথম ক’দিন সমস্যা হলেও ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হবে। নুন কম দিলে খাবারের স্বাদ কমে যায়, সে ক্ষেত্রে মশলার ব্যবহার করতে হবে বুঝে। রান্নায় ভাজা জিরেগুঁড়ো, ভাজা ধনেগুঁড়ো, গরমমশলাগুঁড়ো, গোলমরিচগুঁড়ো ব্যবহার করলে স্বাদ বাড়বে। নুনের অভাব অতটাও বোঝা যাবে না।
* অনেক সময় শরীরে জলের ঘাটতি হয় বলেও নোনতা খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়ে। তাই পর্যাপ্ত জল খেতে হবে। শীতকালেও এই বিষয়টি বেশি করে মাথায় রাখতে হবে।
** নুন বর্জন করলে কী কী ঘটবে?
(১) শরীরে পর্যাপ্ত নুন বা সোডিয়াম না থাকলে বিপাকক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে। কারণ নুন শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া ও হরমোনের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি মেটাবলিজম সঠিকভাবে চলার জন্য অপরিহার্য। নুনের অভাবে শরীরে তরলের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম ও হরমোনের কার্যকারিতা কমে যায়। এতে বিপাকীয় হার ধীর হয়ে আসে। ফলে, বিপাকহারের সঙ্গে জড়িত সমস্ত রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
(২) খাদ্য ও তরল থেকে প্রাপ্ত ইলেক্ট্রোলাইট (সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি) শরীরে জলীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে তা পুষ্টি বহন করতে ও বর্জ্য অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ফলে কোষ তার কাজ সঠিক ভাবে করতে পারে। ইলেক্ট্রোলাইটের অভাব ঘটলে শরীর তার কাজ সঠিক ভাবে করতে পারে না। এতে নানারকম জটিল শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়।
(৩) পেশি ও স্নায়ুতন্ত্রের কাজ সঠিক ভাবে করার জন্য নুন বা সোডিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান। নুন খাওয়া সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করলে পেশি দুর্বলতা, খিঁচুনি ও স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়।


