ভারতে প্রথমবার সুপারনোভা স্টেন্ট রিট্রিভারের বহু-কেন্দ্রিক পরীক্ষায় সফলভাবে অংশ নিল সিকে বিড়লা হাসপাতাল। এই স্টেন্ট রিট্রিভারটি স্ট্রোকের ইন্টারভেনশন ডিভাইসের খরচ ৫০ শতাংশেরও বেশি কমানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

Health News: অকালমৃত্যুর অন্যতম বড় কারণের মধ্যে একটি হলো স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ। এমনকি বয়স্কদের মৃত্যুরও অন্যতম কারণ এই রোগ। কিন্তু আপনি যদি একটু নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে এড়াতে পারেন জীবনঘাতী এই রোগটাকে।

ভারতে প্রথমবার সুপারনোভা স্টেন্ট রিট্রিভারের বহু-কেন্দ্রিক পরীক্ষায় সফলভাবে অংশ নিল সিকে বিড়লা হাসপাতাল। এই বহু-কেন্দ্রিক ক্লিনিকাল পরীক্ষাটি দেশে স্ট্রোকের চিকিৎসা এবং চিকিৎসা উদ্ভাবনের জন্য একটি যুগান্তকারী অর্জন। পূর্ব ভারতের একমাত্র এই হাসপাতালই পরীক্ষাটিতে অংশ নিয়েছিল।

স্নায়ুবিদ্যার অধ্যাপক এবং কনসালটেন্ট নিউরো-ইন্টারভেনশনালিস্ট ডঃ দীপ দাস বলেন, ‘এই যুগান্তকারী পরীক্ষাটি ভারতে প্রথমবারের মতো একটি নতুন স্টেন্ট রিট্রিভার ডিভাইসের কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য পরিচালিত একটি বহু-কেন্দ্রিক গবেষণা। এটি উচ্চ-মানের চিকিৎসা গবেষণা এবং ডিভাইস যাচাই করার ব্যাপারে ভারতের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতার প্রমাণ।’

এই স্টেন্ট রিট্রিভারটি স্ট্রোকের ইন্টারভেনশন ডিভাইসের খরচ ৫০ শতাংশেরও বেশি কমানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি এই ডিভাইসটি ভারতীয় রোগীদের বড় ধমনীর ব্লকেজগুলি ঠিক করতে মূলত চিকিৎসা করবে। পাশাপাশি অস্ত্রোপচারের সুরক্ষা মান বজায় রেখে সাফল্যের হার সর্বোচ্চ করবে। গ্লোবাল প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ডঃ দিলীপ ইয়াভগালের কথায়, আমরা স্ট্রোকের চিকিৎসা সাশ্রয়ী করে তুলছি। তখন ভারতীয় রোগীদের কাছে এটি আরও সহজলভ্য হবে।

পরীক্ষাটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর, স্থানীয়ভাবে দ্রুত উৎপাদন শুরু করার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। এই দ্রুত পরিবর্তন কেবল ডিভাইসের সময়মতো সহজলভ্যতা নিশ্চিত করে না, বরং চিকিৎসার যন্ত্র উৎপাদনে ভারতের সম্ভাবনাকেও শক্তিশালী করে, যা সরকারের "মেক ইন ইন্ডিয়া" উদ্যোগের একটি উদাহরণ।

ডঃ শাশ্বত এম. দেশাই বলে, এই পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করেছি যে ভারত উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন ও যাচাইকরণে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। গ্র্যাভিটি মেডিকেল টেকনোলজি দ্বারা তৈরি এই ডিভাইসটি ভারতে উন্নত স্ট্রোকের যত্নের জরুরি প্রয়োজন মেটাবে।

তবে স্ট্রোকের জীবনঘাতী অ্যাটাক থেকে বাঁচতে কিছু সতর্কতা অবশ্যই মেনে চলুন যা হলো:

* স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন:

আপনার খাদ্য তালিকায় ফল, সবজি, গুঁড়া শস্য এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করুন। লবণ এবং চিনি কম খান এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকুন। স্বাস্থ্যকর খাদ্য হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

* নিয়মিত ব্যায়াম করুন:

প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিটের জন্য শারীরিক কার্যক্রম করুন। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং বা সুইমিং—এ ধরনের যেকোনো ব্যায়াম শরীরের জন্য ভালো।

এটি আপনার হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কও ভালো রাখে।

* ধূমপান ও মদ্যপান ছেড়ে দিন:

ধূমপান স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। ধূমপান হার্ট ও ফুসফুসের মতো মস্তিষ্ককেও ধ্বংস করে দেয় নিয়মিত ধূমপান।

* কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন:

কোলেস্ট্রেরল অনিয়ন্ত্রিত মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমন : উচ্চমাত্রার এইচডিএল কোলেস্ট্রেরল যেমন শরীরের জন্য ভালো, তেমনি এলডিএল কোলেস্ট্রেরল শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই নিয়মিত রক্তে কোলেস্ট্রেরলের মাত্রা পরীক্ষা করুন।

* রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন:

উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। রক্তচাপ নিয়মিত মাপুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন:

ডায়াবেটিস স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। আপনার রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার ও ব্যায়াম করুন।

* ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন:

অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

* স্ট্রেস কমান:

অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা স্ট্রেস স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন।

* নিয়মিত চিকিৎসকের পরমার্শ নিন:

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে স্বাস্থ্য সমস্যা করে চিকিৎসকের পরমার্শ মোতাবেক চললে স্ট্রোক এড়িয়ে চলা সম্ভব।

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।