হরমোনের ভারসাম্য, নিয়ম মেনে ঋতুস্রাব, সন্তান ধারণ— এই সবের সঙ্গেও সঠিক খাবার এবং পুষ্টির গুরুত্বপূর্ণ যোগ রয়েছে। খাদ্যতালিকায় কোন বদল ঋতুস্রাবের সময় কষ্ট, সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে।

পিরিয়ডের সময় খিঁচুনির মতো লক্ষণগুলির সাথে অস্বস্তিকর হতে পারে, বমি ভাব, ক্লান্তি, কিরকিরে মেজাজ , এবং মাথাব্যাথা। যদিও ওষুধ এবং বিশ্রাম এই লক্ষণগুলি দূর করতে সাহায্য করতে পারে, তবে আপনার মাসিকের সময় আপনার অনুভূতির ক্ষেত্রে প্রায়শই উপেক্ষা করা হয় এমন একটি বিষয় হল খাদ্যাভ্যাস। আপনি যা খান তা লক্ষণগুলি উপশম করতে বা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি যতই আরামদায়ক হোক না কেন, অযৌক্তিকভাবে খাবার খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে মাসিকের সময়। তাহলে, মাসিকের সময় আপনি কী খেতে পারেন যা আপনাকে আরামে এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে?

সেরা খাবারগুলি, এবং কিছু খাবার এড়িয়ে চলা এবং আপনার পুরো সময় আরও আরামদায়ক বোধ করার টিপসগুলি খুঁজে পেতে সহায়তা করবে আজকের এই নিবন্ধ।

** পিরিয়ডের সময় সঠিক ডায়েটের গুরুত্ব কি : পিরিয়ডের সময় খাবারের পছন্দ আপনার স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি যা খান তা আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর প্রতিফলিত হয়। আপনি যে খাবার খান তা আপনার হরমোনের ভারসাম্য, প্রদাহের মাত্রা, হজম এবং শক্তির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে, যা পিরিয়ডের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

** পুষ্টিকর খাবার আপনাকে সাহায্য করতে পারে:

খিঁচুনি এবং ফোলাভাব কমাতে মেজাজের পরিবর্তনের ভারসাম্য বজায় রাখুন, শক্তি বৃদ্ধি, রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করুন, কমিয়ে আনুন আপনার সামগ্রিক মেজাজ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি।

এইমসের স্ত্রী রোগ চিকিৎসক বৈশালী শর্মা বলছেন, ‘‘খাবারের তালিকায় সামান্য বদলই এমন সমস্যার কষ্ট লাঘবে অনেকটা সাহায্য করতে পারে। ছোট বদলেই অনেক তফাত হতে পারে।’’ বৈশালী মাঝেমধ্যেই লিখিত আকারে নানা রকম পরামর্শ দেন সমাজমাধ্যমে, ব্লগে। তিনি জানাচ্ছেন এমন কিছু খাবারের কথা যা হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে, ঋতুস্রাব নিয়মিত হতে সাহায্য করবে।

* তিসির বীজ: অনেকেরই সময় মেনে ঋতুস্রাব হয় না। কারও আবার মাঝমধ্যে মাসখানেক ফাঁকও রয়ে যায়। ইদানীং পিসিওস এবং পিসিওডি-র মতো সমস্যা বাড়ছে, যার ফলে অনিয়মিত ঋতুস্রাব হয়।পিসিওসের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ডিম্বাশয়ে ধার ঘেঁষে ফোস্কার মতো সিস্ট জন্ম নেয়। শরীরে পুরুষালি বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। অনিয়মিত ঋতুস্রাবও হয়। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, নিয়ম করে এক চা-চামচ তিসির গুঁড়ো খাবারে মিশিয়ে খেলে এই সমস্যা কমবে। কারণ, তিসি ইস্ট্রোজেনকে সহজ ভাবে কাজ করতে সাহায্য করবে। হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকলে সমস্যাও কমবে।

* সব্জি: অনেক সময় ঋতুস্রাব বেশি হলে রক্ত কমে যায়। আবার রক্ত কমে গেলেও ঋতুস্রাবে সমস্যা হতে পারে। বিভিন্ন রকম সব্জি খেতে বলছেন চিকিৎসক। বিশেষত পালং, থোর, মোচা, মেথির মতো শাকসব্জি খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর হবে। আয়রন শরীরে রক্তের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

* টক দই বা ইয়োগার্ট: টক দই বা ইয়োগার্ট অন্ত্রে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। মহিলাদের যোনিপথে প্রায়ই ইস্ট বা ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ হয়। এই ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার।

* হলুদ: হলুদে থাকা কারকিউমিন ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা, যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রদাহনাশক উপাদান। এন্ডোমেট্রিয়োসিস থাকলে যে ব্যথা-যন্ত্রণা হয় তার উপশমে সাহায্য করে হলুদ-দুধ। হালকা গরম হলুদ মেশানো দুধ খেলে কষ্ট কমে।

* বাদাম: বাদাম এবং বীজ যেমন আখরোট, কাঠবাদাম, কাজু, চিনেবাদাম, কুমড়ো, তিসি, চিয়ার মতো বীজ শরীরে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের জোগান দেয়। হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে। ঋতুচক্র সঠিক ভাবে সম্পাদনে সাহায্য করে এতে থাকা পুষ্টিগুণ।