হাইপোথাইরয়েডিজমের অবহেলায় দেখা দিতে পারে প্রাণঘাতী থাইরয়েড স্টর্ম। থাইরয়েড হরমোনের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি, জ্বর, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, মানসিক সমস্যা এর লক্ষণ।
হালকা ক্লান্তি, ওজন বেড়ে যাওয়া, হঠাৎ চুল পড়া বা ত্বক রুক্ষ হয়ে যাওয়া—এসব সমস্যা বহু মানুষের জীবনেই ঘটে থাকে। বেশির ভাগ সময়েই এগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ এই ছোট ছোট উপসর্গগুলো যদি উপেক্ষিত থাকে, সেগুলো রূপ নিতে পারে ভয়ানক বিপদের। বিশেষত হাইপোথাইরয়েডিজ়মে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে অবহেলা করলে সেই সমস্যা ভয়ানক আকার নিতে পারে, হতে পারে ‘থাইরয়েড স্টর্ম’।
‘থাইরয়েড স্টর্ম’ কী?
‘থাইরয়েড স্টর্ম’ (Thyroid Storm) বা ‘থাইরয়েট ক্রাইসিস’ হল থাইরয়েড হরমোনের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি জনিত এক জটিল অবস্থা। হাইপোথাইরয়েডিজ়ম ও হাইপারথাইরয়েডিজ়ম এই দুধরণের থাইরয়েডের মধ্যে হাইপোথাইরয়েডিজ়মেরই বাড়াবাড়ি হলে তা থাইরয়েড স্টর্মের রূপ নেয়।
শরীরে থাইরয়েড গ্রন্থি (গলার সামনে, শ্বাসনালির উপরে) থেকে নিঃসৃত হরমোন শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন- বিপাকক্রিয়া, মস্তিষ্কের বিকাশ, হরমোন নিয়ন্ত্রণ, গর্ভধারণ, ঋতুচক্র ইত্যাদিতে ভূমিকা রাখে। সাধারণত টি-থ্রি ও টি-ফোর -এই দুই ধরণের হরমোন নিঃসৃত হয়। কিন্তু যখন এই হরমোনের নিঃসরণ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় এবং তা নিয়ন্ত্রণে না আসে, তখন তা থাইরয়েড স্টর্মের উপসর্গ দেখা দেয়। এটি এক ধরনের হরমোনাল বিস্ফোরণ, যা প্রাণঘাতী পর্যন্ত হতে পারে।
কোন ধরনের লক্ষণ ফুটে ওঠে?
* ধুম জ্বর আসবে। শরীরের তাপমাত্রা ১০২ ডিগ্রির উপরে উঠে যাবে।
* হৃৎস্পন্দনের হার মারাত্মক ভাবে বেড়ে যাবে। রোগীর বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট শুরু হবে।
* পেটের গোলমাল দেখা দেবে। অম্বল, বুকজ্বালা, বমি ভাব, পেট ব্যথা, এমনকি ডায়েরিয়ার উপসর্গও দেখা দেবে।
* মানসিক নানা সমস্যাও দেখা দিতে থাকবে। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বেড়ে যাবে। ভুলে যাওয়ার সমস্যা বাড়বে। অবসাদ দেখা দেবে।
* ওজন বৃদ্ধি, বেশি ঠান্ডা লাগা, পেশি এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, চুল পড়ে যাওয়া, পা ও মুখ ফুলে যাওয়া, গলার স্বর পাল্টে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেবে।
* কিছু ক্ষেত্রে হার্ট ফেলিয়োর, জন্ডিসের মতো রোগের উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা কীভাবে করা যায়?
থাইরয়েড স্টর্ম দেখা দিয়েছে এই ধরণের রোগীকে প্রতি দিন থাইরয়েড হরমোনের ওষুধ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। টিএসএইচ ও টি-ফোর -এর মাত্রা রক্তে কতটা আছে সেটির উপর ভিত্তি করে থাইরয়েড হরমোনের এর ডোজ নির্ধারণ করা হয়। এই ওষুধ ট্যাবলেট আকারে বাজারে বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। তা ছাড়া রোগীর যেহেতু খুব শ্বাসকষ্ট হয়, তাই অক্সিজেন থেরাপি, আইভি ফ্লুইড থেরাপিও করার পরামর্শ দেওয়া হয়। চিকিৎসা শুরু করার ছ’সপ্তাহ থেকে ছ’মাস অন্তর পুনরায় টি-ফোর এবং টিএসএইচের মাত্রা দেখা হয় এবং এদের পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য থাইরয়েড হরমোনের ডোজ বাড়ানো বা কমানো হয়।


