এই বর্ষায় ঘন ঘন জ্বর সর্দি কাশির সমস্যা ও উপসর্গ কোভিডের ইঙ্গিত দিলেও, চিকিৎসকেরা আবহাওয়ার কারণে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার উপদ্রবকেই দায়ী করছে।

বর্ষাকালে সর্দি কাশি জ্বর নতুন কিছু নয়, তবে এ বছরের বর্ষা মানুষকে একটু বেশি কাবু করে ফেলেছে। ঘরে ঘরে জ্বর, গলা ব্যথা, গা হাত পা ব্যথা, সর্দি কাশি, বুকে কফ জমে যাওয়া, এমনকি শ্বাসকষ্টের সমস্যা ও দেখা যাচ্ছে। বাড়ির একজনের হলে ছড়াচ্চ্ছে অন্যজনের মধ্যেও। ডাক্তারখানা গুলোতে ভিড় বাড়ছে খুব।

এই সমস্যা ও উপসর্গ কোভিডের ইঙ্গিত দিলেও, চিকিৎসকেরা আবহাওয়ার কারণে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার উপদ্রবকেই দায়ী করছে। সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানান, বর্ষায় রাইনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মেটানিউমো ভাইরাস, অ্যাডিনোভাইরাস-সহ নানা ধরনের ভাইরাসের প্রকোপ, সাথে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়াও প্রকোপও বেড়েছে। আবার সারা মাস ধরে এই অবিশ্রান্ত বৃষ্টির ফলে জলবাহিত রোগও মাথা চারা দিচ্ছে, ফলে ডায়রিয়া ও পেটের অসুখ নিয়েও ডাক্তারখানায় যাচ্ছেন লোকেরা। এই বর্ষার জমা জলে মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গি প্রভাব ফেলছে সকলের উপরে। এই ম্যালেরিয়া যদি ম্যালিগন্যান্ট হয়ে যায় তা থেকে মৃত্যুও হতে পারে।

কিছু রোগের লক্ষণ

* দ্রুত শ্বাস নেওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় বুক ধড়ফড় করা- এগুলি নিউমোনিয়ার উপসর্গ। ফেলে না রেখে চিকিৎসকের থেকে পরীক্ষা করিয়ে নিন। * অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হলে গলা ও ঘাড়ের চারদিকের গ্ল্যান্ড ফুলে যেতে পারে, সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হবে। * রাইনোভাইরাস নাক দিয়ে ঢুকে, গলা ব্যথা, ঢোঁক গিলতে না পারা, শুকনো কাশি হয়ে ভোগাতে পারে।

মেডিসিনের চিকিৎসক রণবীর ভৌমিক সতর্ক করে জানাচ্ছেন, তিন দিনের জ্বর ও গায়ে ব্যথা নিয়ে অনেকে আসছেন ডাক্তারখানায়। তাঁদের পরীক্ষা করে অনেক সময়েই ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গি ধরা পড়ছে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাচ্ছে অনেকের, প্লেটলেট বা অনুচক্রিকার সংখ্যাও কমে আসছে বলে ধরা পড়ছে।

কোন কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে রাখা জরুরি?

১. TC-DC হিমোগ্লোবিন টেস্ট করাতে হবে।

২. ম্যালারিয়া অ্যান্টিজেন ডিটেকশন টেস্ট করিয়ে নিলে ভাল।

৩. এনএস১ অ্যান্টিজেন টেস্ট করালে ডেঙ্গি ভাইরাস শরীরে বাসা বেঁধেছে কি না তা বোঝা যাবে। তাছাড়া আইজিজি অ্যান্টিবডি পরীক্ষাও করিয়ে রাখা ভাল।

৪. CBC বা ‘কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট’ টেস্ট অবশ্যই করাতে হবে।

৫. ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ দেখা দিলে পিসিআর বা র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই পরীক্ষা করানো ভাল।

মনে রাখার বিষয়

কোনো ভাইরাসের কারণে তাপমাত্রা ১০০ বা ১০১ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করলে অবশ্যই কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে জল ও জলীয় খাবার খেতে হবে, প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রামেরও। বাড়িতে অন্য কারোর ভাইরাল ফিভার হলে বাড়ির বাচ্চা এবং বয়স্কদের তাদের থেকে আলাদা রাখুন। বাচ্চাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং বাকি টিকাগুলি সময়মতো দেওয়াতে হবে। বর্ষায় জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভোগার ধাত থাকলে আগে থেকেই প্রতিষেধক নিয়ে নিতে পারেন।