সিজারিয়ান ডেলিভারি এখন আর শুধুমাত্র জরুরি অপশন নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে পরিকল্পিত, নিরাপদ প্রসবের এক আধুনিক উপায়।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে মায়েদের সামনে এসেছে বিকল্প পথ—সিজারিয়ান বা C-section ডেলিভারি। অতীতে যেখানে প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক প্রসবই ছিল একমাত্র ভরসা, আজ তা পালটে গেছে।
সিজারিয়ান ডেলিভারিকে আজ আর শুধুমাত্র ‘জরুরি অস্ত্রোপচার’ হিসেবে দেখা হয় না—বরং অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়ে উঠেছে নিরাপদ, পরিকল্পিত ও সাশ্রয়ী ঝুঁকির পথ। শারীরিক জটিলতা হোক বা সামাজিক বাস্তবতা, সিজার ডেলিভারি ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
১।পরিকল্পিত প্রসবের সুবিধা
সিজারের নির্ধারিত তারিখ আগেই জানা যায়, তাই মা-বাবা ও পরিবার মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারেন।
২। জটিল গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে নিরাপদ
আজকাল অনেকেই বেশি বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। ফলে বয়সের কারণে বা প্রসূতির শারীরিক সমস্যা থাকার জন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, ব্রিচ বেবি ইত্যাদি জটিলতা আসতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে সিজারিয়ান উপায় মা ও শিশুর প্রাণ বাঁচায়। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় শিশুর শারীরিক জটিলতা তৈরি হলে তড়িঘড়ি তাকে প্রাণে বাঁচাতে সিজারিয়ান ডেলিভারিই সেরা উপায়।
৩। বয়সজনিত বা শারীরিক কারণে উপযোগী
অনেক প্রসূতি মহিলার পেলভিক গঠন সরু হয় বা শিশুর ওজন অনেকটা বেশি হতে পারে, তাদের ক্ষেত্রে সিজারই উত্তম।
৪। জন্মকালীন আঘাত কম
শিশুকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করার সময় তার মাথা বা কাঁধে টান পড়া, ব্র্যাকিয়াল প্যালক্সাস ইনজুরি হওয়া ও জন্মকালীন আঘাতের ঝুঁকি কম থাকে সিজারের ক্ষেত্রে।
৫। মায়ের পেলভিক ফ্লোরের সুরক্ষা:
স্বাভাবিক প্রসবে ভবিষ্যতে প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা বা জরায়ু নিচের ডিজে নেমে আসার সমস্যা হতে পারে। এ ধরনের ভবিষ্যৎ সমস্যাগুলি সিজারে এড়ানো যায়।
৬। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কার্যকর
HIV বা হারপিস আক্রান্ত মায়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সিজারই নবজাতককে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারে।
৭। জরুরি অবস্থা মোকাবিলা
হঠাৎ শিশুর হার্ট রেট কমে গেলে বা প্রসব আটকে গেলে দ্রুত সিজারই প্রাণ বাঁচানোর উপায় হয়।
স্বাভাবিক প্রসবের অসুবিধাই বা কোথায়?
* স্বাভাবিক প্রসবের সময় প্রসূতিকে প্রসববেদনা ও সন্তান জন্ম দেওয়ার যন্ত্রণা অনেক বেশি সহ্য করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১২-১৪ ঘণ্টা বা তারও বেশি বেদনা সহ্য করতে হতে পারে। কিন্তু সিজারিয়ান প্রসবে প্রসূতিকে অজ্ঞান করে বা নিম্নাংশ অসাড় করে অপারেশন করা হয়, ফলে সন্তান জন্ম দেওয়ার কষ্ট তুলনায় অনেক কম।
* স্বাভাবিক উপায়ে প্রসবের সময় শিশুর জন্মকালীন আঘাত লাগার শঙ্কা অনেক বেশি থাকে। এতে শিশুর শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। ফরসেপ বা বাহ্যিক যন্ত্র ব্যবহারে শিশুর চোট লাগার আশঙ্কা থাকে।
* প্রাকৃতিক উপায়ে প্রসব হলে প্রসূতির প্রসবকালে ফিশার বা টিয়ার হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। এতে হবু মায়ের যোনিপথে বা পেরিনিয়ামে ফাটল দেখা দিতে পারে যা সেলাই করে ঠিক করতে হয়। ফলে কষ্ট-ব্যাথ্যা কম কিছু নয়।
* স্বাভাবিক পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম দেওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। প্রসবের সময় আভ্যন্তরীণ কোনও কারণে বা প্রসূতি ও নবজাতকের শরীরের অবস্থার প্রভাবে হঠাৎ প্রসব বন্ধ হয়ে যায়। শিশুর হার্ট রেট কমে যেতে থাকে। তখন জরুরিভিত্তিতে অপারেশন করা ছাড়া গতি নেই।
* নরমাল ডেলিভারিতে সন্তানের জন্ম দিতে গেলে অনেক সময় জরায়ু নীচে নেমে আসে। ফলে পরবর্তীকালে প্রসূতির যৌনজীবনে সমস্যা হতে পারে।
