সর্দি হলে হতে পারে মৃত্যুও? সাধারণ সর্দি কাশিতেই লুকিয়ে থাকতে পারে এই ভাইরাস! কীভাবে বুঝবেন?
মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রাণ হারাল উইলিয়াম হ্যান্ড—দক্ষিণ ক্যারোলিনার এক কিশোর। চিকিৎসকেরা বলেন রোগটির নাম মেনিনোকোকেসেমিয়া। এই মারাত্মক সংক্রমণ খুব দ্রুত রক্তপ্রবাহে ছড়িয়ে পড়ে, এবং যথাসময়ে চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে।
হিউজেস একাডেমি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে সম্প্রতি অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ হয়েছে উইলিয়াম হ্যান্ড। ৮ জুন ভোরে খুব অসুস্থ বোধ করতে শুরু করে সে। ভোর ৫টার আগেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। বাবা উইল হ্যান্ড জানান, পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। প্রথমদিকে এর লক্ষণ সর্দি-কাশির মতোই সাধারণ ছিল, অল্প সময়ের মধ্যেই নীরবে তা প্রাণঘাতী রূপ নেয়।
চিকিৎসকদের কথায়, এই সংক্রমণ ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শে ছড়ায় এবং শিশু, কিশোর ও কলেজ ছাত্রদের মধ্যে এর ঝুঁকি বেশি। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কী এই মেনিনোকোকেসেমিয়া?
মেনিনোকোকেসেমিয়া বা মেনিনোকোকাল সেপ্টিসেমিয়া হল রক্তে একধরনের মারাত্মক সংক্রমণ, যা Neisseria meningitidis নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়। এই একই ব্যাকটেরিয়া মেনিনজাইটিস রোগের জন্য দায়ী।
ডাঃ আনা-ক্যাথরিন বার্চ ফক্স ক্যারোলিনাকে বলেন ‘সংক্রমণ এত দ্রুত ঘটে, এবং একবার এটি শুরু হয়ে গেলে, কখনও কখনও আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে।’
কীভাবে ছড়ায়?
সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বহনকারী কারো সাথে ঘনিষ্ঠ বা দীর্ঘক্ষণ সংস্পর্শে থাকলে ছড়ায় এই রোগ। কলেজ ছাত্রাবাস, সামরিক ব্যারাক, একই রুম বা বাড়িতে কাছাকাছি থাকা লোকেদের মধ্যে কাশি, হাঁচি, চুম্বন, জলের বোতল, লিপ বাম, বা বাসনপত্রের মতো জিনিস ভাগ করে ব্যবহার করলে এই রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি।
কোন ব্যাকটেরিয়া এর নেপথ্যে?
মেনিনোকোকাল সেপ্টিসেমিয়া একটি বিরল এবং অত্যন্ত গুরুতর রক্তের সংক্রমণ যা নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস নামক এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট, যা সরাসরি রক্তে আক্রমণ করে। এই ব্যাকটেরিয়া বাহকের নাক এবং গলার পিছনে চুপচাপ বসে থাকে, অসুস্থ করে না। একবার রক্তে প্রবেশ করলে দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায় এবং বিষাক্ত পদার্থ নির্গত করতে শুরু করে যা রক্ত নালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
প্রাথমিক লক্ষণগুলি কী কী?
* জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীর ব্যথা, বমি বমি ভাব * ঠান্ডা হাত-পা বা হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যাওয়া * শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে চরম ক্লান্তি ও খিটখিটে মেজাজ * ফুসকুড়ি যা চাপ দিলেও কমে না, আসলে রক্তনালীর ক্ষতির কারণে ত্বকের নিচে রক্তপাতের ফলে এই ফুসকুড়ি দেখা দেয় * ছোট লাল বা বেগুনি দাগ দিয়ে শুরু হতে পারে এবং তারপর দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
দ্রুত চিকিৎসা কেন জরুরি?
লক্ষণ ধরা পড়লে সেপ্টিক শক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, রক্ত সঞ্চালন বাধা পাওয়ায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই প্রাথমিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে। দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জরুরি
সারাংশ রক্তে সংক্রমণ 'মেনিনোকোকেসেমিয়া' - নাম শোনেন নি অনেকেই। বিরল রোগ হলেও সর্দিকাশির মতো সাধারণ লক্ষণ দিয়ে শুরু। দ্রুত চিকিৎসার দিকে জোর না দিলে ঘটে যেতে পারে মার্কিন মুলুকের উইলের মতো ঘটনা।

