দীর্ঘক্ষণ মোবাইল দেখার অভ্যাস? আজ থেকেই মেনে চলুন তিন কৌশল, ভাল থাকবে চোখ
মানুষ নাকি অভ্যাসের দাস তবে সারাদিন ফোন দেখা শরীর বা মন কোনটার জন্যই ভালো অভ্যাস নয়। বিশেষ করে চোখের জন্য তো নয়ই। আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন ফোন বেশি দেখছেন, তবুও ফোনটি দূরে রাখতে পারছেন না। তবে ইচ্ছা আর চেষ্টার জোরে যে কোন অভ্যাস বদলে ফেলা যায়। গড়ে তোলা যায় ভালো কোনো অভ্যাস।
অনিদ্রা, চোখের শুষ্কতা, ঝাপসা দেখা, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা তো আছেই সাথে আপনার মানসিক প্রশান্তিতেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম। নিচে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের ক্ষতিকর প্রভাবগুলি বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
১। ডিজিটাল আই স্ট্রেন
অতিরিক্ত সময় ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে চোখের পেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এতে চোখে অস্বস্তি, ব্যথা, চাপ অনুভব হয়, যাকে ডিজিটাল আই স্ট্রেন বলা হয়।
২। শুষ্ক চোখ
স্ক্রিনে মনোযোগ দিলে আমরা অন্যান্য সময়ের তুলনায়ে অনেক কম পলক ফেলি। ফলে চোখের আর্দ্রতা শুকিয়ে যায়। তখন চোখে চুলকানি ও জ্বালা শুরু হয়, বা জল পরে চোখ থেকে।
৩। ঝাপসা দৃষ্টিশক্তি
দীর্ঘক্ষণ কাছ থেকে স্ক্রিনের দিকে তাখিয়ে থাকলে তাকিয়ে থাকলে চোখ ফোকাস করতে পারে না। ফলে দূরের দৃশ্য ঝাপসা দেখাতে পারে বা চোখ সহজে ফোকাস করতে পারে না। এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে মায়োপিয়া'র মত রোগও হতে পারে।
৪। মাথাব্যথা ও চোখে জ্বালা
অনেকক্ষণ স্ক্রিন দেখার ফলে চোখে চাপ পড়লে তা মাথাব্যথা ও চোখের ভেতরে পেছনে অংশে ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘক্ষণ ছোট স্ক্রিনে লেখাপড়া বা কাজ করেন, তাদের এই সমস্যা বেশি হয়।
৫। ঘুম কম হওয়া
ফোনের স্ক্রিন থেকে বের হওয়া ব্লু লাইট মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটায়। এটি sleeping cycle নষ্ট করে। আর ঘুম নষ্ট হলে শরীরবৃত্তিয় কাজেও ব্যাঘাত ঘটে।
এতকিছু বিপদ জানার পরে আপনিও স্ক্রিন টাইম কমানোর চেষ্টা করবেন। জানুন কীভাবে তা করতে হবে?
* বাইরে যান
অফিস থেকে বাড়িতে ফিরেই মোবাইল দেখতে শুরু করেন। যে সময় মোবাইল দেখতে ইচ্ছে করবে সেই সময় মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে বাইরে যান কিছুটা সময় কাটাতে। পার্কে ঘুরতে, নদী বা ঝিলের ধারে ঘুরে বেড়াতে, রাস্তায় ও হেঁটে আসতে পারেন কিছুক্ষণ। একান্তই সম্ভব না হলে বাড়ির ছাদে, বাগানে হাঁটুন। খোলা হাওয়ায় নিশ্বাস নিন। শরীর ও সতেজ অনুভব করবে। স্ক্রিন টাইমও কমবে।
* কথা বলুন
প্রয়োজনীয় কাজের সময়টুকু ছাড়া, যে সময় এমনি রীলস বা মুভি দেখে স্ক্রিন টাইম কাটান, সেই সময়ে কারও সঙ্গে কথা বলুন। বাড়ির লোক জন, বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কারোর সঙ্গে কথা বলুন। সামনাসামনিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলা সম্ভব না হলে ফোন করে কথা বলুন আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে। তবে ভিডিও কল নয় অডিও কলে কথা বলুন। এতে আপনার অবসর সময়ও কাটবে আর ফোনের দিকে চোখ রাখার অভ্যাসও কমবে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।
* মোবাইল ফ্রি জ়োন
বাড়িতে মোবাইল ফ্রি জ়োন তৈরি করুন। নির্দিষ্ট কোনো একটা সময় মোবাইল ফ্রি করুন। যেমন বসার ঘরে অথবা শোয়ার ঘরে বা খাবার সময় অথবা যখন বাড়িতে সকলে উপস্থিত থাকলে, সেই সময়টা স্ক্রিন দূরে রেখে তাদের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। একা থাকলে মনোরঞ্জনের দরকার হলে বই পড়ুন, ছবিও আঁকতে পারেন বা নিজের কোনো শখ থাকলে, সেগুলিও করতে পারেন। মোট কথা ফোন দূরে রাখতে হবে।
সারাংশ মোবাইল আমাদের জীবন সহজ করে দিলেও, তার অতিরিক্ত ব্যবহারে দেহে ও মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আজ থেকেই এই তিনটি সহজ উপায় মেনে চলুন—চোখ ভাল রাখুন, সুস্থ থাকুন।


