সংক্ষিপ্ত

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ স্বাধীনভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ ছিল ১৯৫২-১৯৬২। তারপরই তিনি রাষ্ট্রপতির আসনে বসেন।

 

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি। তারপরের বছরই তিনি রাষ্ট্রপতি হন। প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীন ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছিলেন। সর্বদা ছিলেন নেহরুর পাশে। তামিলনাড়ুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবার ৫ সেপ্টেম্বর ১৮৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর জন্মদিনের কথা স্মরণ করেই গোটা দেশজুড়ে পালন করা হয় শিক্ষক দিবস বা Teachers' Day।

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ স্বাধীনভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ ছিল ১৯৫২-১৯৬২। তারপরই তিনি রাষ্ট্রপতির আসনে বসেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব সামলেছেন ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত। একাধারে তিনি ছিলেন রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ও অধ্যাপক। অত্যান্ত মেধাবী ছিলেন। জীবনে কোনও পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি।

প্রশ্ন তাঁর জন্মদিনেই কেন পালন করা হয় শিক্ষক দিবস। সালটা ১৯৬২। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। সেইসময় কয়েকজন ছাত্র তাঁর জন্মদিন পালন করার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু তিনি তাতে অনুমোদন দেননি। পাল্টা দিনটিকে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করার আবেদন জানিয়েছিলেন। তারপর থেকেই তাঁর জন্মদিন পাঁচ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না তাঁর পরিবারের। কিন্তু পড়াশুনায় প্রবল আগ্রহ। বই ছিল সবথেকে বেশি পছন্দের। ছোটবেলায় একটি দর্শনের বই পেয়েছিলেন। সেটি পড়েই দর্শন নিয়ে পড়াশুনা করবেন স্থির করেন। ১৯০৫ সালে মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর বিষয় ছিলে 'বেদান্ত দর্শনের বিমূর্ত পূর্বকল্পনা।' পরবর্তীকালে এই বিষয়েক ওপরই প্রবন্ধ রচনা করে অধ্যাপকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মাত্র ২০ বছর বয়সেই তাঁর প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল। শুধু ভারত নয় তাঁর চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে গিয়েছিল গোটা বিশ্বে। দেশ বিদেশ থেকে একাধিক সম্নান পান তিনি। ১৯৫৮ সালে ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত করা হয়।

অধ্যাপক হিসেবেও ছাত্রমহলে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন ১৯১৮ সালে। একটি সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরও জনপ্রিত অধ্যাপক ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি একাধিক পত্রপত্রিকাতে তিনি লিখতেন। দেশের ও বিদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপকের সম্মান পেয়েছেন তিনি।

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জীবনের চলার পথ খুব মসৃণ ছিল না। সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যদুনাথ সিংহের দায়ের করা মামলা। সালটা ১৯২৯, জানুয়ারি মাসে অধ্যাপক যদুনাথ সিংহ সারস্বত সমাজকে ঝড় তুলে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের বিরুদ্ধে গবেষণা পত্র চুরির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট মামলার রায় ঘোষণা না করেই মামলায় স্থগিতাদেশ দেয়। অনেকে বলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে আইনি জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেছিলেন রাধাকৃষ্ণণ।