সংক্ষিপ্ত

রোজকার রান্নার ব্যস্তার মাঝে বেশ কয়েকটা ছোট ছোট ভুল করে ফেলি আমরা। এই ধরণের কাজে রান্না করা খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। 

রোজকার রান্নার (Cooking) ব্যস্তার মাঝে বেশ কয়েকটা ছোট ছোট ভুল (Mistakes) করে ফেলি আমরা। আপাত দৃষ্টিতে দেখতে গেলে এই ঘটনা বা কাজগুলো সেরকম কোনও ভুল নয়, তবে এগুলো ভবিষ্যতে শরীরের ক্ষতি করতে পারে। কারণ এই ধরণের কাজে রান্না করা খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। 

রান্নার শুরুতেই সব্জি কাটা থেকে যার সূত্রপাত। এর পর ধাপে ধাপে এত ভুল হয় যে, শেষমেশ খাবার যখন পাতে পৌঁছয়, তাতে পুষ্টি যতটা থাকার কথা, তা তো থাকেই না, উল্টে হাজির হয় কিছু অসুস্থতা। 

ব্যবহার করা তেল দিয়ে ফের রান্না

পোড়া তেল আরেক বার ব্যবহার করা যাবে কিনা তা নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েন বাড়ির মা কাকিমারা। এক্ষেত্রে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হয়। কোন তেলে কত তাপমাত্রায় ভাজা হয়েছে, তেল কতক্ষণ গরম হয়েছে ও ঠান্ডা হওয়ার পর কী ভাবে তাকে রাখা হয়েছে ইত্যাদি যদি একটু হিসেব কষে দেখা যাবে। সানফ্লাওয়ার, ক্যানোলা, সর্ষে, তিল ও নারকেল তেল উচ্চ তাপেও মোটামুটি ঠিক থাকে৷ 

কাজেই মাঝারি তাপে অল্প সময় ধরে ডিপ ফ্রাই করলে পরে আরেক বার সেই তেলে রান্না করতে পারেন৷ তবে তাকে ছেঁকে রাখতে হবে৷ তেল ঘোলা হয়ে গেলে ফেলে দেওয়াই ভাল। তবে জেনে রাখুন পোড়া তেলে ভাজলে অ্যালডিহাইড নামে জৈব রাসায়নিকের প্রভাবে ডায়াবিটিস, হাই প্রেশার, লিভারের রোগ, অ্যালঝাইমার, পার্কিনসন্সের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। 

ভাজার সমস্যা ও সমাধান

ছাঁকা তেলে ভাজলে ভিটামিন ও প্রোটিনের পরিমাণ কমে৷ বাড়ে ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাট, ওজন, অপুষ্টি এবং হাই প্রেশার–কোলেস্টেরল, ডায়াবিটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোকের আশঙ্কা৷ একমাত্র নারকেল তেলের স্মোক পয়েন্ট বেশি বলে বহু ক্ষণ উচ্চ তাপে গরম করলেও তা মোটামুটি অবিকৃত থাকে ও বিপদ কম হয়৷

পুষ্টিবিদদের মতে, সপ্তাহে এক–আধবার ভাজা–বড়া অল্প করে খেতেই পারেন। তবে স্বাস্থ্যের কথা ভাবলে ছাঁকা তেলে না ভেজে কড়াইতে অল্প তেল দিয়ে ঢাকা দিয়ে ভাজুন, যাকে বলে শ্যালো ফ্রাই৷ মুচমুচে ভাজা খেতে চাইলে কিনে নিন এয়ার ফ্রায়ার। এতে বিনা তেলে আলু, বড়ি ইত্যাদি সুন্দর ভাজা যায়। 

গরম তেল থেকে ধোঁয়া বের করে রান্না

রান্না করার একটা প্রচলিত ধারণা হল গরম কড়ায় তেল দেওয়ার পর যতক্ষণ না ধোঁয়া ওঠে ফোড়ন বা মাছ–সব্জি দিতে নেই৷ কারণ, তা হলে রান্নায় কাঁচা তেলের গন্ধ থেকে যায়। কিন্তু তা ভুল। প্রতিটি তেলের নির্দিষ্ট স্মোক পয়েন্ট থাকে, অর্থাৎ যে তাপমাত্রায় তেল ভেঙে গিয়ে ধোঁয়া ওঠে৷ এই ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যায় উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড। ভাঙে ভিটামিন। তৈরি হতে শুরু করে ফ্রি–র‍্যাডিক্যালস নামের ক্ষতিকর উপাদান। হাই কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, স্ট্রোক, অ্যালঝাইমার, ক্যানসার ইত্যাদি রোগের মূলে যার হাত আছে৷ 

সব্জি জলে ভেজানো 

খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট করে কেটে রান্নার আগে পর্যন্ত সব্জি  ভিজিয়ে রাখি জলে৷ যে সব সব্জির খোসা ছাড়াতে হয় না, তাদেরও কেটে ভিজিয়ে রাখার চল আছে৷ উদ্দেশ্য, ময়লা ও কীটনাশকের বিষ মুক্ত করা৷ বিষাক্ত রংও এ ভাবে কিছুটা দূর হয়৷ সঙ্গে দূর হয় ভিটামিন বি ও সি–এর প্রায় ৪০ শতাংশ।

সব্জি বড় করে কাটলে, কাটার পর না ধুয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম মেনে রান্না করে নিলে ভিটামিনের অনেকটাই রক্ষা পায়৷ ফাইবার ও পুষ্টির কথা ভাবলে, সব্জির খোসা না ছাড়ানোই ভাল৷ তবে পাতলা করে খোসা ছাড়াতে পারেন, যাতে দু–দিকই রক্ষা করা যায়৷