সংক্ষিপ্ত
ভারতীয় ক্রিকেটারদের এবার সম্ভবত কড়া হাতে সামলাতে চাইছে বিসিসিআই।
সেইসঙ্গে, যুক্ত হচ্ছে নিয়ম না মানার শাস্তিও। কোনও ক্রিকেটার যদি বোর্ডের এই ১০টি নিয়ম অমান্য করেন, তাহলে তাঁর আইপিএল খেলার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, হতে পারে জরিমানাও। এমনটাই সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতেই জানা গেছিল, ক্রিকেটারদের উপর ১০টি নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তবে শুক্রবার জানা গেল, নিয়ম না মানার শাস্তি। সূত্রের খবর, বোর্ডের নিয়ম না মানলে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসাবে দেখা হবে এবং যার শাস্তি আইপিএল থেকে সরাসরি নির্বাসন।
এমনকি, কেটে নেওয়া হতে পারে বার্ষিক চুক্তির টাকা এবং ম্যাচ ফি। তবে কোচ এবং প্রধান নির্বাচককে আগাম জানিয়ে রাখলে শাস্তি এড়ানো সম্ভব বলেও জানা গেছে। বোর্ডের নিয়মের যে খসড়া তৈরি করা করেছে, তাতে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা যেমন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তেমনই পরিবারের সঙ্গে যাতায়াত এবং অতিরিক্ত মালপত্র নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বোর্ড ঠিক কী চাইছে? জাতীয় দলে সুযোগ পেতে গেলে এবং কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় আসতে গেলে সকল ক্রিকেটারকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতেই হবে বলে জানায় বিসিসিআই। তার ফলে, ক্রিকেটারেরা ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিবেশের মধ্যে থাকলে ম্যাচ ফিটনেস যেমন বজায় রাখা সম্ভব, ঠিক তেমনই ঘরোয়া ক্রিকেটের মানও উন্নত হতে পারে।
তরুণ ক্রিকেটারদের উৎসাহ দেওয়ার জন্যও সিনিয়রদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা প্রয়োজন বলে মনে করে বোর্ড। কোনও ক্রিকেটার ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে না পারলে, তাই আগে থেকে কারণ জানাতে হবে এবং নিতে হবে নির্বাচক প্রধানের অনুমতি। বোর্ড ঠিক করেছে সমস্ত ক্রিকেটারকে দলের সঙ্গে থাকতে হবে। ম্যাচ এবং অনুশীলন সবক্ষেত্রেই তাঁকে দলের সঙ্গে যেতে হবে।
শুধু তাই নয়, পরিবারের সঙ্গে আলাদাভাবে যাতায়াত করা যাবে না। পরিবারের সঙ্গে যাতায়াত করতে হলে কোচ অথবা নির্বাচক কমিটির প্রধানেরও অনুমতি নিতে হবে। এখন থেকে যত খুশি জিনিসপত্র নিয়ে আর সফর করতে পারবেন না ক্রিকেটাররা।
বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, ৩০ দিনের বেশি সফরে গেলে ক্রিকেটাররা পাঁচটি ব্যাগ নিতে পারবেন। আবার তার মধ্যে থাকবে দুটি খেলার সরঞ্জামের কিট ব্যাগ। এই পাঁচটি ব্যাগের মোট ওজন ১৫০ কেজির বেশি হলে চলবে না বিওলে জানিয়ে দিয়েছে বোর্ড। সাপোর্ট স্টাফরা নিতে পারবেন ৮০ কেজি জিনিস। তাদের জন্য বরাদ্দ করা হবে তিনটি ব্যাগ। ৩০ দিনের কম হলে ক্রিকেটারদের জন্য ব্যাগের সংখ্যা কমে হবে চারটি এবং কমবে ওজনও। সেই সময় ১২০ কেজির বেশি জিনিস নিতে পারবেন না তারা। সাপোর্ট স্টাফরা মাত্র দু’টি ব্যাগ নিতে পারবেন। ওজন ৬০ কেজির বেশি হলে হবে না। এখন থেকে ক্রিকেটারেরা আর নিজেদের ম্যানেজার, সহকারী, নিরাপত্তারক্ষী এবং রাঁধুনি নিয়ে যেতে পারবেন না।
বোর্ডের অনুমতি নিতে হবে এমন কাউকে নিয়ে যেতে হলে। ক্রিকেটাররা যাতে শুধু খেলার দিকেই মন দেন, সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। কোনও বাড়তি সরঞ্জাম বা ব্যক্তিগত কোনও জিনিস নিতে হলে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে ক্রিকেটারদের। বেঙ্গালুরুর সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে সেই জিনিস পাঠিয়ে অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছে বিসিসিআই। তবে বাড়তি জিনিসের জন্য বাড়তি খরচের বোঝা নেবে না বোর্ড।
সেই খরচ ক্রিকেটারদের নিজেকে করতে হবে। তাছাড়া নির্ধারিত অনুশীলনে আসা বাধ্যতামূলক করছে বোর্ড। দলের সঙ্গে অনুশীলনে যেতে হবে এবং ফিরতেও হবে। দলকে একাত্ম করতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। ক্রিকেট সফরের মাঝে কোনওরকম বিজ্ঞাপনের কাজ করা যাবে না। কোনও শ্যুট বা বিজ্ঞাপনের কোনও কাজ আর সফরের মাঝে করতে পারবেন না ক্রিকেটাররা।
কারণ, খেলা থেকে মনঃসংযোগ যাতে সরে না যায়, সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। ৪৫ দিনের বিদেশ সফরে ক্রিকেটারদের সঙ্গে দু’সপ্তাহের বেশি সময় থাকতে পারবেন না পরিবার-পরিজন। ক্রিকেটারদের সঙ্গী এবং সন্তানদের (১৮ বছরের নীচে) একবারের জন্যই আসতে দেওয়া হবে। তবে এলেও দু সপ্তাহের বেশি থাকতে পারবেন না। এই সময়ের সব খরচ বহন করবে বোর্ড।
তবে যদি কোনও কারণে কেউ বেশি দিন থাকেন, তাহলে সেই খরচ ক্রিকেটারকে দিতে হবে। কোচ, অধিনায়ক এবং ম্যানেজারদের ঠিক করে দেওয়া দিনেই শুধুমাত্র পরিবারের লোকজন আসতে পারবেন।
ব্যতিক্রম হলে আগে থেকে জানাতে হবে। ক্রিকেটারদের পরিবার বাদ দিয়ে অন্য কাউকে তাদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেবে না বোর্ড। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিভিন্ন শ্যুট এবং বিজ্ঞাপনের কাজে ক্রিকেটারদের অবশ্যই থাকতে হবে। বোর্ডের অনুষ্ঠানেও তাঁদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। ক্রিকেটের প্রসারের জন্য এটা জরুরি বলে মনে করেন কর্তারা। ম্যাচ আগে শেষ হয়ে গেলেও ক্রিকেটারদের থাকতে হবে। যত দিন না সফর শেষ হচ্ছে, ততদিন ক্রিকেটারদের থাকতে হবে এবং আগে চলে আসা যাবে না। দল কাউকে বাড়তি সুবিধা দিতে রাজি নয়। ফলে, সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।