সংক্ষিপ্ত
ক্রীড়াঙ্গনে জনতার আবেগের পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে রাজনীতি ও প্রতিবাদ। অতীতে তার হাজার নজির মিলেছে। ব্যতিক্রম হয়নি এবারের বিশ্বকাপেও।
প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে বারবারই খেলার মাঠকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ফুটবল যে নিছক একটা খেলা বা বিনোদনের জায়গা নয় তা বারবারই প্রমাণ হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে জনতার আবেগের পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে রাজনীতি ও প্রতিবাদ। অতীতে তার হাজার নজির মিলেছে। ব্যতিক্রম হয়নি এবারের বিশ্বকাপেও। প্রথম ম্যাচ থেকেই ইরানের অভিনব প্রতিবাদের সাক্ষী থেকেছে কাতার বিশ্বকাপ। ইরানের সরকার বিরোধী আন্দোলনের পক্ষে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে মৌনতাকেই বেছে নিয়েছিল ইরানের ফুটবলাররা। দেশের জাতীয় সংগীতে গলা মেলাননি তাঁরা। মৌনতা দেখা গিয়েছিল ইরান সমর্থকদের মধ্যেও। এবার হিজাব বিরোধী আন্দোলনের প্রতিবাদ জানাতে গ্যালারিতে মাহসা আমিনি লেখা জার্সি পড়ে চুল খুলে খেলা দেখতে দেখা গেল ইরানি যুবতীকে। দেশে ফিরলে এই প্রতিবাদের ফলাফল কী হতে পারে তা জানা সত্ত্বেও পিছপা হননি তাঁরা।
শুধু তাই নয় কাতারের রক্ষণশীল আইনের বিরোধিতার ফুটবল মাঠে রামধনু রঙ ওড়ানোওর সিদ্ধান্ত নেয় ইউরোপের দেশগুলি। সমকামীতা কাতারে অপরাধ স্বরূপ। তাই কাতার সরকারের এই রক্ষণশীল মনোভাবের প্রতিবাদে রামধনু রঙা ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাঁরা। কিন্তু ফিফার হস্তক্ষেপে সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়। ফিফার পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় এসব পরে মাঠে নামলে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হবে খেলোয়াড়দের। তাই অগত্যা ব্যান্ড খুলে ফেলতে হলেও ফিফার সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় মুখে হাত চাপা দিয়ে ছবি তুলতে দেখা যায় থমাস মুলারদের।
ফিফা বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে ইরান। ম্যাচের আগেই ইরানের অধিনায়ক জানিয়েছিলেন জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে কি না তা দলের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করা হবে। জানা যায় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই জাতীয় সংগীত না গাওয়ার পক্ষেই মত দেন। ফলে এই প্রথম বিশ্বকাপের মঞ্চে কোনও দেশের ফুটবলাররা জাতীয় সংগীতে গলা মেলালেন না। নীরবতা দিয়েই আরও জোড়ালো হল হিজাব বিরোধী আন্দোল ইরানের প্রতিবাদের কণ্ঠ। এক অভিনব প্রতিবাদের সাক্ষী থাকল কাতার-সহ গোটা বিশ্ব।
প্রসঙ্গত, ঠিকভাবে হিজাব না পরার 'অপরাধে' ইরানের ২২ বছরের তরুণীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ইরানি পুলিশের বিরুদ্ধে। পরিবারের সঙ্গে তেহরানে বেড়াতে এসেছিলেন ২২ বছরের মাহসা আমিনি। যথাযথ ভাবে হিজাব না পরার 'অপরাধে' নীতি পুলিশের হাতে আক্রান্ত হন আমিনি। কয়েকজন স্থানীয় মহিলা আমিনির পথ আটকে হিজাব পরার জন্য বারবারই চাপ দিতে থাকে। রাজী না হওয়ায় বাড়তে থাকে বাগবিতন্ডা। ধীরে ধীরে তর্কাতর্কি ধস্তাধস্তির রূপ নেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ইরানি পুলিশ। হিসাব নেই দেখে তরুণীকে 'উচিত শিক্ষা' দিতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমিনিকে টানতে টানতে গাড়িতে তোলার পর পুলিশের গাড়িতেই তাঁকে বেধরক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। থানায় নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমিনির পরিবার জানতে পারে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তরুণীকে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কোমায় চলে যান তরুণী। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে ২২ বছরের আমিনি। পরিবারের অভিযোগ থানায় নিয়ে গিইয়ে বেধরক মারধর করা হয় আমিনিকে। হিজাব পরা শেখানোর নামে মেরে ভেঙে দেওয়া হয় মাথার খুলি। যদিও পুলিশের তরফ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে যাবতীয় অভিযোগ। তাঁদের দাবি আগে থেকেই অসুস্থ ছিল তরুণী এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশের এই যুক্তি কোনওভাবেই মানতে রাজী নন আমিনির পরিবার।
আরও পড়ুন -
স্পেনের সঙ্গে অসাধারণ লড়াই করে ১-১ ড্র, বিশ্বকাপে টিকে থাকল জার্মানি
বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে খেলবেন বলে দলের সবার সঙ্গে মাঠে নেমেও কোথায় উধাও মরক্কোর গোলকিপার?
জাতীয় পতাকার বিকৃত ছবি প্রকাশের অভিযোগ, আমেরিকাকে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কারের দাবি ইরানের