সংক্ষিপ্ত

১৯১১ সালে মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয় ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম গর্বের মুহূর্ত। প্রথম ভারতীয় ক্লাব হিসেবে আইএফএ শিল্ড জিতেছিলেন শিবদাস ভাদুড়ি, অভিলাষ ঘোষরা।

কোনও ব্রিটিশ দলকে হারিয়ে ভারতের কোনও দল আইএফএ শিল্ডের মতো বড়মাপের টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, এই ধারণা তখনও পর্যন্ত ভারতের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ছিল না। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে মোহনবাগান আইএফএ শিল্ড ফাইনালে পৌঁছে যাওয়ার পর সবার মনেই আশা তৈরি হয়, এবার ফুটবল মাঠে ব্রিটিশদের হারানো সম্ভব। সেই আশাতেই ১৯১১ সালের ২৯ জুলাই আইএফএ শিল্ড ঘিরে অভূতপূর্ব উন্মাদনা তৈরি হয়। তখনও ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তৈরি হয়নি। মোহনবাগান দলে ছিলেন পূর্ববঙ্গের ৮ জন ফুটবলার। ফলে অবিভক্ত বাংলার সর্বত্র আইএফএ শিল্ড নিয়ে উৎসাহ ছিল। শুধু বাংলাই নয়, অবিভক্ত ভারতের সর্বত্র মোহনবাগানের জয় কামনা করা হচ্ছিল। পূর্ববঙ্গ ছাড়াও বিহার, অসম থেকেও অনেকে আইএফএ শিল্ড ফাইনাল দেখতে কলকাতায় এসেছিলেন। বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে। আইএফএ শিল্ড ফাইনাল দেখতে মাঠে গিয়েছিলেন প্রায় ১ লক্ষ দর্শক। আইএফএ-র পক্ষ থেকে ১ টাকা ও ২ টাকার টিকিট ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু টিকিট নিয়ে চরম হাহাকার দেখা যাচ্ছিল। টিকিটের কালোবাজারি শুরু হয়। ১৫ টাকাতেও টিকিট বিক্রি হয়। ১১২ বছর আগে ১৫ টাকার মূল্য ছিল অনেক। মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় অবশ্য ফুটবলপ্রেমীরা আর টিকিটের দাম নিয়ে মাথা ঘামাননি। সবাই উৎসবে মেতে ওঠেন। যাঁরা সেদিন মাঠে খাবার বিক্রি করতে গিয়েছিলেন, তাঁদেরও বিপুল লাভ হয়।

১১২ বছর আগে খালি পায়ে খেলে বুট পরা ব্রিটিশদের হারিয়ে দিয়েছিলেন শিবদাস ভাদুড়ি, বিজয়দাস ভাদুড়ি, অভিলাষ ঘোষরা। কোচ ছিলেন শৈলেন বসু। প্রথম ম্যাচে সেন্ট জেভিয়ার্স ইনস্টিটিউটকে ৩-০ উড়িয়ে দেয় মোহনবাগান। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে রেঞ্জার্স এফসি-র বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জয় আসে। কোয়ার্টার ফাইনালে রাইফেল ব্রিগেডকে ১-০ হারিয়ে দেয় মোহনবাগান। সেমি-ফাইনালে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে মিডলসেক্স রেজিমেন্টকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দেয় সবুজ-মেরুন। এরপর ফাইনালে লড়াই ফৈজাবাদের ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টের বিরুদ্ধে। 

ফাইনালে মাঠের ভিতরে যত দর্শক ছিলেন, গড়ের মাঠের বিখ্যাত র‍্যাম্পার্টে তার চেয়েও বেশি দর্শক ছিলেন। ভিড়ের মধ্যে যাতে ভালোভাবে খেলা দেখা যায়, তার জন্য কাঠের বাক্স রেখেছিল কিছু লোক। সেই বাক্সের উপর দাঁড়িয়ে খেলা দেখা যাচ্ছিল। যত কাছ থেকে খেলা দেখা যাবে, তার জন্য তত টাকা দিতে হবে। এই ছিল ব্যবস্থা। খেলা দেখার জন্য অনেকে গাছেও উঠে পড়েছিলেন।

ম্যাচ যত এগোতে থাকে, উত্তেজনা ততই বাড়তে থাকে। প্রথমার্ধে কোনও দলই গোল করতে পারেনি। ৭৫ মিনিটে সার্জেন্ট জ্যাকসনের গোলে এগিয়ে যায় ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্ট। তবে ব্রিটিশদের উচ্ছ্বাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। গোল করে সমতা ফেরান মোহনবাগানের অধিনায়ক শিবদাস। এরপর ম্যাচের শেষদিকে গোল করে জয় নিশ্চিত করেন সবুজ-মেরুনের সেন্টার ফরোয়ার্ড অভিলাষ।

আরও পড়ুন-

ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা দিবসে ভারত গৌরব সম্মান পাচ্ছেন রতন টাটা, অন্য ইঙ্গিত দেখছেন সমর্থকরা

এশিয়ান গেমসে পুরুষদের ফুটবলে চিন, বাংলাদেশ, মায়ানমারের সঙ্গে একই গ্রুপে ভারত

অভিনব উদ্বোধন! ডুরান্ড কাপের ট্রফি নিয়ে ৬৫ তলা থেকে ঝাঁপ দুই সেনাকর্তার