সংক্ষিপ্ত
নাসার (NASA) পার্কার সোলার প্রোব (Parker Solar Probe) সূর্যের (The Sun) আবহমণ্ডল বা করোনা (Corona) অংশে প্রবেশ করল। এর আগে সূর্যের এতটা কাছাকাছি আসতে পারেনি কোনও মহাকাশ যান।
'সূর্যকে স্পর্শ করল মানুষ'। হ্যাঁ, তৈরি হল ইতিহাস। এই প্রথমবার সূর্যের (The Sun) আবহমণ্ডল বা করোনা (Corona) অংশে প্রবেশ করল মানুষের পাঠানো কোনও মহাকাশযান। ১৪ ডিসেম্বর মার্কিন মহাকাশ চর্চা কেন্দ্র নাসার (NASA) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল, এতদিন পর্যন্ত সৌরজগতের অনাবিষ্কৃত ওই অঞ্চলে প্রবেশ করেছে তাদের পার্কার সোলার প্রোব (Parker Solar Probe)। মানব সভ্যতার ইতিহাসে, এর আগে সূর্যের এতটা কাছাকাছি আসতে পারেনি কোনও মহাকাশ যান।
লুইজিয়ানার নিউ অরলিন্সে (New Orleans, Louisiana), মার্কিন জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের সভায় এক প্রেস কনফারেন্স ডেকে এই বিরাট সাফল্যের কথা ঘোষণা করেন, নাসার হেলিওফিজিক্স বিভাগের ডিরেক্টর নিকোলা ফক্স (Nicola Fox)। ছোট্ট কথায় তিনি জানিয়ে দেন, 'আমরা অবশেষে পৌঁছেছি।' এই সাফল্য সূর্য সম্পর্কে এখনও উত্তরহীন বেশ কিছু বড় প্রশ্নের জবাবের সন্ধান দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। যেমন এখনও জানা নেই, সূর্য থেকে কীভাবে সৌর বায়ু (সূর্য থেকে ছুটে আসা শক্তিশালী কণার প্রবাহ) (Solar Wind) উৎপন্ন হয়? কেন সূর্যের পৃষ্ঠের তুলনায় এর করোনা অংশের তাপমাত্রায় বেশি? পার্কার সোলার প্রোবের গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলি ফিজিক্স রিভিউ লেটার্স (Physical Review Letters)-এ প্রকাশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন - Geminid Meteor Showers: পরপর ৫ দিন রাতের আকাশে উল্কাবৃষ্টি, কখন-কীভাবে দেখবেন
আরও পড়ুন - NASA Solar Eclipse Images: গ্রহণের সময় পৃথিবী, মহাকাশ থেকে অবিশ্বাস্য ছবি তুলল নাসা
জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল, ইউনিভার্সাল টাইম অনুযায়ী সকাল ৯ টা বেজে ৩৩ মিনিটে, পার্কার সোলার প্রোব, সূর্যের আবহমণ্ডলে প্রবেশ করেছিল। চ্যালেঞ্জ ছিল 'আলফ্ভেন পৃষ্ঠ' (Alfvén surface) নামে পরিচিত, একটি সীমানা অতিক্রম করা। মহাকাশযানটি যে সত্যিই সেই বহু প্রত্যাশিত সীমানাটি অতিক্রম করতে পেরেছে, তা নিশ্চিত করতে বেশ কয়েক মাস সময় লেগেছে বিজ্ঞানীদের। ১৯৪২ সালে নেটার পত্রিকায় এক গবেষণাপত্রে প্রথম এই সীমানাটির কথা বলেছিলেন সুইডিশ (Swedish) পদার্থবিদ হ্যানেস আলফ্ভেন (Hannes Alfvén)। সেই থেকেই এই পৃষ্ঠের সন্ধানে ছিলেন বিজ্ঞানীরা।
২০১৮ সালে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে তৈরি পার্কার সোলার প্রোব সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা শুরু করেছিল। প্রতিটি প্রদক্ষিণে সে একটু একটু করে সৌর পৃষ্ঠের দিকে অগ্রসর হয়েছে। এভাবে গত ২৮ এপ্রিল সকালে মহাকাশযানটি সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪ মিলিয়ন কিলোমিটার বা মাত্র ২০ সৌর ব্যাসার্ধের ভিতরে যখন প্রবেশ করে, সেই সময়ই সেটি আলফ্ভেন সীমানা অতিক্রম করেছিল বলে দাবি করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। এর আগে একাংশের বিজ্ঞানীদের অনুমান ছিল, এই সীমানাটি বেশ 'অস্পষ্ট' হবে। কিন্তু নাসার বিজ্ঞানীরা পার্কার সোলার প্রোবের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছেন, সীমানাটি বেশ তীক্ষ্ণ এবং বেশ কোঁচকানো। কারণ, মহাকাশযানটি প্রায় পাঁচ ঘন্টার জন্য এই সীমানা পেরিয়ে করোনা অংশে প্রবেশ করেছিল। তারপরে আবার বেরিয়ে গিয়েছিল। আরও দুবার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আলফ্ভেন সীমানা অতিক্রম করেছিল পার্কার।
নাসা জানিয়েছে, করোনা অংশের ভিতরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে সৌর বায়ুর গতি এবং প্লাজমা ঘনত্ব অনেক কমে গিয়েছিল। পার্কার প্রোবটি বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত উপাদানের একটি 'ছদ্ম তরঙ্গ'এর মধ্য দিয়ে উড়েছিল। যার ভিতরের পরিস্থিতি বাইরের পরিবেশের থেকে শান্ত ছিল। করোনার অভ্যন্তরে থাকাকালীন, মহাকাশযানটি সৌর বায়ুর চৌম্বক ক্ষেত্রের অস্বাভাবিক ওঠাপড়া বা সুইচব্যাকও (Switchback) অধ্যয়ন করেছে। বিজ্ঞানীরা এই সুইচব্যাক সম্পর্কে আগে জানলেও, পার্কার সোলার প্রোবের পাঠানো তথ্য, এই সুইচব্যাক সৌর পৃষ্ঠের নিচের দিকে ঠিক কোথা থেকে আসে তা খুঁজে দিয়েছে। একই সঙ্গে সূর্য সম্পর্কে আরও অনেক অজানা তথ্য দিয়েছে এই অভিযান।
সূর্যের প্রবল তাপমাত্রা থেকে এই মহাকাশ যানের যন্ত্রগুলিকে রক্ষা করছে একটি কার্বন-যৌগিক হিট শিল্ড। ১,৩৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এই হিট শিল্ড। সূর্যের কাছ দিয়ে অন্তত ২৪ বার প্রদক্ষিণ করার লক্ষ্য রয়েছে পার্কার সোলার প্রোবের। অষ্টমবার প্রদক্ষিণের সময়ই এটি আলফভেন পৃষ্ঠ অতিক্রম করেছিল। নভেম্বর মাসে এটি নবমবার প্রদক্ষিণ করেছে। সেই সময় এটি আবার ওই সীমানা অতিক্রম করে থাকতে পারে। ওই প্রদক্ষিণের সময় পাঠানো তথ্য এখনও সম্পূর্ণরূপে ডাউনলোড এবং বিশ্লেষণ করা হয়নি।