সংক্ষিপ্ত

সোমবার প্রকাশিত হয় রাজ্যের হাই মাদ্রাসা পরিক্ষার ফলাফল , মেরিট লিস্টে ১৫ জন কৃতি ছাত্রী দের মধ্যে ১০ জন ই মালদহের মাদ্রসার ছাত্রী।
 

এদিন রাজ্যে হাই মাদ্রাসা ও আলিম পরীক্ষার ফলাফল ঘোষিত হয়, সবাইকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে মালদা, জেলার  মাদ্রাসা গুলির মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে মালদা, কৃতি ছাত্রী দের মধ্যে ১০ জন ই মালদা জেলার। রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে মালদার ছাত্রী সরিফা খাতুন ৭৮৬ নম্বর পেয়ে। মালদার রতুয়া থানার বটতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসার ছাত্রী  ইমরানা আফরোজ দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে এই একই পরীক্ষায়। 

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার পরীক্ষার আগে কোনো প্রাইভেট টিউশন নেননি তিনি, নিজে পড়াশোনা করেই এই কৃতিত্ব লাভ করেছেন, বড় হয়ে তিনি স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হতে চান। এ বিষয়ে তাঁকে জিগেস করা হলে তিনি জানান করোনা তে স্কুল বন্ধ ছিল বহু দিন সেই সময় টা কেই তিনি কাজে লাগিয়েছেন, সাত থেকে নয়  ঘন্টা করে পড়াশোনা করতেন দিনে। তিনি এই মাদ্রাসা বোর্ড পরীক্ষায় ৭৭৫ নম্বর পেয়ে মাদ্রাসা বোর্ড পরীক্ষার দ্বিতীয় স্থানাধিকারী হয়েছেন। ইমরানার বাবা পেশায় মাদ্রাসা স্কুলের শিক্ষক।  

আরও পড়ুন- নির্দিষ্ট পরিকল্পনাই সাফল্যের চাবিকাঠি, জানালেন UPSC-র দ্বিতীয় স্থানাধিকারী কলকাতার মেয়ে অঙ্কিতা

মালদহের কালিয়াচক দারিয়াপুর বয়সী হয় মাদ্রাসার ছাত্রী  আজিজা খাতুন রাজ্যে তৃতীয় স্থান লাভ করেছেন পরীক্ষায় ৭৭৩ নম্বর পেয়ে। বাবা হরমুজ শেখ লরি চালক ও মা রশিদা বিবি বিড়ি বাধার কাজ করেন। প্রবল আর্থিক কষ্টের মধ্যেও আজিজা কিন্তু হাল ছাড়েনি পড়াশোনা চালিয়ে গেছে, এবং তাঁর পরিশ্রমের ফল সে পেয়েছে। সরিফার মতন আজিজাও বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায়। কিন্তু আর্থিক অনটন কপালে ভাঁজ ফেলছে, পড়াশোনা চালাতে হলে যে টাকার দরকার! কোথায় পাবে তাঁরা এত টাকা? 

আরও পড়ুন- সিভিল সার্ভিস মেন এগজামিনেশন ২০২১-দুর্দান্ত ফল পশ্চিমবঙ্গের, দ্বিতীয় স্থানে বাংলার মেয়ে

পেশায় কৃষক মহম্মদ রেজাউল হকের মেয়ে রৌনক জাহান রামনগর মাদ্রাসার ছাত্রী, পরীক্ষায় তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৭৭১, রাজ্যে চতুর্থ স্থান লাভ করেছে সে। সরিফা ,আজিজার মতন সেও বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায়, কিন্তু বিধি বাম, এই অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় পড়াশোনা চালানোর টাকা কে যোগাবে?

আরও পড়ুন- দুর্ঘটনায় কাটা হাত সারমেয়-র মুখে, সহযোদ্ধাকে দেওয়া চিকিৎসকের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, সরব বাংলা পক্ষ

৭৬৯নম্বর পেয়ে রাজ্যে পঞ্চম স্থান লাভ করেছে সানিয়া পারভীন, সুজাপুরের নয়মৌজা শুভানিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সে। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা তার পরিবারের আয়, তাঁর মা সেলাইয়ের কাজ করেন বাড়ি তে, আর বাবা দর্জি, মেয়ের পড়াশোনার খরচ এত দিন লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা থেকে এসেছে কিন্তু এখন কি হবে? মেয়ের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে একমাত্র বাধা অভাব, টাকা জোগাড় না হলে মেয়ের স্বপ্ন কিভাবে পূরণ হবে? সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সারিকা খাতুন ও বরকত আলী।

এদিকে একই সমস্যায় পড়েছেন রাজ্যে নবম স্থান দখল করা আশিকা খাতুনের বাবা মাও। আশিকার প্রাপ্ত নম্বর ৭৬৫, বাবা আব্দুর রহমান দিন মজুরির কাজ করেন, এই অভাবের সংসারে কিভাবে যোগবেন মেয়ের পড়াশোনার খরচ তা নিয়ে এখন থেকেই দুশ্চিন্তার মেঘ ঘনিয়ে এসেছে তাঁর মাথায়। স্বপ্ন পূরণে বাধা হলেও এত আর্থিক কষ্টের মধ্যেও কিন্তু তারা হাল ছাড়েনি পড়াশোনা চালিয়ে রাজ্য তথা মালদার নাম উজ্জ্বল করেছে এই দশ জন মেধাবী ছাত্রী।