সংক্ষিপ্ত

শুধু কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো নয়, প্রতি বছর পৌষ মাসে বৃহস্পতিবার মায়ের ধুমধাম করে পূজো করা হয় এই গ্রামে। লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে বিশেষ মেলাও বসে ঘোষ গ্রামে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ কড়ি কিনতে ছুটে আসে এই মেলায়। 

গ্রামের আরাধ্য দেবী মা লক্ষ্মী, অথচ কোজাগোরী লক্ষ্মীপুজোর তিথিতে মা লক্ষ্মীর পুজো হয় না গ্রামের কোনও বাড়িতেই। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে থেকেই বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে ঘোষ গ্রামের  মন্দিরেই মা লক্ষ্মীর আরাধনা হয়। শুধু কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো নয়, প্রতি বছর পৌষ মাসে বৃহস্পতিবার মায়ের ধুমধাম করে পূজো করা হয় এই গ্রামে। লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে বিশেষ মেলাও বসে ঘোষ গ্রামে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ কড়ি কিনতে ছুটে আসে এই মেলায়। কথিত রয়েছে স্বপ্নাদেশ পেয়েই এই পুজোর সূচনা হয়। 

কী কাহিনি এই পুজোর নেপথ্যে? 

কথিত আছে,হর্ষবর্ধনের আমলে পরিব্রাজক সাধক কামদেব ব্রহ্মচারী পরিভ্রমন করেছিলেন। মায়ের সাধনার আসনের সন্ধানে। বীরভূমের রাঢ অঞ্চলে ঘুরতে ঘুড়তে একচক্রধাম বীরচন্দ্রপুরে গর্ভবাসে এসে পৌঁছন। তারপর ভরপুর বর্ষায়  যমুনায় সাতরে ঘোষ গ্রামে পৌঁছনতিনি। রাত্রি হয়ে যাওয়ায় নিম গাছের নিচে বসেই ঘুমিয়ে পড়েন। সেই রাতে স্বপ্ন দেখেন ত্রেতা যুগে  রাম, লক্ষন,বীরহনুমান বনবাসের জন্য কিছু দিন এই গ্রামে বিচরণ করে গিয়েছিলেন। এরপরই ঘোষ গ্রামে ওই নিম গাছের তলায় তিনি সাধনা শুরু করেন। দীর্ঘ দিন কঠোর সাধনা করার পর মা লক্ষ্মীর স্বপ্নাদেশ পান। তাঁকে মা লক্ষ্মী স্বপ্ন দিয়ে বলেন,যেখানে তুই সাধনা করছিস সেখানে দারুময়ী মূর্তির প্রতিষ্ঠা করে পূজোর ব্যবস্থা কর।তার জন্য তোকে সাহায্য করে  গ্রামের সজল ঘোষ নামে এক কৃষক। একদিন কৃষি কাজে ওই কৃষক মাঠে যান।সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে। দয়াল কৃষি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এমন সময় সামনে একটি  কাদরে একটি শ্বেত পদ্ম ভাসতে দেখে ফুল তোলার জন্য বাবার কাছে সে বায়না ধরে।ছেলের বায়না রাখতে দয়াল ঘোষ  কাদরে শ্বেত ফুল টি তুলতে গেলে সেটি সরে যায়।ব্যার্থ হয়ে সে বাড়ি ফিরে যায়।এরপর রাতে স্বপ্নাদেশ পান কোনো সাধক পুরুষ ওই শ্বেত পদ্ম তুলতে পারবে।এরপর ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দয়াল ব্রহ্মচারীর কাছে ছুটে যায়।সেদিন ছিল কোজাগরী পূর্ণিমা তিথি।ব্রহ্মচারি দয়াল কে সঙ্গে নিয়ে কাদর থেকে শ্বেতপদ্ম ও ভাসমান কাষ্ঠখন্ড তুলে নিয়ে এসে গঙ্গার মাটির রঙ দিয়ে লক্ষ্মীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে পূজো শুরু করেছিলেন।

কী ভাবে মা লক্ষ্মীর পুজো হয় ঘোষ গ্রামে? 

দেড় হাজার বছরের প্রথা কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে ৯ টি ঘট ভরে নবঘটের পূজো করা হয়। ১০৮ টি ক্ষীরের নাড়ুর নৈবদ্য দেওয়া হয়। মেনেই আজও মা লক্ষ্মীর পুজো হয় ঘোষ গ্রামে। মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দির রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই গ্রামে মা লক্ষ্মীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 


আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুজোর দিন গৃহসজ্জায় মেনে চলুন এই বিশেষ টিপস, জেনে নিন কী কী করবেন

আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুজোর ভোগবৃত্যান্ত, পুজোয় কি কি ভোগ নিবেদন করা হয় চঞ্চলা লক্ষ্মীকে

আরও পড়ুন- ঘরে লক্ষ্মী বাস চাইলে করুন এই কাজ, কোনও দিন হবে না অর্থের অভাব