সংক্ষিপ্ত

মঙ্গলের সন্ধ্যে যেন সত্যিই এক অনন্য ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকল।

মঙ্গলের সন্ধ্যে যেন সত্যিই এক অনন্য ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকল। কল্লোলিনী কলকাতার বুকে রচিত হল লড়াইয়ের নয়া ইতিহাস।

একদিকে ‘পুজো কার্নিভাল’, আর অন্যদিকে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’। কিন্তু আজই কেন? কারণ, প্রতি বছরের মতো এই বছরও দুর্গাপুজোর সেরা ক্লাবগুলিকে নিয়ে রেড রোডে ‘পুজো কার্নিভাল’-এর আয়োজন করা হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। যে কার্নিভালে একের পর এক ক্লাব তাদের প্রতিমা এবং থিমের কথা তুলে ধরে। দেশ-বিদেশ থেকেও একাধিক প্রতিনিধিরা হাজির থাকেন এই অনুষ্ঠানে।

আরও পড়ুনঃ 

প্রতিবাদের আগুনে জনস্রোত ধর্মতলায়! শহরের বুকে ঐতিহাসিক 'দ্রোহের কার্নিভাল', দেখুন ছবিতে

আর ঠিক এদিনই, অর্থাৎ মঙ্গলবার অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর ডাক দেন। কার্যত, সম্মুখ সমরে রাষ্ট্র বনাম আন্দোলনকারীরা। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এদিন অনশনকারীদের সংহতি জানিয়ে সারা দেশে ১২ ঘণ্টার অনশন কর্মসূচি পালন করে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনও।

যদিও মুখ্যসচিব জুনিয়র ডাক্তারদের এই ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ করতে বারণ করেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাতই করেননি তারা। উল্টে একাধিক সিনিয়র চিকিৎসক সহ, চিকিৎসকের আটটি সংগঠন এবং অন্যান্য বহু সংগঠন জুনিয়র ডাক্তারদের এই ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-কে সরাসরি সমর্থন জানায়।

আরও পড়ুনঃ

Live Update: পুজোর কার্নিভালকে জোরালো টক্কর দিচ্ছে 'দ্রোহের কার্নিভাল' শুরু মানববন্ধন

কিন্তু পুলিশের তরফে হটাৎই এদিন ১৬৩ ধারা জারি করে দেওয়া হয়। কিন্তু পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে যায় ‘জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টর্স’। ততক্ষণে অবশ্য রেড রোডের মতোই ধর্মতলার মোড় থেকে শুরু করে রাণী রাসমণি রোড পর্যন্ত একাধিক জায়গায় মোতায়েন হয়ে গেছে বিশাল পুলিশবাহিনী।

সেইসঙ্গে, রেড রোড এবং রাণী রাসমণি রোডের একটি করে লেন ঘিরে ফেলা হয়েছিল ব্যারিকেড দিয়ে। প্রায় এক মানুষ সমান উঁচু ব্যারিকডগুলিকে গার্ডরেলের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিল পুলিশ। শুধু তাই নয়, দেওয়া হয়েছিল তালাও। কোথাও কোথাও আবার বাঁশের কাঠামো বেঁধেও তৈরি করা হয় ব্যারিকেড।

কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে সেই ব্যারিকেড খুলতে বাধ্য হয় প্রশাসন। কারণ, দ্রোহের কার্নিভালের অনুমতি দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। শুনানি শেষে রাজ্যের বিপক্ষেই রায় দেন বিচারপতি। তিনি বলেন, “সকলেরই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে।”

আরও পড়ুনঃ

মন্ত্রী সুজিত বসুর গাড়ি আসতেই তেড়ে গেলেন মানববন্ধনে দাঁড়ানো জনতা, ছোঁড়া হল বোতল

আর হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর, বাধ্য হয়ে ব্যারিকেড খুলে দিতে হয় পুলিশকে। একের পর এক শিকল তখন পড়ে আছে রাস্তায়। কার্যত, দ্রোহের আগুনে ছিটকে যাচ্ছে সব ব্যারিকেড। আর সেই ব্যারিকেড সরতেই জনতার উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিন ধর্মতলা কার্যত জনস্রোতের চেহারা নিল। ঢাক বাজতে শুরু করল, তার সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলল স্লোগান।

সাধারণ মানুষের ব্যাপক স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি চোখে পড়ল এদিন। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন ডাক্তারদের পাশে দাঁড়াতে। প্রতিবাদী জনতার গলায় ছিল শিকল ভাঙার গান। আর তখন ব্যারিকেডের শিকল পড়ে আছে রাস্তায়। স্লোগানে, গানে এবং নাচে মুখর রাজপথ। প্রতিবাদের এই মিছিলে শামিল হলেন প্রচুর মানুষ।

এদিন স্লোগান ওঠে, ‘শাসক থাকবে কতক্ষণ, শাসক যাবে বিসর্জন’। ওদিকে মহানগরীর রাস্তায় কেউ জ্বালিয়ে দেন মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট। কেউ আবার ওড়ান কালো বেলুন। হাতে হাত রেখে ‘জনগণের ব্যারিকেড’ গড়ে জনতা, শুরু হয়ে যায় মানববন্ধন। এদিন দ্রোহের কার্নিভালে যোগ দেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন, চৈতি ঘোষাল এবং উষসী চক্রবর্তী সহ আরও অনেকে।

আরও পড়ুনঃ

দ্রোহের কার্নিভালঃ ডিসি ইন্দিরাকে ঘিরে 'গো-ব্যাক' স্লোগান বিক্ষুব্ধ জনতার, ফুঁসছে ধর্মতলা

ধর্মতলার মানববন্ধনে মঙ্গলবার আট থেকে আশি সকলেই ছিলেন। তাদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড এবং মুখে একটাই স্লোগান, ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’। সন্ধ্যা যতই বাড়ে, ততই দলে দলে আরও মানুষ যোগ দিতে থাকেন।

জনগণের দ্রোহের আগুন এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছয় যে, ডিসি সেন্ট্রাল সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে দেন সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি, মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিঘ্ন ঘটাতেই ইচ্ছে করে গাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। বেশ কিছুক্ষণ ধরে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তারা।

শুধু তাই নয়, কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীরা। তাঁকে ঘিরে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান ওঠে প্রতিবাদী জনতার মধ্যে থেকে। দেখা যায়, বিক্ষুব্ধ জনতার তীব্র ক্ষোভের মাঝে তিনি আর দাঁড়াননি। পিছিয়ে আসেন এবং সেখানেও তাঁকে ঘিরে লাগাতার স্লোগান চলতে থাকে।

প্রতিবাদী জনতার গলায় ছিল বিচারের দাবি এবং জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি। কিন্তু পুলিশের আচরণে তারা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তাই ইন্দিরা মুখার্জিকে ঘিরে ওঠে স্লোগান। ওদিকে আবার রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুর গাড়ি মানববন্ধনের কাছে চলে আসতেই ক্ষোভ উগড়ে দেন প্রতিবাদী জনতা।

আরও পড়ুনঃ 

বুকে ছিল 'প্রতীকী অনশনকারী' ব্যাজ! এই অপরাধে আটক চিকিৎসককে মুক্তি দিল পুলিশ

একসঙ্গে প্রায় কয়েকশো লোক ধেয়ে যান মন্ত্রীর গাড়ির দিকে। সুজিতের অভিযোগ, তাঁর গাড়িতে লক্ষ্য করে বোতলও ছোঁড়া হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় ধর্মতলা মোড়ে। তবে সুজিতের গাড়ি থামেনি। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে গাড়ি নিয়ে সোজা এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। চলন্ত গাড়ির পিছনের অংশে চড় থাপ্পড় মারেন কেউ কেউ।

অন্যদিকে, রেড রোডের কার্নিভাল থেকে আটক চিকিৎসক তপোব্রত রায়কে শেষপর্যন্ত মুক্তি দেয় কলকাতা পুলিশ। দুর্গাপুজোর কার্নিভালে ‘প্রতীকী অনশনকারী’ লেখা ব্যাজ পরার অভিযোগে মঙ্গলবার বিকেলে তাঁকে আটক করে ময়দান থানায় নিয়ে গেছিল পুলিশ।

মঙ্গলবার রাতে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। তারপরেই ময়দান থানার সামনে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। সেইসঙ্গে, কয়েকজনকে ভারতের পতাকাও ওড়াতে দেখা যায়।

সবমিলিয়ে, ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ যেন ঐতিহাসিক এক মাইলস্টোন তৈরি করল শহর কলকাতার বুকে।

YouTube video player

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।