সংক্ষিপ্ত

প্রযুক্তিগত দিক থেকেও সমানে লড়াই চালাতে থাকে কলকাতা পুলিশ। নিজেদের উদ্যোগেই একটানা কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে শেষমেশ পাওয়া গেল সুফল। 

শহর কলকাতায় প্রতারণার ঘটনা প্রায়শই উঠে আসে সংবাদের শিরোনামে। কখনও ডিজিটাল মাধ্যমে জালিয়াতি, আবার কখনও দেখা যায় স্বয়ং উপস্থিত থেকে লোক-ঠকানোর কারবার। তবে, ঠগবাজির ঘটনা যেমন আকছারই ঘটে থাকে, তেমন ঠগবাজদের পাকড়াও করে শাস্তি দেওয়ার নজিরও কম নেই। সম্প্রতি এমনই একটা ঘটনায় দুর্দান্ত সাফল্য পেল কলকাতা পুলিশ।

দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ডাক্তার কনিষ্ক সরকারের যথেষ্ট খ্যাতি এবং জনপ্রিয়তা রয়েছে চিকিৎসক হিসাবে। এই চিকিৎসক নিজের গাড়ি বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজতে খুঁজতেই পড়ে গেলেন প্রতারকদের খপ্পরে। কীভাবে ঘটল সেই দুর্ঘটনা?

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সম্ভাব্য ক্রেতারা। তাঁরাই সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার ডিমান্ড ড্রাফট (পে অর্ডার) দেন ডাক্তার কনিষ্ক সরকারকে। তাঁর কাছ থেকে গাড়িটি ক্রেতাদের কাছে হস্তান্তরিত হয় চলতি বছরের ২৩ ডিসেম্বর। কিন্তু, তার ঠিক ৩ দিনের মাথায়, ২৬ ডিসেম্বর ওই চিকিৎসক ব্যাঙ্কের তরফ থেকে জানতে পারেন যে, সংশ্লিষ্ট 'পে অর্ডার'-টি একেবারেই ধাপ্পা। লাখ লাখ টাকার ভুয়ো ডিমান্ড ড্রাফট নিয়ে এবার বিপাকে পড়ে যান গাড়ি হারানো চিকিৎসক। নিরুপায় অবস্থায় তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন এবং অভিযোগ দায়ের করেন দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ থানায়। তাঁর প্রতারণার মামলা আইনি খাতায় নথিবদ্ধ হয়।

এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ কর্তারা প্রথমে সংগৃহ করেন প্রয়োজনীয় নথিপত্র। পাশাপাশিই চলতে থাকে সন্দেহভাজনদের সঙ্গে প্রতারিত ব্যক্তির ফোনে কথাবার্তার রেকর্ডিং নিয়ে তদন্ত। প্রযুক্তিগত দিক থেকেও সমানে লড়াই চালাতে থাকে কলকাতা পুলিশ। নিজেদের উদ্যোগেই একটানা কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে শেষমেশ পাওয়া গেল সুফল।

লাগাতার চোদ্দ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস 'অপারেশন' চালিয়ে অবশেষে শুক্রবার সন্ধান পাওয়া গেল ছয় জন অভিযুক্তের। এই ছয় ধৃতের নাম মিঠুন শীল, নিতাই মাইতি ওরফে রাজ, বিজন দাস, চন্দন দে, সুমিত কুমার ঘোষ এবং মহম্মদ সাহাবুদ্দিন ওরফে সমীর। ছয় ঠগবাজকে শুক্রবারই গ্রেফতার করা হয়েছে। কলকাতা এবং শহরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ছয় অভিযুক্তকে নাগালে নিয়ে আসতে পেরেছেন কলকাতা পুলিশের ক্ষিপ্র অফিসাররা।

প্রতারকদের বাগে আনতে ক্রমাগত প্রযুক্তি প্রহরা চালিয়ে যাচ্ছিলেন দক্ষিণ বিভাগের সাইবার সেলের সার্জেন্ট শুভঙ্কর চক্রবর্তী। ঘটনায় চিকিৎসকের কাছ থেকে লুঠ করা গাড়িটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্তরা প্রায় সকলেই এই ধরনের জালিয়াতিতে সিদ্ধহস্ত। অনেক আগেও এদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। লোক ঠকিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন অতিবাহিত করাই এদের একমাত্র লক্ষ্য।

অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করা হয়েছে। ঘটনার সম্পর্কে নিজের বিশেষ টিম নিয়ে আরও বিস্তারিত তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন তদন্তকারি অফিসার টালিগঞ্জ থানার সাব-ইন্সপেক্টর পাঞ্চজন্য সরকার। তদন্তকারী দলের মধ্যে ছিলেন, কনস্টেবল প্রদীপ সরদার, লক্ষ্মী কান্ত পাত্র, আমিন আলী শেখ এবং অরুণ রায়। সার্জেন্ট প্রভাকর বাগ, টালিগঞ্জ থানার অ্যাডিশনাল ওসি ইনস্পেক্টর বোধিসত্ত্ব প্রামাণিক এবং সাব ইনস্পেক্টর অজিত কুমার গুপ্ত, প্রমুখ।

আরও পড়ুন-
বর্ষবরণের রাতে কলকাতা, মুম্বই, বেঙ্গালুরু সহ ভারতের সমস্ত বড় শহরে কড়া নিরাপত্তা, কোন শহরে কেমন বন্দোবস্ত?
‘সন্ত্রাসবাদ বরদাস্ত করব না’, নাম না নিয়ে পাকিস্তান-চিনের উদ্দেশে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের
রঙিন হয়ে উঠল বর্ষবরণের রাত, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ২০২৩-কে স্বাগত জানাল অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড