সংক্ষিপ্ত
৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয়েছে তরুণী চিকিৎসকের দেহ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় রাজ্যের সীমা পার করে দেশে এমনটি বিদেশেও পৌঁছে গেছে। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলাও করেছেন। মঙ্গলবার ছিল প্রথম দিনের শুনানি। কিন্তু কেন এই ঘটনা এই মারাত্মক প্রতিবাদের রূপ ধারন করেছে- যার কাটাছেঁড়া করতে ব্যবস্ত তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের দলও আরজি কর ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত।
আরজি করকাণ্ডের পর কেটে গেছে ১০ দিন। এই অবস্থায় এখনও প্রকৃতি অপরাধীরা গ্রেফতার হয়নি বলেও অভিযোগ নির্যাতিতার পরিবারের। এখনও পর্যন্ত একজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সিবিআই-এর নজরে রয়েছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। এই অবস্থায় সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্টও। সন্দীপ ঘোষকে নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছে রাজ্যের মানুষের মধ্য। এই অবস্থায় দেখুন আরজিকর ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সবথেকে বড় ভুলগুলি-
১। আরজি কর হত্যাকাণ্ডকে ধাপাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ
আরজি কর ইস্যুতে আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশই মনে করছেন হাসপাতালের মধ্যেই ডাক্তারের মৃত্যুর ঘটনাকে ধাপাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। যা নিয়ে প্রথম থেকেই সরব ছিল বিরোধী বিজেপি ও বামফ্রন্ট। খুন ও ধর্ষণের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেছিল প্রশাসন। সেই কারণে বাড়িতে প্রথম ফোন গিয়েছিল আত্মহত্যা বলে। এফআইর করতে দেরি করা হয়েছে। যা নিয়ে এদিন সুপ্রিম কোর্টও তুলোধনা করে রাজ্যের।
২। একদিকে বাবা-মায়ের অপেক্ষা অন্যদিকে দ্রুত শেষকৃত্য
প্রশাসন নিহত নির্যাতিতার দেহ তিন ঘণ্টা দেখতে দেয়নি বাবা ও মাকে। মেয়ের মৃতদেহের জন্য তারা হাসপাতালে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের না জানিয়েই দেহ বাড়িতে নিয়ে যায়। নির্যাতিতার মা কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত বন্ধ করার অভিযোগও প্রকাশ্যে করেছেন। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ কলকাতা পুলিশ সঠিক সময় তদন্ত করেনি। তদন্তে গড়িমসি করেছেন। দ্রুত শেষকৃত্য করতেও পুলিশ জোরাজুরি করেছিল বলে অভিযোগ।
৩। তদন্তে অবহেলা ও ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ
কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতিতে যখন সরব হয়েছিলেন চিকিৎসকরা, সেই সময়ই কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগও ওঠে। কিন্তু সমস্যা শুরু হল নির্যাতিতার বাড়িতে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ দেওয়ার প্রস্তাব। যা ভালভাবে নেয়নি নির্যাতিতার বাবা ও মা।
৪। আরজি করে সংস্কার কাজ
আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হলে উদ্ধার হয়েছিল নির্যাতিতার দেহ। কিন্তু সেই সেমিনার হলের পাশেই ঘটনার দিন দুয়েকের মধ্যেই ভাঙচুর শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ প্রমান লোপাটের চেষ্টা করছে প্রশাসন। তাতেই ক্ষোভ বাড়তে থাকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
৫। সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে জটিলতা
আরজি করের ঘটনার পর থেকেই আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগ দাবি করেছিল। ঘটনার কয়েক দিন পরে তিনি পদত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়। যা নিয়ে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ডাক্তারির ছাত্র ও জুনিয়ার ডাক্তাররা। ক্ষোভ হাসপাতালের গণ্ডী ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যে। শেষপর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে সন্দীপকে ছুটিতে পাঠায় রাজ্য। কিন্তু ততক্ষণে সরকারের হাতের বাইরে চলে যেতে শুরু করেছে আরজি করের রাশ।
৬। ডাক্তারদের দায়ী করা
আরজি কর ইস্যুতে প্রথম থেকেই আন্দোলনে বসেছিল চিকিৎসকরা। প্রথমে তারা নিরাপত্তার দাবিতে সরব হয়েছিল। কিন্তু তাদের আন্দোলনে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবহত হচ্ছে বলেও প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে। ধর্মঘটের কারণে জনতা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে - এমন দাবিতে আরও বিরক্ত হয় চিকিৎসকারা। তারা জানিয়ে দেয় পরিষেবা বন্ধ নয় , সিনিয়ার ডাক্তাররা পরিষেবা দিচ্ছে। কিন্তু আরজি কর আন্দোলনে গোটা দেশের চিকিৎসকদের সায় থাকায় পরিস্থিতি অনেকটাই আন্দোলনকারীদের পক্ষে চলে আসে।
৭। স্বাধীনতার রাতে আরজি করে ভাঙচুর
১৪ অগাস্ট আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে মহিলাদের রাত দখলের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। সেই রাতে একদল দুষ্কৃতী ভাঙচুর চালায় আরজি কর হাসপাতালে। তাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুষ্কৃতী হামলা রুখতে পুলিশ কেন ব্যর্থ সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
৮। ডার্বি বাতিল
আরজি কর কাণ্ডের কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকার নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাতিল করে দেয় ইস্টবেঙ্গল - মোহনবাগার ম্যাচ। ফুটবল প্রেমী বাঙালির কাছে সেটি একটি বড় ধাক্কা। যার প্রতিবাদে চিরকালের যুযুধান দুই শিবির রাস্তায় নেমে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মমতা - সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
৯। সোশ্যাল মিডিয়াকে তোপ
আরজি কর ইস্যুতে যে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল তাতে বড় ভূমিকা ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু নেটিজেনদের নোটিশ পাঠাতে সুরু করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। যা তীব্র বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্ট। সরকারের কণ্ঠরোধ করার এই পদক্ষেপও ভুল বলে মনে করছেন অনেকে।
১০। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদ
আরজি কর ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় নিজেই রাস্তায় নামেন। যা আন্দোলনকারীদের কাছে ভুল বার্তা নিয়ে যায়। কারণ তারা বিষয়টিকে তাদের বিরোধিতা হিসেবেই দেখেন। পাশাপাশি প্রাকাশ্যই মমতা পুলিশের সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু তিনি নিয়েই একাধারে পুলিশ মন্ত্রী। অন্যদিকে স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বও তাঁর।