সংক্ষিপ্ত

প্রতিনিয়ত দুর্বল হচ্ছে তলদেশ। এই কালীঘাট ফরমেশন স্তরের মধ্যেই যাবতীয় কাঠামো। উন্নত প্রযুক্তির হাত ধরে মেট্রোরেল বা বহুতল নির্মাণ, সবই কালীঘাট ফরমেশনের ওপর দাঁড়িয়ে।

কলকাতা শহরে বহুতল হেলে পড়ার ঘটনা যেন পিছু ছাড়ছে না। কখনও উত্তর তো কখনও দক্ষিণে ঘটছে এ ঘটনা। যেন পাশাপাশি দুটি বহুতল একে অপরকে আলিঙ্গন করছে। ক্রমেই বহুতল হেলে পড়ার তালিকাটা দীর্ঘ হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র আইএসও জার্নালে বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ ডক্টর সুজীব করের এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। কলকাতার একের পর এক বহুতলের এই হেলে পড়ার কারণ ওই গবেষণাপত্রের মধ্যেই নিহিত রয়েছে।বলা হয়েছে, কলকাতা মাটির তলা ‘জল শূন্য’ হয়ে রয়েছে। এই গবেষণাপত্রে আরও উঠে আসে, ওপরের মাটির স্তর কালীঘাট ফরমেশন।

 প্রতিনিয়ত দুর্বল হচ্ছে তলদেশ। এই কালীঘাট ফরমেশন স্তরের মধ্যেই যাবতীয় কাঠামো। উন্নত প্রযুক্তির হাত ধরে মেট্রোরেল বা বহুতল নির্মাণ, সবই কালীঘাট ফরমেশনের ওপর দাঁড়িয়ে।কালীঘাট ফরমেশন-এর ঠিক নীচেই ভঙ্গুর, ঝুরঝুরে উপাদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন ভূবিজ্ঞানীরা । সেখানে অবস্থার পরিবর্তন হতেই প্রভাব পড়ছে উপরের স্তরে।একের পর এক বহুতল হেলে পড়েছে সেই কারণেই।এমনটাই দাবি ভূবিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রে। বাঘাযতীনে বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনার পর থেকে শহরের বহুতলগুলির পরিস্থিতি নিয়ে শোরগোল পড়েছে। ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, কয়েক বছর আগেই বিপদটা টের পেয়েছিলেন তাঁরা ।তাঁদের গবেষণা বলছে, বিপদের মুখে থাকতে পারে নবান্নও। ‘কালীঘাট ফরমেশন’ আসলে কী?

ভূবিজ্ঞানীদের মতে, হাজার দেড়েক বছর আগে কালীঘাট অঞ্চল ছিল এক দ্বীপ। সেই দ্বীপকে কেন্দ্র করে পলি জমার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয় । এরফলে ক্রমেই কলকাতার অন্যান্য অংশ এবং হাওড়া, হুগলি ও দুই ২৪ পরগনার মাটির উপরের স্তর তৈরি করেছে। কালীঘাটকে কেন্দ্র করে মাটির এই স্তর তৈরি হওয়া শুরু বলেই ভূবিজ্ঞানীরা একে ‘কালীঘাট ফরমেশন বলে আখ্যা দিয়েছেন। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, কলকাতায় প্রতিদিন মাটির তলা থেকে যে পরিমাণ জল টেনে তোলা হচ্ছে খুবই চিন্তার । পরিবর্তে ভূগর্ভে জল ফিরে যাওয়ার পরিমাণ যথেষ্ট কম। এছাড়া নানা জায়গায় জলাশয়-পুকুর ভরাট করে উঠে যাচ্ছে কংক্রিটের দেওয়াল।আর এর ফলে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নামছে। মাটি শুকিয়ে কালীঘাট ফরমেশনের নীচের স্তর আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। মূলতঃ গঙ্গার দু’পারে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত এলাকা সবচেয়ে বিপন্ন বলে ভূবিজ্ঞানীদের অভিমত। কলকাতার ৪০ শতাংশ এবং হাওড়ার ৩৫ শতাংশ এলাকাই এই অংশের মধ্যে পড়ছে।গবেষণায় প্রকাশ, কলকাতার বাবুঘাট থেকে বড়বাজার, শোভাবাজার, কাশীপুর, দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত এলাকায় মাটির নীচে বিপদ ঘনাচ্ছে। গার্ডেনরিচ, মানিকতলা, বিধাননগর এলাকাতেও বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। গঙ্গার পশ্চিম কূলে নবান্ন ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন এলাকা এবং ডোমজুড়ের দিকেও বিপদের ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

ভূবিজ্ঞানীদের মতে , মাটির উপরিস্তরের জলকে পরিকল্পিত উপায়ে নীচের স্তরে সরাসরি প্রবেশ করার ব্যবস্থা করলে কলকাতার ভূগর্ভস্থ জলস্তর আবার বাড়িয়ে তোলা সম্ভব।