সংক্ষিপ্ত

বিস্মিত গোটা রাজ্য। শহরের বুকে কার্যত শিউড়ে ওঠার মতো ঘটনা। নাড়া দিয়ে দিল সকলকে। রাজ্যের অন্যতম সেরা আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় উদ্ধার তরুণী জুনিয়র চিকিৎসকের দেহ।

বিস্মিত গোটা রাজ্য। শহরের বুকে কার্যত শিউড়ে ওঠার মতো ঘটনা। নাড়া দিয়ে দিল সকলকে। রাজ্যের অন্যতম সেরা আর জি কর হাসপাতালের (RG Kar Medical College & Hospital) সেমিনার রুম থেকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় উদ্ধার তরুণী জুনিয়র চিকিৎসকের দেহ।

পোশাক অবিন্যস্ত এবং তাঁর দেহে একাধিক আঘাতের প্রমাণ মিলেছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ধর্ষণ করেই খুন করা হয়েছে ঐ তরুণীকে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালেই কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন। যা নিয়ে এইমুহূর্তে তোলপাড় গোটা রাজ্য। বিভিন্ন হাসপাতালে শুরু হয়ে গেছে চিকিৎসকদের প্রতিবাদ। কর্মবিরতিতে জুনিয়র ডাক্তাররা।

এরপরই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। খোদ পুলিশ কমিশনার নিজে পৌঁছে যান হাসপাতালে। আর কয়েকঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। ধৃত ব্যক্তির নাম সঞ্জয় রায়।

কিন্তু কীভাবে তাঁর কাছে পৌঁছল পুলিশ? পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্লু-টুথ হেডফোন খুঁজে পান তদন্তকারীরা। এরপর তারা সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেন। সেখানে দেখা যায় যে, ঐ সময়ে গলায় হেডফোন ঝুলিয়ে সেমিনার রুমে ঢুকছে সঞ্জয়। কিন্তু তার ৩০ মিনিট পর সেমিনার রুম থেকে বেরোনোর সময় হেডফোন ছিল না সঞ্জয়ের কাছে। সেখান থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে।

সবথেকে বড় বিষয় হল যে, সঞ্জয় বহিরাগত। কিন্তু তাঁর হাসপাতালে অবাধ যাতায়াত ছিল। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার রুমে পাওয়া যায় সেই ব্লু-টুথ হেডফোনের ছেঁড়া তারের একটি অংশ। সেটি ছিল এই সঞ্জয় রায়ের।

আর এই সূত্র ধরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে। মৃতার দেহের পাশে পড়ে থাকা ঐ তারটিকে ধরেই পুলিশ সূত্র খোঁজার কাজ শুরু করে। তবে পুলিশের সন্দেহ, এই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে।

ইতিমধ্যেই টালা থানায় নির্যাতিতার বাবার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণ এবং খুনের মামলা রুজু হয়। প্রসঙ্গত, গতকাল থেকেই লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারা হাসপাতালে চত্বরে উপস্থিত ছিলেন। হোমিসাইড শাখার পাশাপাশি উইমেন্স গ্রিভ্যান্স সেলের সদস্যরাও আসেন। এরপর একাধিক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তারা।

সেই সূত্র ধরেই প্রাথমিকভাবে সঞ্জয়কে আটক করেছে পুলিশ। তাঁকে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর তারপর আজ সকালে তথ্যে অসঙ্গতি এবং হেডফোনের তারের সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয়েছে সঞ্জয়কে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে ফোনে কথা বলছিলেন ঐ মহিলা চিকিৎসক। রাত দুটো নাগাদ ডিউটি শেষ করে জুনিয়রদের সঙ্গে ডিনার করেন তিনি। এরপর জরুরি বিভাগের চারতলায় চেষ্ট ডিপার্টমেন্টের সেমিনার হলে বিশ্রামের জন্য ঢোকেন।

আর শুক্রবার, সেই সেমিনার হল থেকেই সকালবেলা উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, ঐ মহিলা চিকিৎসকের শরীরে যৌন নির্যাতনের চিহ্ন মিলেছে। তাঁর মৃতদেহ পড়ে ছিল ম্যাট্রেসের উপর। সেখানে রক্তের দাগ মিলেছে। সেই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মৃত মহিলা চিকিৎসকের দুই চোখ দিয়ে রক্তক্ষরণও হয়েছিল। মুখ দিয়ে তাঁর রক্তও বেরিয়েছিল।

গোপনাঙ্গে রক্তের চিহ্ন এবং মুখে নখের দাগও মিলেছে। ঘাড়ে, পেটে এবং ঠোঁটের ওপর একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। বাঁ-পায়ের গোড়ালি এবং ডান হাতের অনামিকাতেও ক্ষতচিহ্ন ছিল। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। লালবাজারের তরফ থেকে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে।

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।