সংক্ষিপ্ত
গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের পাশে থাকা নিয়ে যতটা জোর গলায় বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ সম্বন্ধে তাঁর অবহেলা ও নিরাসক্তি প্রাক্তন তৃণমূল মহাসচিবকে অনেকটাই ভেঙে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
পশ্চিমবঙ্গে এসএসসি-তে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারের পর রাজ্যের মন্ত্রিত্ব পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের অন্দরেও সমস্ত দলীয় পদ থেকে তাঁকে তড়িঘড়ি অপসারণ করা হয়েছে। ইডি হেফাজত থেকে বর্তমানে তাঁর ঠিকানা হয়েছে প্রেসিডেন্সি জেল। তাঁর পাশে নেই স্বয়ং সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। জেলে বসেই সে খবর পেয়েছেন পার্থ।
ঘাসফুল শিবিরের তরফ থেকে সরাসরি দূরত্ব বৃদ্ধির পরও আজ পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের স্পষ্ট জানালেন, ‘‘দলের সঙ্গে ছিলাম, দলের সঙ্গে আছি।’’ শনিবার অসুস্থ বোধ করায় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে। সেখানে চেক আপের পর বেরোনোর সময় তৃণমূলের সঙ্গে এখনও অবদি জুড়ে থাকার বার্তা দিলেন পার্থ।
উল্লেখ্য, দুর্নীতি ও ব্যাপক আর্থিক তছরুপের কাণ্ডে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি ও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকার হদিস এবং এই দুজনের যৌথভাবে অঢেল সম্পত্তির হিসেব প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পরই প্রাক্তন মন্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব রাখতে শুরু করে ঘাসফুল শিবির। পার্থকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে টুইট করেছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। যদিও সেই টুইট পরে কোনও কারণে মুছে দিয়েছিলেন তিনি। তার পরই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে পার্থকে সমস্ত দলীয় পদ থেকে অপসারিত করার পাশাপাশি সাসপেন্ড করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিত্ব থেকে তার আগেই পার্থকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, দল ও সরকারের সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।
অগাস্টের শুরুতে জেলের ভিতরে ঢোকাকালীন মেটাল ডিটেক্টরে আটকে পড়ার সময় হতাশ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য ছিল, “এ জীবনে আর কী আছে!” এরপর গত বৃহস্পতিবার আদালতের এজলাস ছেড়ে বেরোনোর সময় আক্ষেপের সুরে পার্থ বলেছিলেন, ‘‘আগে কত লোক থাকত। এখন কেউ নেই!’’ তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বৃদ্ধির আবহে পার্থের একের পর এক হতাশাজনক মন্তব্য রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষভাবে নজরে এসেছে। সেই মন্তব্যের পর শনিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘দলের সঙ্গে আছি’ বার্তা নতুন জল্পনা সৃষ্টি করেছে বঙ্গ রাজনীতিতে।
বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, পার্থকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব। গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের পাশে থাকা নিয়ে যতটা জোর গলায় বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ সম্বন্ধে তাঁর অবহেলা ও নিরাসক্তি প্রাক্তন তৃণমূল মহাসচিবকে অনেকটাই ভেঙে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন-
সব বাজে কথা: আবগারি কেলেঙ্কারিতে সিবিআই অভিযানের পরদিন সাফ জানিয়ে দিলেন মনীশ শিশোদিয়া
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ‘ক্যান্সার’-এর সঙ্গে তুলনা, বেনজির আক্রমণ তৃণমূলেরই পুরপ্রধানের
পাইলট কার সহ এসি গাড়িতে পার্থ আর সামান্য প্রিজন ভ্যানে অর্পিতা!