সংক্ষিপ্ত

এক দশক আগে ঘোষিত হওয়া  জাতীয় সরোবরের ফাইল উধাও পৌরসভা থেকে, স্বীকার করলেন পৌর প্রশাসক।পৌরসভা নির্বাচনের মুখে জাতীয় সরোবরের  ফাইল চুরিকে হাতিয়ার করে কোমর বেঁধে মাঠে নামছে পুরুলিয়া শহরের বিজেপি শিবির।  

এক দশক আগে ঘোষিত হওয়া  জাতীয় সরোবরের ফাইল উধাও পৌরসভা থেকে (Purulia Municipality)। জাতীয় সরোবরের ডি পি আর আছে ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না স্বীকার করলেন পৌর প্রশাসক।পৌরসভা নির্বাচনের মুখে জাতীয় সরোবরের  ফাইল চুরিকে হাতিয়ার করে কোমর বেঁধে মাঠে নামছে পুরুলিয়া শহরের বিজেপি শিবির (BJP) । পৌর নির্বাচনের আগে বেশ চাপে পুরুলিয়ার ঘাসফুল শিবির (TMC)। 

রাজ্যে বাম সরকার কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার থাকাকালীন ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল পুরুলিয়া শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পুরুলিয়া পৌরসভার অধীন সাহেব বাঁধ জাতীয় সরোবরের স্বীকৃতি পায়।সেই সময় পুরুলিয়া পৌরসভা কংগ্রেসের দখলে। পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বাগমুন্ডি বিধানসভার  তৎকালীন  বিধায়ক নেপাল মাহাতো এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশের উদ্যোগে তৎকালীন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী নম নারায়ণ মিনা ঋষি নিবারণ সায়ের তথা সাহেব বাঁধকে জাতীয় সরোবরের স্বীকৃতি দেন। তারপর থেকে কেন্দ্র সরকারি অর্থানুকূল্যে সাহেব বাঁধকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়।দীর্ঘ এগারো বছর পর জাতীয় সরোবরের তকমা পাওয়া সাহেব বাঁধের সেই ফাইল উধাও হয়ে যাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পুরুলিয়া পৌরসভা। দুর্নীতি ঢাকতেই ফাইল উধাও করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন কংগ্রেস এবং বিজেপি।

পুরুলিয়া শহরের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত ৫০ একর জমির মধ্যে এত বড় জলাধার সেভাবে কোথাও দেখতে পাওয়া যায়না। সাহেব বাঁধ  ঘিরে রয়েছে ইতিহাস। ব্রিটিশ শাসনকালে ১৮৪৩ সালে  পুরুলিয়া শহর জুড়ে শুরু হয় পানীয় জলের হাহাকার।পুরুলিয়া  জেলের তৎকালীন জেলা সুপারেনটেনডেন্ট কোলোনেল টিকলে সাহেব জেলের কয়েদিদের দিয়ে পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের জন্য জলাধারের খনন কার্য্য শুরু করান। ৫০একর জমির ওপর পাঁচ বছর ধরে চলে খনন কার্য্য। ১৮৪৮ সালে জলাধারের খনন কার্য সম্পন্ন হলে কলোনেল টিকলে  সাহেবের নাম অনুসারে নাম দেওয়া হয় সাহেব বাঁধ। ভারত স্বাধীন হলে পুরুলিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি নিবারণ চন্দ্র ঘোষের নাম অনুসারে সাহেব বাঁধের নামকরণ হয় নিবারণ সায়ের। বর্তমানে পর্যটন মানচিত্রেও জায়গা করে নিয়েছে পুরুলিয়া শহরের সাহেব বাঁধ। শীতকালে প্রতিবছর বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদের আগমনে সাহেব বাঁধ আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। দূরদূরান্তের পর্যটকরা পুরুলিয়া বেড়াতে এসে সাহেব বাঁধ না দেখে ফেরেন না। জাতীয় সরোবরের স্বীকৃতি পাওয়া সেই সাহেব বাঁধের জাতীয় সরোবর সংক্রান্ত ফাইল পৌরসভা থেকে উধাও হয়ে যাওয়ায় বেশ চাপে পুরুলিয়া পৌরসভার বর্তমান প্রশাসক নবেন্দু মাহালি।

আরও পড়ুন, Police Crime: তরুণীর শ্লীলতাহানি মামলায় কোর্টে ধৃত ২ পুলিশ, আজই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের আবেদন

প্রশাসক নবেন্দু মাহালি জানান, 'কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ড থাকাকালীন এবং কেন্দ্রে কংগ্রেস থাকাকালীন সহেব বাঁধ জাতীয় সরোবরের স্বীকৃতি পায়। সেই সময়ের তৎকালীন পৌর প্রধানের বাড়ি গিয়ে যোগাযোগ করেছি। সেইসময় যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের সাথে এবং প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতর সাথেও যোগাযোগ করেছি। তাদেরকে বলেছি সেসময়ের যদি কোন নথি থাকে আমাকে দিন।আমি পৌরসভার দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় সরোবর সংক্রান্ত ফাইল খুঁজে পাচ্ছিনা।জাতীয় সরোবরের তকমা আছে অথচ জাতীয় সরবোর নয়।স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি কেমন লাগে।সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট থেকে যাতে ফান্ড আনতে পারি,তার জন্য তো ডকুমেন্ট লাগবে।সেটা তো থাকা উচিত।জাতীয় সরোবর হলে যে সমস্ত রেস্ট্রিক্টেড বিষয়গুলি রয়েছে সেটাও হওয়া উচিত।আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই ফাইল খুঁজে পাচ্ছিনা। কোন রাজনৈতিক বিতর্কে না গিয়ে নবেন্দু মাহালি সরাসরি বলেন।আমি পুরুলিয়ার ভূমি পুত্র।সাহেব বাঁধের জল খেয়ে আমি বড় হয়েছি।সুতরাং সাহেব বাঁধ বাঁচানো আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।এটি পুরুলিয়ার প্রাণকেন্দ্র।সাহেব বাঁধের ওপর বহু মানুষ নির্ভরশীল।সেই জাতীয় সরোবরের আমি শুধু ফলক দেখতে পাই।তা ছাড়া কিছু নেই।'

এদিকে পৌরসভা নির্বাচনের আগেই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে মাঠে নামছে বিজেপি শিবির। বিজেপির পুরুলিয়া শহর  বিজেপির দক্ষিণ মন্ডলের  সভাপতি সত্যজিৎ অধিকারী জানান,' এটা পুনরায় প্রমাণ হল এটা চোর ডাকাতের দল।এখানে চুরি ছাড়া আর কিছু হয়না। চোরের বৈশিষ্ট্য চুরি করে প্রমাণ লোপাট করে দেওয়া এখানে তাই হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি জানাই। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসে।ওদের নেতারাই পুরুলিয়া সামলায় আর লুটেপুটে খায়।পুরুলিয়ার সঙ্গে সাহেব বাঁধের সেন্টিমেন্ট জড়িয়ে আছে।ভারতীয় জনতা পার্টি এই ইস্যু নিয়ে জোরদার আন্দোলনে নামবে।'

আরও পড়ুন, Dilip Ghosh: 'গোয়ার মানুষকে কী ভেবেছেন উনি', মমতার 'গৃহলক্ষ্মী' প্রস্তাব নিয়ে বিস্ফোরক দিলীপ ঘোষ

কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত তৎকালীন পুরুলিয়া পৌর বোর্ডের চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল তথা বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন কাউন্সিলার বিভাস রঞ্জন দাস বলেন, 'সেই সময়  কংগ্রেসের আমি চেয়ারম্যান কাউন্সিল ছিলাম। চেয়ারম্যান ছিলেন সৈয়দ শাকিল আহমেদ।সাহেব বাঁধকে ন্যাশনাল  লেক ঘোষণা করার জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যে মৌ স্বাক্ষর হয়েছিল সেই স্বাক্ষর আমিই করেছিলাম। আর এটা দুর্ভাগ্যজনক,যে ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এটা ন্যাশনাল প্রপার্টি । এটা যদি অবজ্ঞা, অবহেলা করা হয়, যারা বর্তমানে পৌরসভায় রয়েছে তাদের ব্যর্থতা।আমি আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। ফাইল যাতে খুঁজে পাওয়া যায় তার জন্য অবশ্যই আমি পৌর প্রশাসককে বলবো।'

প্রাক্তন বিধায়ক তথা পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো জানান, 'ফাইল খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ এতে প্রচুর পয়সা তছনছ হয়েছে।ওই ফাইল কোনদিনও পাওয়া যাবে না।কারণ এটা ছিল  চুরির একটা জায়গা। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। সাহেব বাঁধ পুরুলিয়ার গর্ব। বহু কষ্টে এই কাজ করা হয়েছে। এই ফাইল উধাওয়ের  পেছনে নিশ্চয়ই কোনো দুর্নীতির গন্ধ রয়েছে বলে কটাক্ষ করেন কংগ্রেস নেতা নেপাল মাহাতো। তবে তিনি এও বলেন। বর্তমান চেয়ারম্যান উদ্যোগ নিয়ে এটা খুঁজছেন তার জন্য তাকে সাধুবাদ জানাই। পুরুলিয়ার গর্বকে উদ্ধার করার জন্য যত রকম চেষ্টা করার করুক। এবং যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করুক।' এখন পৌরসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় সরোবর ফাইল উধাও রহস্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেদিকে তাকিয়ে পুরুলিয়া শহরবাসী।