সংক্ষিপ্ত
- বাঁকুড়ার ছাতনার জিড়রা গ্রামের কালী পুজো
- পুজো ঘিরে ছড়িয়ে নানান কাহিনি
- স্বপ্নাদেশ পেলে তবেই শুরু হয় মূর্তি গড়ার কাজ
মৃৎশিল্পী স্বপ্নাদেশ পেলেই তবেই শুরু হয় মূর্তি গড়ার কাজ। বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত জিড়রা গ্রামের চারশো বছরের কালীপুজোতে এমনই নিয়ম আজও রয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, মূর্তির চক্ষুদানের সময় নিবেদন করা হয় পাঁঠার মাংস এই নিয়ম মেনেই কালী আরাধনায় মেতে ওঠেন গ্রামের মানুষ। প্রাচীন এই কালী পুজোকে ঘিরে রয়েছে এমনই নানান রীতি।
বাঁকুড়া জেলার ছাতনা ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম জিড়রা। এই গ্রামের মূল পুজো বলতে কালী পুজোকেই বোঝেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গ্রামের মাঝেই রয়েছে কালী মন্দির। যেখানে বিরাজমান মহাকালী। শোনা যায় প্রায় চারশো বছর আগে গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য বন্দিরাম বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেছিলেন এই পুজো। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্দিরামবাবু তন্ত্রসাধক ছিলেন। নির্জন জঙ্গল ঘেরা এই জায়গাতেই পঞ্চমুন্ডির আসনে তিনি কালী পুজো শুরু করেছিলেন। ছাতনার সামন্ত রাজাদের যুদ্ধে জয়লাভের জন্য শক্তি জুগিয়েছিলেন দেবী মহাকালী। তার পরই সামন্ত রাজাদের সৌজন্যে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে ধুমধাম করে কালীপুজো শুরু হয়।
আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয় যাচ্ছেন রাজ্যপাল, নেবেন ভাইফোঁটাও
আরও পড়ুন- শুধু কালী নয়, কালী ঘাটের মা পূজিত হন লক্ষী রূপেও
কালী পুজোর দেখাশোনা করার জন্য গ্রামের ক্ষত্রিয়দের দায়িত্ব দেন সামন্ত রাজারা। আর পুজো, অর্চনা করার জন্য বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর থেকেই প্রাচীন নিয়ম মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে কালী পুজো পালিত হচ্ছে এই গ্রামে। শিকলের বাঁধন দিয়ে রাখা হয় কালীকে। এই রীতি আজও অব্যাহত। গ্রামবাসীদের কথায়, একবার নাকি পুজোর সময় নিজের দেবী মূর্তি ধারণ করে মন্দির ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আরাধ্য়া দেবী। তার পর থেকেই ভক্তি ও স্নেহের বাঁধনে মাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
কালিকা পুরাণত্ত্ব তন্ত্র মতে পুজো হয় এখানে। মৃৎশিল্পীর পরিবারের সদস্যরা আজও দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে মূর্তি গড়ার কাজ শুরু করেন। চক্ষুদানের সময় পাঁঠা বলি দিয়ে সেই পাঁঠার মাংস নিবেদন করা হয় মা কালীকে। এমনই নানান কাহিনী জড়িয়ে রয়েছে এই কালি পুজোকে ঘিরে। আজও সেবায়েতরা সামন্ত রাজাদের প্রাচীন নিয়ম মেনেই ছাতনা এলাকায় বারোটি পরগণায় মা কালীর প্রসাদ বিতরণ করেন। পুজো দেখতে ভিড় জমান গ্রামের বাইরে থেকেও ভিড় জমান অগণিত ভক্ত। অনেক ভক্ত মন্দিরে মা কালীর স্বপ্নাদেশের আশায় ধর্নায় বসেন। অনেকে মনস্কামনা পুরণের আশায় কালী মন্দিরে নানান আচার নিয়ম পালন করেন।