Suvendu Adhikari-Dilip Ghosh: দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে দেখা করে দলে কোণঠাসা দিলীপ ঘোষ। এবার এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।
Suvendu Adhikari Criticized Dilip Ghosh: মুর্শিদাবাদে হিংসা পরিস্থিতির মধ্যেই বিয়ে। তারপর দিঘা জগন্নাথ মন্দির (Digha Jagannath Temple) উদ্বোধনের দিন সস্ত্রীক সেখানে হাজির হওয়া। শুধু তাই নয়, মালা পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) পাশে বসে কথা বলা। সবমিলিয়ে গত কয়েকদিন ধরে রাজ্য রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত নাম বিজেপি-র (BJP) প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশ তাঁকে আক্রমণ করছেন। এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার বাকচায় নিহত বিজেপি কর্মী বিজয় ভুঁইয়ার স্মরণসভায় যোগ দেন শুভেন্দু। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে নাম না করে দিলীপকে কটাক্ষ করেছেন তিনি। শুভেন্দু বলেছেন, ‘আমাদের লড়াই ভাইপোকে জেলে পাঠানো এবং পিসিকে প্রাক্তন করার লক্ষ্যে। আজ বাকচায় বসে আছি বিজয় ভুঁইয়ার আত্মবলিদান দিবসে। ভয়াবহ ২ রা মে-র চতুর্থ বর্ষপূর্তি। আমরা ব্যক্তিগত ইচ্ছা, আনন্দ-ফূর্তি করতে পারি না, যতক্ষণ না ২৫০ টি আত্মবলিদানকারী পরিবারের ঋণ শোধ করছি।’ এর আগে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘বিরোধী দলনেতা হিসেবে সরকারের ব্যর্থতা, ত্রুটি নিয়ে বলব। কিন্তু কোনও ব্যক্তি কী করবেন, কী বলবেন, কী বলবেন না, সেসব উত্তর আমি দেব না।’
দলে সমালোচনার মুখে দিলীপ
অক্ষয় তৃতীয়ার (Akshay Tritiya) দিন দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন হয়। বিরোধী দলনেতা হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) হিংসার কথা উল্লেখ করে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে থাকতে অস্বীকার করেন। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরে হাজির হন দিলীপ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী রিঙ্কু। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ভাইরাল। এরপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশ। কর্মীদের একাংশ সরাসরি 'দালাল দিলীপ' বলে আক্রমণ করেন সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দিলীপকে আক্রমণ করেন আইনজীবী-নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। তিনি বলে দেন, দিলীপকে নেতা হিসেবে আর মানছেন না। বিজেপি নেত্রী কেয়া ঘোষ লেখেন, 'সব সৌজন্যের ছবি ভালো লাগে না।' বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দিলীপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। এরই মধ্যে শুভেন্দুও মুখ খুললেন। তিনিও দিলীপকে আক্রমণ করেছেন। চলতি মাসেই দিলীপ সস্ত্রীক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন বলে জল্পনা চলছে। ফলে তাঁকে নিয়ে বিজেপি-তে অস্বস্তি বাড়ছে।
দিলীপ-শুভেন্দু দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে
রাজ্য রাজনীতিতে অনেকবার শোনা গিয়েছে, বিজেপি-তে শুভেন্দু ও দিলীপ দুই মেরুতে। যদিও কয়েকবার এই দুই নেতাকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। কিছুদিন আগেই বিধানসভায় গিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করেন দিলীপ। তবে তাঁদের সম্পর্কের চোরাস্রোত ছিলই। যা এবার প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেন শুভেন্দু। দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব মেদিনীপুর শুভেন্দুর গড় হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর আবার দিলীপের গড় হিসেবে পরিচিত। এই দুই জেলার ক্ষমতা ধরে রাখা নিয়ে দিলীপ ও শুভেন্দুর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় বলে শোনা গিয়েছে। গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর ছেড়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হন দিলীপ। তিনি হেরে যান। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র আসন সংখ্যা কমে যায়। তা সত্ত্বেও রাজ্য বিজেপি-তে শুভেন্দুর প্রভাব বা গুরুত্ব কমেনি। অন্যদিকে, রাজ্য বিজেপি-তে কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন দিলীপ। এরই মধ্যে তিনি বিয়ে করেছেন। তাঁর বিয়ে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক মিম দেখা গিয়েছে। কিন্তু দিলীপ নিজের মেজাজেই আছেন। তিনি সমালোচকদের পাল্টা আক্রমণ করেছেন। সবমিলিয়ে রাজ্য বিজেপি-তে দিলীপকে ঘিরে চর্চা তুঙ্গে। পরিস্থিতি যা, তাতে দিলীপের দল ছাড়া কার্যত সময়ের অপেক্ষা। এই নেতা বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমা পর্ব মেটানোর আগেই রাজনৈতিক জীবনে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁর দলবদল নিয়ে এখন রাজ্য রাজনীতিতে প্রবল জল্পনা চলছে। বিজেপি নেতারা পরিস্থিতির উপর নজর রেখে চলেছেন।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।

