সংক্ষিপ্ত

সপ্তাহের প্রথম দিন, শুরু হল এক বিভীষিকাময় দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। সোমবার সকালে, ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা। ফের একবার রাজ্যের বুকে রেল দুর্ঘটনায় আহত হলেন একাধিক যাত্রী এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে ৯। আর এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উঠছে নানা প্রশ্ন।

সপ্তাহের প্রথম দিন, শুরু হল এক বিভীষিকাময় দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। সোমবার সকালে, ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা। ফের একবার রাজ্যের বুকে রেল দুর্ঘটনায় আহত হলেন একাধিক যাত্রী এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে ৯। আর এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উঠছে নানা প্রশ্ন।

আবারও উত্তরবঙ্গের বুকে ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনা। শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে (Kanchanjunga express) পিছন থেকে ধাক্কা মালগাড়ির। সোমবার সকালে, রাঙাপানি স্টেশন পার করার পরই ফাঁসিদেওয়ায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। এখনও অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, ৯ জন এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ৪১ জন আহত। একই লাইনে দুটি ট্রেন চলে আসার ফলেই এই দুর্ঘটনা। একটি মালগাড়ি পিছন থেকে এসে ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে। কার্যত, মালগাড়ির ইঞ্জিনের ধাক্কায় কাঞ্চনজঙ্ঘার বগি উঠে যায় ওপরে। তার নিচ দিয়ে সজোরে ঢুকে যায় মালগাড়ির ইঞ্জিন।

তার ফলেই এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা (Kanchanjunga Express Accident)। কিন্তু বারবার কেন ঘটছে এমন? কয়েকমাস আগেই করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার (Coromandel Express Accident) মতো ভয়ঙ্কর স্মৃতি কাটতে না কাটতেই আবারও একবার ট্রেন দুর্ঘটনা। ইতিমধ্যেই আহত যাত্রীদের চিকিৎসা চলছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে। রক্তের প্রয়োজনে এগিয়ে এসেছে নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও।

এদিকে এই ঘটনার জেরে একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। এনডিআরএফ (NDRF), পুলিশ (Police) এবং প্রশাসন উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। যতই সময় এগোচ্ছে, ততই এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানারকম তথ্য সামনে আসছে। যদিও কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এখনও কোনও সরকারি মন্তব্য করেনি রেল। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnaw) জানিয়েছেন, “উদ্ধারকার্যই এখন আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। বাকি পুরোটা তদন্তসাপেক্ষ। তদন্ত শেষ হলেই সবটা জানা যাবে।”

তবে তার আগেই এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাধিক তথ্য সামনে উঠে আসছে। রেলকর্মীদের একাংশের দাবি, মালগাড়ির চালক সম্ভবত সিগন্যাল মানেননি। আর সেই কারণেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের সঙ্গে একই লাইনে চলে আসে মালগাড়িটি। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থায় (Automatic Signalling System) তা কি করে সম্ভব? তাহলে কি যান্ত্রিক ত্রুটি? রেলের ‘সুরক্ষাকবচ’ নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

রেলের (Indian Railways) অপর একটি সূত্র আবার দাবি করছে, “সোমবার ভোর ৫.৩০ মিনিট থেকে রাঙাপানি এবং আলুয়াবাড়ি স্টেশনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়েছিল। এই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বন্ধ থাকার কারণে, সেইসময় ওই অংশে খুবই ধীর গতিতে ট্রেন চলাচল করছিল। এমনকি, কখনও আবার ট্রেন দাঁড়ও করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।

সোমবার, সকাল ৮টা ২৭ মিনিট নাগাদ শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস রাঙাপানি স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার পরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আর সেই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা বন্ধ থাকার জন্যই ধীর গতিতে চলছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। সেইসঙ্গে, ওই ট্রেনের জন্য ছিল কাগজে লেখা বিশেষ ছাড়পত্র। রেলের পরিভাষায় যাকে বলা হয়, ‘পেপার লাইন ক্লিয়ার টিকিট’ বা পিএলসিটি (Paper Line Clear Ticket)।

সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে, রাঙাপানি স্টেশনের স্টেশন মাস্টার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে ‘টিএ ৯১২’ ফর্ম দেন। সেই নির্দেশের ওপর ভিত্তি করেই চালক ট্রেনটিকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এই ‘টিএ ৯১২’ আসলে কী? যদি স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা অকেজো হয়ে যায়, তাহলে ওই নির্দেশের ভিত্তিতেই ট্রেন চালিয়ে থাকেন চালকরা। এমনকি এই নিয়মানুযায়ী, সিগন্যাল লাল থাকলেও নিয়ন্ত্রিত গতিতে ট্রেন চালাতে পারবেন চালক।

সেই সূত্র আরও দাবি করেছে, “সকাল ৮টা ৪২ মিনিট নাগাদ রাঙাপানি স্টেশন থেকে ছাড়ে ওই মালগাড়িটি। তারপরই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে ট্রেনটি। পুরো খেলনাগাড়ির মতো মালগাড়ির উপর উঠে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনের দিকের একাধিক বগি। কার্যত, মালগাড়ির ইঞ্জিন ওই বগিগুলির নিচ দিয়ে সজোরে ঢুকে যায়। সেইসঙ্গে, লাইচ্যুত হয় মালগাড়িটিও।

কিন্তু প্রশ্ন অন্য জায়গায়। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে যখন ম্যানুয়াল মেমো দেওয়া হল, তখন সেক্ষেত্রে মালগাড়ি কী ভাবে এতটা এগিয়ে গেল? তাকেও কী তাহলে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল? রেলের (Indian Railways) একটি সূত্রের মতে, “ধরা যাক দুটি ট্রেনের চালককেই ম্যানুয়াল মেমো দেওয়া হয়েছিল। নিয়মানুযায়ী, ওই ছাড়পত্র চালকের কাছে থাকলে তিনি ধীর গতিতে ট্রেন চালাবেন। শুধু তাই নয়, ট্রেনের গতি যেন কখনই ঘণ্টা প্রতি ১০ কিলোমিটারের বেশি না ওঠে। তাহলে কি করে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং মালগাড়িটির মধ্যে ১৫ মিনিটের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও দুটি ট্রেন একই লাইনে এত কাছাকাছি চলে এল?

এই বিষয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রেলের জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে জানান, “এই বিষয়টি এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তদন্ত ছাড়া এই প্রসঙ্গে বলা সম্ভবও নয়।”

কিন্তু এই দুর্ঘটনায় যারা আহত হলেন, তারা অনেকেই এখনও ট্রমার মধ্যে আছেন। যাদের মৃত্যু হল, তাদের পরিবারের কথা ভাবলে শিউরে উঠছেন অনেকেই। অনেকেই খুব কাছ থেকে দেখলেন এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাকে। কারণ যাই থাকুক, কেন বারবার সাধারণ যাত্রীদের এই বিভীষিকাময় মুহূর্তের মধ্যে পড়তে হবে? উঠছে সেই প্রশ্নও।

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।