Special Durga Puja 2025: আর এক সপ্তাহও নেই উৎসবের মরশুম শুরুর। চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। ব্যস্ততা তুঙ্গে ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়িতেও। বিস্তারিত জানতে পড়ুন সম্পূর্ণ প্রতিবেদন…

Special Durga Puja 2025: ষষ্ঠীর সকাল থেকে ক্যানিং ভট্টাচার্য বাড়ির পরিবারের সদস্যরা মেতে ওঠেন উমার আরাধনায়। আর পাঁচটা বনেদি বাড়ির তুলনায় ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোর বিশেষত্ব সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ, এখানে দেবী দুর্গা পুজিত হন পোড়া মুখ নিয়ে। দেবীর সারা শরীরও ঝলসানো তাম্রবর্ণের। এছাড়াও এখানে দেবী দুর্গার ডানদিকের পরিবর্তে বাঁদিকে থাকেন গণেশ। 

পোড়ামুখো দেবী দুর্গা পুজোর ইতিহাস:- 

পূর্ববঙ্গের ঢাকার বিক্রমপুর বাইনখাঁড়া গ্রামে ৪৩৮ বছর আগে শুরু হয়েছিল এই পুজো। এ বছর পুজো ৪৪১ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গাপুজো। পুজোর জৌলুস কমলেও, এখনো তার বনেদিয়ানাতে এতটুকু ঘাটতি পড়েনি।প্রায় ৪৪১ বছর আগে বাংলাদেশে এই ভট্টাচার্যদের বংশধররা শুরু করেছিলেন মা দুর্গার পুজো। মূলত জমিদার বাড়ির শোভা ও আভিজাত্য প্রদর্শনের জন্য শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গার আরাধনা। আর পাঁচটা জমিদার বাড়ির মতই সাবেকি মতে পুজো শুরু হয়েছিল সেখানে। কিন্তু পুজো শুরুর প্রায় শতাধিক বছর পর এই ভট্টাচার্য বাড়িতে ঘটে দুর্ঘটনা। আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় দুর্গা দালান। পুড়ে যায় মাতৃ মূর্তি। সেই থেকেই এই পোড়া মুখেই মা দুর্গা পূজিত হন ভট্টাচার্য পরিবারে।

পরিবারের সদস্যদের কথায়, বাড়িতে দেবী দুর্গার মন্দিরের পাশে ছিল দেবী মনসার মন্দির। পুরোহিত মহাশয় মনসা পুজো করে দুর্গা পুজো করতে এলে একটি কাক মনসা মন্দিরের ঘিয়ের প্রদীপের পলতে নিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় দুর্গা মন্দিরের শনের চালে সেটি পড়ে যায়। আর তাতেই পুড়ে যায় দুর্গা মন্দির ও প্রতিমা। 

এরপর এই বাড়ির মানুষজন ভাবেন দেবী দুর্গা বোধহয় তাঁদের পুজো আর চাইছেন না। সেই মোতাবেক পুজো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। এমন অবস্থায় একদিন রাতে স্বপ্নাদেশ পান এই পরিবারের তৎকালীন গৃহকর্তা রামকান্ত ভট্টাচার্য। দেবী দুর্গা স্বপ্নাদেশ দেন যে তাঁর পুজো যেন কোন ভাবেই বন্ধ না হয়, তাঁর ঐ পোড়া রূপেই যেন তাঁকে পুজো করা হয়। এমন স্বপ্ন পাওয়ার পর থেকেই আজও দেবীর সেই পোড়া মুখ ও ঝলসানো শরীর এর মূর্তিতেই বছরের পর বছর চলে আসছে দুর্গাপুজো।

এছাড়াও এই বাড়ির দুর্গা প্রতিমার আরও একটা বিশেষত্ত্ব রয়েছে। এখানে গণেশ দেবীর ডান পাশের পরিবর্তে বাম পাশে থাকেন। পরিবারের সদস্য পীযূষ ভট্টাচার্য বলেন, “ পুরানে কথিত আছে গণেশ বড় না কার্ত্তিক বড় এ নিয়ে মা দুর্গার দুই সন্তানের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়েছিল বিশ্ব ব্রহ্মান্ড কে আগে ঘুরে আসতে পারে তা নিয়ে। কার্ত্তিক নিজের বাহন ময়ূরে করে তৎক্ষণাৎ রওনা দেয়। কিন্তু গনেশ নিজের মাকেই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড মনে করে মাকে প্রদক্ষিন করে মায়ের বাম দিকে স্থান নেয়। আমরাও সেই কারনে আমাদের পুজোতে গনেশ ও কার্তিকের জায়গা অদল বদল করেছি। বছরের পর বছর এই রীতি মেনেই পুজো হয়।”

আগে মহিষ বলি হলেও বর্তমানে ফল বলি হয়। জন্মাষ্টমী তিথিতে কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে এই বাড়ির দুর্গা পুজোর শুরু। আগে পুজোতে জাঁকজমকের কোনও কমতি ছিল না। তবে বর্তমান বংশধরেরা কাজের তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ায় ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির ফলে জাঁকজমকে কিছুটা হলেও ভাঁটা পড়েছে, কিন্তু পুজোর সমস্ত আচার ও রীতি মেনেই আজও পুজো হয় এই ভট্টাচার্য বাড়িতে। 

বাংলাদেশ থেকে শুরু করে আজ অবধি একই কাঠামোয় পুজো চলছে ভট্টাচার্য বাড়িতে। শুধু ক্যানিং এলাকার নয়, আশপাশের এলাকা সহ দূর দুরান্ত থেকে এই বাড়ির প্রতিমা দর্শন করতে বহু মানুষ আসেন এখানে। এই পরিবারের নতুন প্রজন্ম পল্লবী ভট্টাচার্য বলেন, “ পুজোর কটাদিন বাড়িতেই আনন্দ করে কেটে যায়। সকলে আসেন তাঁদের সাথেই আনন্দ করি, মন্ডপের কাজ, পুজোর জোগাড় যন্ত্রের কাজে হাত লাগাই। কিভাবে যে চারটে দিন কেটে যায় বুঝতেই পারি না। তাই দশমীতে মায়ের বিসর্জনের পরই বাইরের ঠাকুর দেখতে যাওয়া হয়।”

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।