Special Durga Puja: উৎসবের মরশুম শুরুর আগেই শুরু এখানে দুর্গাপুজো। এখনও চলে আসছে সেই রীতি। কোথায় রয়েছে এই নিয়ম? বিশদে জানতে পড়ুন সম্পূর্ণ প্রতিবেদন…

Special Durga Puja: আজ কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকে শুরু হল পুজো। এখানে লণ্ঠনের আলোয় বিসর্জন দেবীর। সম্প্রীতির সুরে বাধা চাঁচল রাজবাড়ির পুজো। সতীঘাটে ঘট ভরে আজ কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকে শুরু হলো মালদহের চাঁচলের রাজ ঠাকুর বাড়ির সিংহ বাহিনীর পুজো। 

টানা ১৪ দিন ধরে চলবে এই পুজো। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগে, একসময় যা রাজার পুজো ছিল এখন তা হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের পুজো। রাজবাড়ির একটি অংশে তৈরি হয়েছে মহকুমা আদালত। আর একটি অংশে এখন কলেজ। কিন্তু ঐতিহ্যের গরিমায় আজও উজ্জ্বল সাড়ে তিনশ বছরেরও বেশি প্রাচীন এই রাজবাড়ির পুজো। এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেখানো লণ্ঠনের আলোয় দেবীর বিসর্জন ঘটে।

সতেরো শতকের শেষভাগ। সেই সময় উত্তর মালদহের বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায়চৌধুরি। শুধু বাংলা নয়, বিহারের কিছু অংশও তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। দোর্দণ্ডপ্রতাপ কিন্তু প্রজাদরদী এবং ধর্মপ্রাণ হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল পূর্ব ভারত জুড়ে। 

কথিত আছে, একবার রাজা স্বপ্নাদেশ পান দেবী চণ্ডীর। সেই স্বপ্নাদেশে মহানন্দার ঘাটে স্নান করতে যান তিনি। সেই সময় তাঁর হাতে চতুর্ভুজা অষ্টধাতুনির্মিত মূর্তি উঠে আসে। দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তি সতীঘাটা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেন চাঁচলের রাজা রামচন্দ্র।

সেদিন থেকেই রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো। তবে প্রথমে মহানন্দানদীর পাড়ে মাটির ঘর ও খড়ের ছাউনি দিয়ে মন্দির তৈরি করে পুজো শুরু করা হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে তা পরিবর্তন হয়েছে। পরবর্তীতে এই বংশের অন্যতম রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির নির্দেশে তৎকালীন ম্যানেজার সতীরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে সেখানে পাকা দুর্গাদালান নির্মিত হয়। ততদিনে জায়গাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে পাহাড়পুর হয়েছে। 

প্রতিবছর এখানেই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। পাকা মন্দির নির্মাণের পর রাজা শরৎচন্দ্র দুর্গাপুজোর জন্য সেই সময় সাত হাজার টাকা বছরে বরাদ্দ করেন। প্রাচীন প্রথা মেনে এখনও সেখানে সপ্তমী তিথিতে রাজবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর চতুর্ভুজা মা চণ্ডীকে। দশমীতে তিনি ফের রাজবাড়িতে ফিরে যান। ১৭ দিন ধরে চলে এই পুজো। সময় বয়ে গিয়েছে অনেকটাই। এখন সেই রাজা নেই, রাজ্যপাটও নেই।

চাঁচল রাজবাড়িতে এখন স্থাপিত হয়েছে কলেজ, মহকুমা প্রশাসনিক ভবন, আদালত-সহ একাধিক সরকারি দপ্তর। তবে রাজবাড়ির একাংশে থাকা ঠাকুরবাড়ি এখনও আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। কথিত আছে, একসময় সতীঘাটায়, মহানন্দার পশ্চিম পাড়ে মহামারী দেখা দিয়েছিল। 

তখন দেবী সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন--গোধূলিলগ্নে বিসর্জনের সময় তাঁরা যেন মাকে আলো হাতে পথ দেখান। মাকে আলো দেখানোর পর থেকেই মহামারী দূর হয়। তখন থেকে প্রতিবছরই বিসর্জনের সময় সেখানকার অর্থাৎ মরামহানন্দার নদীর ওপারে সাহুর্গাছি এলাকার মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ লণ্ঠন নিয়ে পথ দেখান মাকে। সেই রীতি এখনও প্রচলিত।

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।