শিলমোহর পড়ল এশিয়ানেট নিউজ বাংলার খবরেই।

তবে রাজ্য কমিটি থেকে বাদ গেলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এককালের দাপুটে নেতা সুশান্ত ঘোষ। তিনি যে বাদ যেতে পারেন, সেই গুঞ্জন অবশ্য অনেকদিন ধরেই চলছিল। আর সম্মেলন শেষে সেই আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হল। তবে তিনি একা নন। হুগলির ডানকুনিতে, সিপিএম-এর ২৭ তম রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে নতুন ৮০ জনের যে রাজ্য কমিটি তৈরি হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, বাদ গেছেন অনেক সিনিয়র বাম নেতৃত্বই।

প্রসঙ্গত, এর আগের সম্মেলন মঞ্চ থেকে সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রাক্তন বাম সাংসদ মহম্মদ সেলিম। তিনি আবার ছিলেন একসময়ের দাপুটে যুব নেতা। কিন্তু এবার কী হবে? তা নিয়ে আগে থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল। বয়স বাড়লেও, দলের সব স্তরেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আলাদা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। শোনা যায়, তিনি নেতা হয়েও সহজে মিশে যেতে পারেন মানুষের মাঝে।

খাতায় কলমে বিধানসভায় কোনও প্রতিনিধি না থাকলেও, বামেরা যে লড়াই থেকে সরে আসেনি, তার প্রমাণ বারবার মিলেছে। আর সেক্ষেত্রে একেবারে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে আগ্রাসী সেলিমকে (Md Salim)। সবথেকে বড় বিষয়, সিপিএম কর্মী এবং সমর্থকদের উদ্বুদ্ধ করতে একাধিকবার তাঁকে বাড়তি উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই, দলের কঠিন সময়ে তাঁর হাতেই ব্যাটন থাকতে পারে বলে শোনা যাচ্ছিল। সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি এশিয়ানেট নিউজ বাংলা সেই কথা জানায় দর্শকদের। আর মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি সেই খবরেই কার্যত শিলমোহর পড়ল। ২৭ তম রাজ্য সম্মেলন শেষে, সর্বসম্মতিক্রমে সিপিএম রাজ্য কমিটির সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হলেন মহম্মদ সেলিম।

অন্যদিকে, নতুন রাজ্য কমিটিতে স্থান পেয়েছেন মোট ১৪ জন মহিলা নেত্রী। কিন্তু অনেকে বলছেন, কিছুটা বাধ্য হয়েই সুশান্ত ঘোষের মতো দাপুটে নেতাকে বাদ দিতে হল। আসলে কয়েকমাস আগে একজন মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে ছুটিতে পাঠায় সিপিএম। সেইসময় সুশান্ত ঘোষ পশ্চিম মেদিনীপুর পার্টির জেলা সম্পাদক। কিন্তু রাজ্য কমিটিটে অবশ্য থেকে গেছিলেন।

আসলে বামেদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কাউকে বাদ দিতে গেলে সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এক্ষেত্রে রাজ্য সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। আর এবার রাজ্য সম্মেলন শেষে তাঁকে সরিয়ে দিল পার্টি। এমনকি, কয়েকদিন আগে যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন হল, সেখান থেকে গঠিত নতুন জেলা কমিটিতেও রাখা হয়নি সুশান্ত ঘোষকে।

উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে তিনি বাম রাজনীতিতে বেশ জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন। পরবর্তী সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসেন ক্যাবিনেট মিনিস্টার সুশান্ত। তাঁর লিডারশিপ কোয়ালিটি এবং দাপট নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবুও বাদ যেতে হল তাঁকে।

সবমিলিয়ে, এবার ১১ জন নতুন মুখ এসেছেন সিপিএম-এর রাজ্য কমিটিতে। বয়সজনিত কারণে বাদ পড়েছেন জীবেশ সরকার, অমিয় পাত্র এবং রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য। তাৎপর্যপূর্ণভাবে হুগলির তরুণ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা তীর্থঙ্কর রায় জায়গা পেয়েছেন রাজ্য কমিটিতে। সেইসঙ্গে, দলের মুখপত্রকে ডিজিটাল এবং সময়োপযোগী করে তোলার জন্য শান্তনু দে-কে নেওয়া হল নবগঠিত রাজ্য কমিটিতে।

কিন্তু যুবনেতা কলতান দাশগুপ্তকে রাজ্য কমিটিতে ঠাঁই দিল না সিপিএম। শুধু তাই নয়, সৃজন ভট্টাচার্য, প্রতিকুর রহমান, ময়ূখ বিশ্বাস, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এবং ধ্রুবজ্যোতি সাহা থাকলেও নতুন আর কোনও ছাত্র-যুব মুখকে জায়গা দেওয়া হল না সিপিএম রাজ্য কমিটিতে।

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।