Tea Garden Workers: একের পর এক চা বাগান বন্ধে অথৈ জলে পড়েছেন কর্মীরা। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও উঠেছে উদাসীনতার অভিযোগ।
Tea Garden Workers: চা বাগান বন্ধ–খোলা নিয়ে রাজনীতি, বিপাকে ছয় লক্ষেরও বেশি শ্রমিক। সারা রাজ্যে প্রায় ৫০ হাজার চা বাগান; দার্জিলিং–ডুয়ার্সে ২২টি বন্ধ বাগান, ক্ষুদ্র চা শিল্পে সংকট বাড়ছে। চা শিল্প নিয়ে ফের সরগরম রাজ্যরাজনীতি। একদিকে বন্ধ বাগানের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ক্ষুদ্র চা বাগান মালিকরাও দিশেহারা। সবমিলিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের প্রায় ছয় লক্ষেরও বেশি চা শ্রমিক।
এক বছরে বন্ধ কত চা-বাগান?
মোট বাগানের পরিসংখ্যান সারা ভারত ক্ষুদ্র চা শিল্প সমিতির তথ্যানুসারে, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষুদ্র চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এর পাশাপাশি চা বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী নিবন্ধিত শেড বাগান রয়েছে ৩৫৯টি। এই শেড বাগানের মধ্যে ২৫টি বাগান বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে, বৃহৎ চা বাগানগুলির মধ্যে দার্জিলিং জেলায় ১৪টি,ও ডুয়ার্স অঞ্চলে ৮টি,
মোট ২২টি বাগান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ অবস্থায় আছে। সব মিলিয়ে রাজ্যে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় চা বাগানের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫০,৩৫৯টির বেশি, যার মধ্যে প্রায় ৪৭,০০০-এর বেশি সক্রিয় এবং প্রায় ২৫–৩০টি বাগান সম্পূর্ণ বন্ধ।
পশ্চিমবঙ্গে চা শিল্পে সরাসরি যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ ১০ হাজার। এর মধ্যে — দার্জিলিং: ১,২৫,০০০। ডুয়ার্স: ৩,৬৫,০০০। তরাই অঞ্চল: ১,২০,০০০। চা শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, বাগান বন্ধ থাকায় বহু শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। বেতন বন্ধ, রেশন অনিশ্চিত এবং চিকিৎসা সুবিধাও প্রায় নেই বললেই চলে।
বাগান বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। চা শ্রমিক বলেন,“বাগান বন্ধ থাকায় আমাদের দিন চলা দায়। বাধ্য হয়ে শিশুদের বাইরে কাজে পাঠাতে হচ্ছে। পড়াশোনার বয়সে তারা কাজ করছে, অনেকেই পাচার হয়ে যাচ্ছে। ভয় লাগে, কিন্তু উপায় নেই। পেটের তাগিদে পাঠাতে হয়।”শ্রমিকদের বক্তব্য, দ্রুত বাগানগুলো পুনরায় চালু করা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
পাটকাটা অঞ্চলের প্রাক্তন প্রধান প্রধান হেমব্রম বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য যদি একসঙ্গে বসে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে এই চা শ্রমিকদের না খেয়ে মরতে হবে। সরকারি অনুষ্ঠান কমিয়ে সেই টাকা যদি বাগানগুলোর উন্নয়নে দেওয়া যায়, তাহলে শ্রমিকরা বাঁচবে।” “বাগানের শিশুদের ভবিষ্যৎ প্রায় শেষ। যদি এখনই উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে বাকি যা আছে সেটাও শেষ হয়ে যাবে।
বিজেপি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে বলেছে, এলেই বাগান খোলে, চলে গেলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের সামনে ভালো সাজার নাটক চলছে।”
অন্যদিকে শাসকদল দাবি করছে, বাগানগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে তারা একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু কেন্দ্র সাহায্য করছে না।
পশ্চিমবঙ্গে মোট চা বাগান ≈ ৫০,০০০+
শেড বাগান (নিবন্ধিত) ৩৫৯
শেড বাগান বন্ধ ২৫
দার্জিলিংয়ে বন্ধ ১৪
ডুয়ার্সে বন্ধ ৮
মোট বন্ধ বাগান (আনুমানিক) ২২–৩০
মোট শ্রমিক ৬,১০,০০০
— দার্জিলিং ১,২৫,০০০
— ডুয়ার্স ৩,৬৫,০০০
— তরাই ১,২০,০০০
চা শিল্প আজও উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কিন্তু একের পর এক বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়া, উৎপাদন কমে যাওয়া ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত রাজ্য–কেন্দ্র সমন্বয়ে একটি পুনরুজ্জীবন প্রকল্প না আনলে, চা বাগানের সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিকের জীবন আরও সংকটে পড়বে।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।


