বাংলা-সহ দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত রাজ্যে শুরু হয়েছে এসআইআর অর্থাৎ ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনের প্রক্রিয়া৷ বর্তমান ভোটার তালিকার সংশোধনে ফলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনের কি হবে, তা নিয়ে রীতিমত রাতের ঘুম উড়েছে তাঁদের।
রাজ্যে শুরু হয়েছে এসআইআর (SIR) অর্থাৎ ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন৷ এর ফলে এবার শঙ্কিত হয়ে পড়েছে রাজ্যের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজন। এই নিয়ে সম্প্রতি রাজ্যের গরিমা গৃহের ডিরেক্টর ও ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট রঞ্জিতা সিনহা মিনিস্ট্রি অফ সোশাল জাস্টিস অ্যান্ড এম্পাওয়ারমেন্ট অর্থাৎ সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।
বাংলা-সহ দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত রাজ্যে শুরু হয়েছে এসআইআর অর্থাৎ ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনের প্রক্রিয়া৷ বর্তমান ভোটার তালিকার সংশোধনে ফলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনের কি হবে, তা নিয়ে রীতিমত রাতের ঘুম উড়েছে তাঁদের। বিশেষ করে যারা Gender Reassignment Surgery (মহিলা থেকে পুরুষ বা পুরুষ থেকে মহিলা হওয়ার জন্য অস্ত্রোপচার) করিয়েছেন, তাঁরা ভোটার তালিকায় নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না, সেই নিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন।
সম্রাজ্ঞী দত্ত নামে তৃতীয় লিঙ্গের এক ব্যক্তি জানান, ২০০২ সালে ভোট দিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তখন তিনি পুরুষ অর্থাৎ জন্মের পর তাঁর যে লিঙ্ক ও নাম ছিল, সেই ভোটার কার্ড দেখিয়ে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর তিনি অপারেশনের মাধ্যমে নিজের লিঙ্গ পরির্বতন করিয়েছেন। নতুন নাম ও নতুন ছবি দিয়ে পুনরায় ভোটার কার্ড করিয়েছেন। আর এই নয়া ভোটার কার্ড দেখিয়েই তিনি পরবর্তীতে ভোট দিয়ে আসছেন। তাই এবার এসআইআরের সময় তাঁর কোনও সমস্যা হবে না তো ?
কল্পনা নস্কর নামে তৃতীয় লিঙ্গের আর এক ব্যক্তি জানান, যেহেতু বর্তমানে তাঁর পরিবারের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ নেই তাই, নয়া নামে পুনরায় ভোটার কার্ড করাবার সময় বাবা বা মায়ের স্থানে তিনি নিজের 'গুরুমা'র নাম বসিয়েছিলেন। সে ব্যাপারে কি হবে ? প্রশ্ন তোলেন তিনি। অঞ্জলি মণ্ডল নামে আর এক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তির বক্তব্য, বুথ লেভেল অফিসাররা যখন এনুমেরাশন ফর্ম (Enumeration Form) পূরণ করাতে তাঁদের বাড়িতে যাবেন, তখন তাঁরা ঠিক কীভাবে ফর্মটি পূরণ করবেন সেই নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন। আবার অনেকের এফিডেভিটও নেই। রাজ্যের গরিমাগৃহের ডিরেক্টর রঞ্জিচা সিনহা এই সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যে ১১টি নথির কথা বলেছেন সেখানে ট্রান্সজেন্ডাদের কোনও উল্লেখ নেই। তাদের আইডেন্টিটি কার্ডের উল্লেখ নেই। তাই তৃতীয় লিঙ্গের সমাজের মানুষদের মধ্যে একটি বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে বর্তমানে অনেক ট্রান্সজেন্ডারদের ছবির মিল নেই, নামেরও পরিবর্তন রয়েছে।
যদিও রাজ্য নির্বাচনী দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এসআইআর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়টি বিশএষভাবে গ্রাহ্য করা হবে। ফর্ম পুরণের সময় এই অংশে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার ভিত্তিতে পুরণ করতে হচ্ছে সেখানে ২০০২ সালে তাদের ঠিক যে নামে ভোটার কার্ড ছিল সেই নাম দিয়ে পুরণ করতে হবে। যেখানে বর্তমানের তথ্য দিতে বলা হয়েছে সেখানে বর্তমান তথ্য দিতে হবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, শুনানির সময় তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়টি বিশেষভাবে শোনা হবে।
