রাজা বলির ১৪ জন সাঙ্গপাঙ্গ? নাকি, মা কালীর ১৪ জন প্রেতসঙ্গী? কাদের জন্য ভূত-চতুর্দশীতে প্রদীপ জ্বালানো বাধ্যতামূলক?
দীপান্বিতা অমাবস্যার আগের দিন যেন ‘তমসা’ অর্থাৎ অন্ধকারকে দূর করার জন্য পালিত হয় 'ভূত চতুর্দশী' (Bhoot Chaturdashi) পালনে। মৃত প্রেতাত্মারা এই রাতেই আবার মর্তে ফিরে আসে বলে বিশ্বাস করা হয়। যদিও, ভূত চতুর্দশী সম্পর্কে পুরাণে কোনওকিছু বিস্তারিত পাওয়া যায় না। তবে, ‘ভূত চতুর্দশী’ নামটির উল্লেখ করা আছে।
-
পুরাণে উল্লিখিত, দানবরাজ বলি যখন স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল দখল করে নিয়েছিলেন, তখন তিনি নির্বিচারে হত্যালীলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই হত্যাকাণ্ড থেকে নিস্তার পাননি দেবতারাও। বলির তাণ্ডব আটকাতে দেবতাদের গুরুদেব বৃহস্পতি ভগবান বিষ্ণুকে একটি পথ বাতলে দিলেন। এক ক্ষুদ্র বামনের ছদ্মবেশে বিষ্ণু তখন রাজা বলির কাছে ভিক্ষা চাইলেন। রাজা বলি তাঁকে যা-ইচ্ছা তা-ই চাইতে আদেশ করলেন। এই অনুমতি পেয়ে বামন-রূপী বিষ্ণুদেব নিজের তিন পা সমান জমি ভিক্ষা চাইলেন রাজা বলির কাছে।
-
যদিও, দানবরাজ শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলেন এই বামন স্বয়ং দেবতা বিষ্ণু। কিন্তু, তিনি কথা দিয়ে ফেলেছিলেন যে, বামন যা চাইবেন, তিনি তা-ই দেবেন। তাই তিনি ৩ পা সমান জমি দেওয়ার শর্তে রাজি হয়ে গেলেন। প্রথমেই দুটো পা ফেলে বামন-রূপী বিষ্ণু একে একে স্বর্গ আর মর্ত্য দখল করে নিলেন। এরপর তাঁর নাভি থেকে বের হয়ে এল আরেও একটি পা, সেই পা তিনি রাখলেন রাজা বলির মাথার ওপর। বিষ্ণুর পায়ের চাপে দানবরাজ বলির ঠাঁই হল একেবারে পাতাললোকে। তখন থেকেই রাজা বলি পাতালে বাস করেন।
বলি আগে থেকেই বিষ্ণুকে চিনে নেওয়ার পরেও জমি দান করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন বলে, ভগবান বিষ্ণু রাজা বলির নরকাসুর রূপের পুজোর প্রবর্তন করেন। নরকাসুররূপী রাজা বলি কালীপুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশীর তিথিতে নিজের অসংখ্য অনুচর, অর্থাৎ ভূত, প্রেতদের নিয়ে মর্ত্যে উঠে আসেন, পুজো নেওয়ার জন্য।
-
আবার ভিন্ন মত রয়েছে যে, ভূত চতুর্দশীর দিন পরলোকগত চৌদ্দ পুরুষের আত্মারা নিজের নিজের আবাসস্থলে আসেন। তাই তাঁদের আসার পথকে আলোকিত করার জন্যই এই তিথিতে সন্ধেবেলা ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে অন্ধকার দূর করার রীতি প্রচলিত রয়েছে।
হিন্দু শাস্ত্রে বলা হয়, এই তিথিতে সন্ধ্যা নামার পরেই অশরীরী প্রেতাত্মারা বের হয়ে আসে। তাদের থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য সন্ধ্যায় পর গৃহস্থের বাড়িতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানোর নিয়ম আছে। তবে, কথাটি হিন্দু শাস্ত্রে উল্লিখিত থাকলেও, ভূত চতুর্দশী ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত বাঙালিরাই পালন করে থাকেন। এমনও কথিত আছে যে, এই দিনে ‘চামুণ্ডা’ রূপে চোদ্দজন ভূতকে দিয়ে ভক্তদের বাড়ি থেকে অশুভ শক্তি দূর করতে আসেন মা কালী। দেবীর পথকে আলোকিত করার জন্যই নাকি প্রদীপ জ্বালাতে হয়।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।