মনে করা হয় যে, এই বিশেষ ঘটনাটি ঘটার পরেই মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র রচিত হয়েছিল রোগ, অকাল মৃত্যু এবং ভয়ের মতো বহু ব্যাধি দূর করার জন্য।
ভগবান শিবকে বলা হয় মহাদেব, তিনি সকল দেবতাদের দেবতা। মহাদেব সর্বদা তাঁর ভক্তদের প্রার্থনা শোনেন। করুণা ও সুরক্ষার প্রতীক ভগবান শিব কীভাবে মৃত্যুকে এড়িয়ে যেতে পারেন, সেই সম্পর্কে একটি গল্প রয়েছে। মনে করা হয় যে, এই ঘটনার পরেই মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র রচিত হয়েছিল রোগ, অকাল মৃত্যু এবং ভয়ের মতো বহু ব্যাধি দূর করার জন্য। মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রকে এত শক্তিশালী বলে মনে করা হয় যে, এটি নিয়মিত জপ করলে শুধু অকালমৃত্যুর ভয়ই দূর হয় না, বরং একজন ব্যক্তি বিভিন্ন রোগভোগ থেকেও মুক্ত থাকেন।
একটি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, মৃকন্ডু নামে এক ঋষি ছিলেন, যিনি ভগবান শিবের পরম ভক্ত ছিলেন। ঋষি মৃকণ্ডুর কোনও সন্তান ছিল না। সন্তান লাভের জন্য তিনি ভগবান শিবের কঠোর তপস্যা করেছিলেন। এই তপস্যায় খুশি হয়ে ভগবান শিব তাঁর ভক্ত মৃকন্ডুকে সন্তান লাভের বর দেন। কিছুকাল পরে, মৃকন্ডু এবং তার স্ত্রী একটি পুত্রসন্তান লাভ করেন। যার নাম হয় মার্কণ্ডেয়। কিন্তু জন্মের কিছুক্ষণ পরেই ঋষিরা জানান যে, এই পুত্র স্বল্পায়ু। এর মানে হল যে, তাঁর ছেলে মাত্র ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবেন। এই কথা শুনে মৃকন্ডু খুবই দুঃখ পেলেন, কিন্তু ভগবান শিবের প্রতি তাঁর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল যে, ভগবান শিব তাঁর পুত্রের মৃত্যু রোধ করবেন। মৃকণ্ডুর স্ত্রী বললেন, তিনি যেন শিবের শরণাপন্ন হন। তারপর তাঁরা দুজনেই নিজেদের ছেলেকে তার স্বল্প আয়ুর কথা জানান। এই কথা শুনে, মার্কন্ডেয়, নিজের বাবা-মায়ের উদ্বেগ বুঝতে পারেন এবং তিনি তপস্যা করার জন্য একটি শিব মন্দিরে যান।
মন্দিরে বসে মার্কণ্ডেয় মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র রচনা করেন এবং জপ করতে থাকেন। একইভাবে, অবিরাম মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করার মাধ্যমে, মার্কণ্ডেয় ১৬ বছর বয়সে উপস্থিত হন। যমরাজ যখন তাকে নিতে আসেন, তখন মার্কন্ডেয় ভগবান শিবের পূজা করছিলেন। যমরাজ যখন মার্কন্ডেয়কে তার প্রাণ হরণ করার জন্য নিজের ফাঁস ছুঁড়ে মারলেন, মার্কন্ডেয় তখন অতি দ্রুত শিবলিঙ্গকে জড়িয়ে ধরে রক্ষা পাবার জন্য ভগবান শিবের কাছে প্রার্থনা করতে লাগলেন। তা দেখে যমরাজ আবারও পূর্ণ আগ্রাসন দিয়ে ফাঁস নিক্ষেপ করলেন, যা শিবলিঙ্গে আঘাত করল। এটা দেখে ভগবান শিব ক্রুদ্ধ হলেন এবং যমরাজকে তিনি হুঁশিয়ারি দিলেন তাঁর ভক্তদের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করার জন্য। ভগবান শিব যমরাজকে তাঁর ভক্ত মার্কন্ডেয়ের জীবন উৎসর্গ করতে বলেছিলেন, কিন্তু যমরাজ ভগবান শিবকে প্রকৃতির নিয়ম মনে করিয়ে দেন। এই কথা শুনে ভগবান শিব তাঁর ভক্ত মার্কন্ডেয়কে দীর্ঘায়ু দান করলেন। এইভাবে মার্কণ্ডেয় রচিত মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রটি অকাল মৃত্যুকে এড়ানোর জন্য রচিত হয়েছিল।
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র
ॐ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্। উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যোর্মুক্ষীয় মাঽমৃতাৎ।।
– এর অর্থ হলো হে ত্রিনয়ন আমাদের জীবনকে সুগন্ধে ভরিয়ে তোল। সকল বন্ধন থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদের মৃত্যু হতে অমৃততে নিয়ে যাও।