র্ত্যলোকে ভগবান শিবের পূজা প্রথমবার কে করেছিলেন? সেই সম্পর্কে রচিত আছে একটি চমকপ্রদ লোককথা।
স্বর্গে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এবং ভগবান বিষ্ণুর মধ্যে চরম দ্বন্দ্বের পরে দেবাদিদেব মহাদেবের পূজার প্রচলন হয়েছিল। কিন্তু, মর্ত্যলোকে ভগবান শিবের পূজা প্রথমবার কে করেছিলেন? সেই সম্পর্কে রচিত আছে একটি চমকপ্রদ লোককথা।
কথিত আছে যে, প্রাচীনকালে পৃথিবীতে ভুজবল নামে এক মহা ধুরন্ধর চোর ছিল। সে গৃহস্থের চোখের সামনে থেকে জিনিস চুরি করে নিলেও কেউ টের পেত না। চোখের সামনে থেকে লোকের বাড়ি একেবারে ফাঁকা হয়ে যেত। একদিন কোনওরকমে তাকে হাতেনাতে পাকড়াও করা সম্ভব হল। সব লোক মিলে ভুজবলকে ভালো করে মারধর করার পর নিয়ে গেল রাজার কাছে। রাজাকে নিদান দিলেন, ভুজবলকে রাজ্য থেকে দূর করে দেওয়া হোক। রাজ্যের ধারেকাছে দেখতে পেলেই তার মুণ্ড কেটে দেওয়া হবে।
এই হুঁশিয়ারি শুনে, ভুজবল সেই যে রাজ্য ছেড়ে পালাল, আর ফিরেও তাকাল না। অনেক পথ পেরিয়ে নতুন এক রাজ্যের সীমানায় এসে প্রহরীদের চোখ এড়িয়ে সে কোনওরকম ঢুকে পড়ল ওই দেশে। ঢোকার পর দেখল, সেই দেশের মানুষের বাড়িতে বেশ বড় বড় ফলের বাগান আছে। ফল তো চুরি করাই যায়। কিন্তু শুধু ফল খেয়ে তো আর বাঁচা যায় না। তাই সে রাতের বেলায় ফল চুরি করে দিনের বেলায় বাজারে বেচে, আর সে টাকায় চালডাল কিনে আনে। নিজের হাতে রেঁধে খায়। এমনি করে তার দিন যায়।
-
এক রাতে ফল চুরি করতে সে উঠেছে গাছে। বেলের বাগানে বেল গাছ। ফাল্গুন মাস, গাছের পাতায় অল্প অল্প শিশির। রাতের অন্ধকারে সে বুঝতেই পারেনি যে, বেলগাছের নীচে পাতা আছে শিবের ছোট্ট একটি লিঙ্গ। আর কপালগুণে সেদিন ছিল শিব চতুর্দশী তিথি! কিন্তু সে তিথি বা শিবের সঙ্গে তার তো কোন লেনদেন নেই। তাই, সে বেশ নিশিন্তে গাছ থেকে ইচ্ছেমতন ফল পেড়ে নেমে চলে গেল। সে জানলই না, তার ফল পাড়ার সময় হাতের চাপে গায়ের চাপে একটি একটি করে বেলপত্র আর ফোঁটা ফোঁটা শিশিরের জল পড়েছে শিবলিঙ্গে। তাতেই পরম তুষ্ট হয়েছেন শিব আর তার অজান্তেই হরণ করেছেন ভুজবলের এতদিনের চুরির সমস্ত রকম পাপ। শিব ছাড়া ভুজবল কেন আর কেউই জানল না তার সেই অঢেল পূণ্য অর্জনের কথা!
-
তারপর একদিন যখন সে মারা গেল কালের নিয়মে, তখন তাকে যেতে হল শেষ বিচারের আশায় যমের দরবারে। সেখানে তার জীবনের হিসেব মেলাতে গিয়ে যম তো অবাক, চিত্রগুপ্ত অবাক! ভুজবলের মতো দাগি একটা চোর কিনা একরাত্রির শিবপূজার ফলে অর্জন করে ফেলেছে অক্ষয় স্বর্গবাসের অধিকার! এই খবর সমস্তলোকে ছড়িয়ে পড়তেই শিবের মহিমা আর ভুজবলের সুকৃতিতে ধন্য ধন্য পড়ে গেল এবং সেই থেকে মর্ত্যধামে শুরু হল যথানিয়মে শিবরাত্রিতে অক্ষয় পূণ্যকামনায় শিবের বিশেষ পুজো।