Saraswati Puja: দেবী সরস্বতীর কারণেই কখনও পুজো করা হয় না দেবতা ব্রহ্মা-কে, জেনে নিন সেই অজ্ঞাত কাহিনী

দেবী সরস্বতীকে নজরবন্দি করার জন্য চারিদিকে চোখ রাখছিলেন দেবতা ব্রহ্মা। তারপরেই ঘটল মহা অঘটন।

Sahely Sen | Published : Feb 12, 2024 2:09 PM IST

দেবী সরস্বতীর জন্ম তিথিতেই পালিত হয় সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) । দেবীর সৃষ্টি এবং বিয়ে সম্পর্কে পুরাণে বহু ধরনের তথ্য রয়েছে। 

কোনও কোনও তথ্যে রয়েছে যে, পরমাত্মা ব্রহ্মার মুখ থেকে নির্গত হয়ে তিনি পাঁচ ভাগে বিভক্ত হন: রাধা, পদ্মা, সাবিত্রী, দুর্গা ও সরস্বতী। আবার মৎস্যপুরাণ মতে, ব্রহ্মার শরীর দুটি আলাদা আলাদা ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল, তার মধ্যস্থান থেকে সৃষ্ট হয়েছিলেন মা সরস্বতী। সেই হেতু, তিনি হলেন ব্রহ্মার অর্ধাঙ্গিনী (কন্যা নন)। এই হিসেবেই সরস্বতী হয়েছিলেন অর্ধাঙ্গিনী, অর্থাৎ সহধর্মিণী। আবার কেউ কেউ বলেন যে, সরস্বতী হলেন ব্রহ্মার মানসকন্যা । 


ব্রহ্মা তাঁর সৃষ্টিকর্তা হলেও তিনি নিজে সরস্বতীর রূপ দেখে মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন? পিতার কামুক চাহনি সরস্বতীর ভালো লাগেনি । তিনি সৃষ্টিকর্তার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন। এতে ব্রহ্মা ক্ষুব্ধ হলেন। তিনি কামদেব মদনকে অভিশম্পাত করলেন যে, কেন এই সুন্দরী নারীকে তিনি সম্ভোগ করতে পারছেন না!
 

অন্যদিকে আবার অনেকে যুক্তি দেন, ব্রহ্মা যেমন জ্ঞানের প্রতীকী। কিন্তু জ্ঞান একটি আধার, তার থেকে নদীর মতন বাক্যের মাধ্যমে যে নির্যাস বেরিয়ে আসে তাই হল বিদ্যা। তাই জন্যেই সরস্বতী দেবী বিদ্যার দেবী, নদী স্বরূপিনী, বাগদেবী। যেহেতু বিদ্যা জন্ম নিয়েছে জ্ঞানের ক্রোরে, তাই বলা হয় সরস্বতী দেবী ব্রহ্মাজাত। অনেকে বলেন সরস্বতী ব্রহ্মার মানস কন্যা। আবার স্ত্রীও বটে। এমন তথ্য কতটা যুক্তিযুক্ত!

স্রষ্টা ব্রহ্মা হলেন আদি অনন্ত অবিনশ্বর অজ্ঞাত। কিন্তু তার এই অজ্ঞাত রূপ কে দুটি ভাগ করা যায় – পুং এবং স্ত্রী। যাই স্থির, অবিচল তাই পুং। যেমন হিমালয়। যা বয়ে যায় সেই স্ত্রী। যেমন গঙ্গা। হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ আসনে থাকা তিন দেবতার অন্যতম হলেন ব্রহ্মা। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরকে নিয়েই ত্রিমূর্তি। এই পুং কে তিনটি ভাবে প্রকাশিত হতে দেখা যায় – ব্রহ্মা ( যার থেকে সবার উৎপত্তি), বিষ্ণু (যে অস্তিত্বের পালক) এবং মহেশ্বর (যে ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টির চক্রবূহ কে আবার চালিত করে)। কিন্তু যারই পুং থাকবে, তারই স্ত্রী রূপ চাই। কারণ , পুং এবং স্ত্রী এই দুটি রূপের সামঞ্জস্য থাকতে হয়। ব্রহ্মার স্ত্রী রূপ সরস্বতী, বিষ্ণুর স্ত্রী রূপ লক্ষ্মী এবং মহেশ্বরের স্ত্রী চণ্ডী (যার দুটি রূপ কালি এবং দুর্গা – অসংযত ও সংযত ধ্বংস)।

ব্রহ্মা কেন পূজিত হন না, তার কিছু শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাও রয়েছে। পুরাণে কথিত হয়েছে, ব্রহ্মা যখন সৃষ্টি প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন তখনই নিজের কাজের সুবিধার জন্য এক সুন্দরী নারীকে তৈরি করেছিলেন তিনি। শতরূপা, গায়ত্রী, সরস্বতী, সাবিত্রী বা ব্রহ্মাণী নামে পরিচিতা সেই নারীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়েন ব্রহ্মা। শতরূপা ব্রহ্মার চোখের আড়াল হওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। তাঁর উপর নজর রাখতে নিজের ঘাড়ের উপর পাঁচদিকে পাঁচটি মাথা তৈরি হয়ে যায় ব্রহ্মার। শতরূপা তখন ব্রহ্মার কামাবেগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে নানা পশুর ছদ্মবেশ ধরে পালাতে থাকেন। ব্রহ্মাও একে একে সেইসব পশুর পুরুষ রূপ ধারণ করে শতরূপার পিছু নেন। বলা হয়, এইভাবেই তৈরি হয় জীবকূল। শতরূপা বাঁচতে একটি গুহার ভিতর আশ্রয় নেন। ব্রহ্মা সেই গুহাতেই মিলিত হন শতরূপার সঙ্গে। শতরূপা ছিলেন ব্রহ্মার কন্যা। কিন্তু তাঁর সঙ্গেই মিলিত হন ব্রহ্মা। এই অবৈধ যৌনাচারের অপরাধে শিব ব্রহ্মার পঞ্চম মাথাটি কেটে দেন, এব‌ং অভিশাপ দেন যে, ধরাধামে কেউ কোনওদিন ব্রহ্মার পূজা করবে না।

Read more Articles on
Share this article
click me!