মা কালী কেন বস্ত্রহীনা? কেন স্বামী শিবের বুকে পা দেওয়ার পর বেরিয়ে এসেছিল তাঁর জিভ? জেনে নিন দার্শনিক কারণ।
হিন্দু ধর্মের দেবদেবীর মূর্তি প্রকৃতপক্ষে মানুষেরই বাস্তব জীবনের প্রতিরূপ। দেবদেবীদের রূপ অবিকল মানুষের মতোই, কারণ, তাঁদের কর্মকাণ্ড তাত্ত্বিকভাবে মানুষের জীবন দ্বারাই প্রতিফলিত, আবার উলটোটাও সত্যি। যেমন, মা কালী। তিনি ভীষণ ক্রোধী এক নারী। তাঁর রোষের ঘনঘটা এতটাই প্রবল যে, তিনি নিজের বসনটাও ত্যাগ করেছেন। তাঁর হাতে নরমুণ্ড, গলায় ৫১টি মুণ্ডমালা, রাগের উন্মত্ততায় স্বামী মহাদেবের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি, আবার পরমুহুর্তেই জিভ বের করে কামড়ে ফেলেন।
-
কালীর উলঙ্গিনী ও ক্রোধী রূপ এটাই সংজ্ঞায়িত করে যে, মানুষের ক্রোধ হল উলঙ্গ, ক্রোধের ভূষণ নেই, রাগে চণ্ডাল হয়ে মানুষ যা-খুশি তা-ই করতে পারে। স্বামীর বুকে পা দেওয়ার চিত্রটি এটাই বর্ণনা করে যে, ক্রোধের বশে সকলেই ভুল কাজ করেন, এমনকি দেবী হয়েও তিনি স্বামীর বুকে পা তুলে দেন। তাঁর কাটা জিহ্বা নির্দেশ করে যে, ক্রোধের পর যখন কেউ ক্ষান্ত হন তখন তিনি চরম লজ্জার শিকার হন, আত্ম-অপমানের গ্লানি তাঁকে বুঝিয়ে দেয় যে, রাগের বশে তিনি কী ভুল কাজটি করে ফেললেন। স্বামীর বুকে পা দেওয়ার জন্য তিনি লজ্জিত।
পুরাণে বর্ণিত আছে যে, দেবী কালী অসুরদমনের সময় অত্যন্ত ক্রোধের বশে সমস্ত জগত-সংসারকে ধ্বংস করে চলেছিলেন। তাঁর কোপ থেকে কেউ বাদ পড়ছিলেন না। এমতাবস্থায়, ভগবান শিব তাঁর স্ত্রী কালীকে থামানোর জন্য মৃত মানুষ সেজে মাটিতে শুয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, কালী তখন দ্বিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য। ক্রোধের বশে শিবের বুকের ওপরেই পা দিয়ে দেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে, বুঝতে পারেন যে , তিনি কী চরম ভুল কাজ করে ফেলেছেন। তখন লজ্জায় ছিছিক্কারে নিজের জিভ কাটতে থাকেন।
শিবের বক্ষে চরণস্থাপন করার একটি দার্শনিক অর্থ আছে।
দেবী নিজের একটি পা শবরূপী শিবের বুকের ওপর স্থাপন করে দাঁড়িয়ে আছেন। এই সামনে এগিয়ে রাখা পা হল, গতির প্রতীক। একটি পা পিছনে এবং আরেকটি পা সামনের দিকে, এর অর্থ হল, অতীতকে এবং ভবিষ্যতকে একসাথে অধিকার করে নিয়ে তিনি গতিশীলা। আবার শিব হলেন পরমপুরুষ। কালী হলেন পরমাপ্রকৃতি। শিব চৈতন্যশক্তি, কালী ক্রিয়াশক্তি। শিব স্থির, কালী গতিময়ী। গতি ঠিক রাখতে হলে স্থিরের উপর তার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
আরেক মতে, কালী মহাকালকে নিজের পদতলে ধারণ ক’রে সৃষ্টি আর স্থিতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেন। সেইজন্যেই তিনি সদাশিব, মহাপ্রেত রূপে পদ্মাসনে প্রতিষ্ঠিতা। এই কল্পিত রূপেই শক্তির দ্বিবিধ রূপের সমাহার। একদিকে তিনি বিনাশী, অন্যদিকে তিনি সৃষ্টির প্রতীক।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।