Kali Puja 2023: মানুষের কাটা মাথা! কেন সেই মুণ্ডের মালাই শোভা পায় মা কালীর গলায়?

সংক্ষিপ্ত

কালীর আভরণের মুণ্ডমালা প্রথমত ও প্রধানত কৈবল্যের প্রতীক, সমস্ত জাগতিক মোহজাল ছিন্ন করে তাঁর হাতের খড়্গ, তারই ফলাফল হল এই মুণ্ডমালা।

পণ্ডিতেরা বলেন, দেবী কালীর রূপের তাৎপর্য অতি গূঢ়। দশমহাবিদ্যার প্রথম দেবী হলেন কালী। এই কালীর আবার বিভিন্ন রূপ আছে যেমন দক্ষিণাকালী, ভদ্রকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী প্রভৃতি। এর মধ্যে দক্ষিণাকালী রূপটিই বাংলায় বেশি পুজো পায়। এই মূর্তিতে মায়ের একহাতে ছিন্ন নরমুণ্ড ও খড়্গ। অন্যহাতে বরাভয়। দেবী মোট পঞ্চাশটি নরমুণ্ডের মালা ধারণ করেন। গলায় নরকপালমালা, কোমরেও নরমুণ্ডের কোমরবন্ধনী। কালিদাসের কাব্যে এমনই লিখিত আছে, আর ঐতিহাসিকভাবে এর পাথুরে মূর্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে পালযুগ থেকে।
-
 

মনে করা হয় যে, কালীর আভরণের মুণ্ডমালা প্রথমত ও প্রধানত কৈবল্যের প্রতীক, সমস্ত জাগতিক মোহজাল ছিন্ন করে তাঁর হাতের খড়্গ, তারই ফলাফল হল এই মুণ্ডমালা। মুণ্ডগুলিকে পঞ্চাশটি বর্ণ হিসেবে মনে করা হয়। কালী পঞ্চাশৎ বর্ণময়ী, ৫০ টি মুণ্ডমালা ৫০ টি বর্ণমালাকে নির্দেশ করে। হাতের নরমুণ্ড নির্দেশ করে যে, তিনি মানুষের জ্ঞানকে হাতে ধারণ করেন। আদিতে নাদ ব্রহ্ম ছিল, বলা হয়। এই শব্দ এই অক্ষর থেকে একটি জাতি উৎপন্ন হয়েছিল, যার ভাষার অধিষ্ঠাত্রী হলেন কালী এবং এই অক্ষরগুলি দিয়ে তন্ত্রের সভ্যতার সূচনা হয়েছিল।

Latest Videos

-
একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য হল, এই মুণ্ডগুলি তন্ত্রের খণ্ড সমাধির স্মৃতি বহন করে। হরপ্পা থেকে পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে খণ্ড সমাধি প্ৰচলিত ছিল। পঞ্চমুণ্ডি আসন আজও সেই স্মৃতি বহন করে। প্রত্যেকটা ছিন্ন মুণ্ড শক্তিসাধনার একটি প্রতীক, এই নরমুণ্ডমালা তন্ত্রসাধনার কথা বলে। ঐতিহাসিককালে বাংলার বহু জঙ্গল এবং মন্দিরে নরবলি দেওয়া প্রচলিত ছিল। এটি তন্ত্রসাধনার একটি অংশ। কলকাতায় চিৎপুরে মা কালীর মন্দিরে ব্রিটিশ আমলের পরেও নরবলি ঘটেছে, বলে মনে করা হয়। কালী একজন বলিপ্রিয়া দেবী। তাই মুণ্ডমালা ঐতিহাসিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ।


আক্ষরিকভাবে, মুণ্ডমালা যুদ্ধেরও প্রতীক। মা কালীর ভক্তরা ‘শাক্ত’, অর্থাৎ মাতৃ-শক্তির উপাসক, এই জাতি ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাবাপূর্ণ। তাই তাঁদের দেবী মুণ্ডমালা ধারণ করেন। পালযুগ থেকেই মুণ্ডমালা শোভিত মূর্তি দেবীর আরাধনার বৈশিষ্ট্য, এটা শাক্ত তন্ত্রাশ্রয়ী সভ্যতার প্রতিরোধের প্রতীক। মা কালী অসুরদলনী, অর্থাৎ শত্রু দমনের ক্ষেত্রে মুণ্ডমালা হল বিজয়ের প্রতীক। যে সেনাপতি তাঁর চুল ধরে অপমান করেছিল, তার মুণ্ড দেবী হাতে ধরে থাকেন৷

-
পালযুগে বেশ কয়েকটি উত্তর পূর্ব ভারতীয় পার্বত্য উপজাতির মানুষের সংস্কৃতি বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। এদের অনেকের মধ্যে মুণ্ডমালা পরার প্রথা প্ৰচলিত ছিল। সেখান থেকেও দেবীমূর্তিতে নরমুণ্ড যোগ করার রীতি আসতে পারে বলে মনে করা হয়। আরেকদিকে, বাঙালি জাতির পূর্বসূরীরা আদিকাল থেকেই বিজয়া দশমীর দিন যুদ্ধযাত্রা করে কার্তিকী অমাবস্যা তিথিতে মুণ্ডমালা দিয়ে মা কালীর পূজা করতেন, সেই কারণেও মা কালীর গলায় মুণ্ডমালা শোভা পেতে পারে বলে মনে করা হয়।
 

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

মমতার চালাকি ধরে ফেললেন! পথ খুঁজতে Abhijit Ganguly'র বাড়িতে চাকরিহারাদের একাংশ | SSC case Update
Locket Chatterjee: সিটি কলেজের অধ্যাপক 'আমরা যোগ্য' কার্ড ঝুলিয়ে মমতার সভায় কী করছে? প্রশ্ন লকেটের