এই ব্রতকথা ছাড়া সোমবারের উপবাস অসম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। পুত্রদা একাদশীর দিনে শ্রাবণ সোমবার ব্রত অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এদিনে এই ব্রতকথা শুনে শিবের আরাধনা করলে সকল মনের ইচ্ছে পূরণ হয়।
মহাদেব শিবের কৃপা করার জন্য শ্রাবণ মাসের সোমবার উপবাস পালন করা হয়। এই উপবাস পালন করলে শিবভক্তদের সকল ইচ্ছা পূরণ হয়। কিন্তু ব্রতী সোমবার ব্রতের কথা শ্রবণ করলেই সৌমর ব্রতের ফল পায়। এই ব্রতকথা ছাড়া সোমবারের উপবাস অসম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। পুত্রদা একাদশীর দিনে শ্রাবণ সোমবার ব্রত অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এদিনে এই ব্রতকথা শুনে শিবের আরাধনা করলে সকল মনের ইচ্ছে পূরণ হয়।
শিব ব্রতকথা-
একদা সর্বগুণযুক্ত বারাণসী পুরীতে ভয়ঙ্কর এক ব্যাধ বাস করত। বেঁটে-খাটো ছিল তার চেহারা, আর তার গায়ের রং ছিল কালো। চোখ আর চুলের রং ছিল কটা। নিষ্ঠুর ছিল তার আচরণ। ফাঁদ জাল, দড়ির ফাঁস এবং প্রাণী হত্যার নানা রকম হাতিয়ারে পরিপূর্ণ ছিল তার বাড়ি। একদিন সে বনে গিয়ে অনেক পশু হত্যা করল। তারপর নিহত পশুদের মাংসভার নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হল। পথে শ্রান্ত হয়ে সে বনের মধ্যে বিশ্রামের জন্য একটি বৃক্ষমূলে শয়ন করলে এবং একটু পরেই নিদ্রিত হল।
সূর্য অস্ত গেল। এল ভয়ঙ্কর রাত্রি। ব্যাধ জেগে উঠল। ঘোর অন্ধকারে কোন কিছুই কারও দৃষ্টিগোচর হল না। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে সে একটি শ্রীফলবৃক্ষ অর্থাৎ বিল্ববৃক্ষ পেল। সেই বিল্ববৃক্ষে সে লতা দিয়ে তার মাংসভার বেঁধে রাখল। বৃক্ষতলে হিংস্র জন্তুর ভয় আছে। এই ভেবে সে নিজেও ঐ বিল্ববৃক্ষে উঠে পড়ল। শীতে ও ক্ষুধায় তার শরীর কাপঁতে লাগল। এভাবে সে শিশিরে ভিজেই জেগে কাটাল সারা রাত।
দৈববশত সেই বিল্ববৃক্ষমূলে ছিল আমার (অর্থাৎ শিবের) এতটি প্রতীক। তিথিটি ছিল শিব চতুর্দশী। আর ব্যাধও সেই রাত্রি কাটিয়েছিল উপবাসে। তার শরীর থেকে আমার প্রতীকের ওপর হিম বা শিশির ঝরে পড়েছিল। তার শরীরের ঝাঁকুনিতে বিল্বপত্র পড়েছিল আমার প্রতীকের ওপর। এভাবে উপবাসে বিল্বপত্র প্রদানে এবং শিশিরস্নানে নিজের অজান্তেই ব্যাধ শিবব্রত করে ফেলল। দেবী, তিথিমাহাত্ম্যে কেবল বিল্বপত্রে আমার যে প্রীতি হয়েছিল, স্নান, পূজা বা নৈবেদ্যদি দিয়েও সে প্রীতি সম্পাদন সম্ভব নয়। তিথি মাহাত্মে ব্যাধ মহাপূণ্য লাভ করেছিল। পরদিন উজ্জল প্রভাতে ব্যাধ নিজের বাড়িতে চলে গেল।
কালক্রমে ব্যাধের আয়ু শেষ হল। যমদূত তার আত্মাকে নিতে এসে তাকে যথারীতি যমপাশে বেঁধে ফেলতে উদ্যত হল। অন্যদিকে আমার প্রেরিত দূত ব্যাধকে শিবলোকে নিয়ে এল। আর আমার দূতের দ্বারা আহত হয়ে যমদূত যমরাজকে নিয়ে আমার পুরদ্বারে উপস্থিত হল। দ্বারে শিবের অনুচর নন্দীকে দেখে যম তাকে সব ঘটনা বললেন। এই ব্যাধ সারা জীবন ধরে কুকর্ম করেছে। জানালেন যম।তার কথা শুনে নন্দী বললেন, ধর্মরাজ, এতে কোন সন্দেহই নেই যে ঐ ব্যাধ দুরাত্মা। সে সারা জীবন অবশ্যই পাপ করেছে। কিন্তু শিব ব্রতের মাহাত্মে সে পাপমুক্ত হয়েছে এবং সর্বেশ্বর শিবের কৃপা লাভ করে শিবলোকে এসেছে।
আরও পড়ুন- মহাভারতের যোদ্ধা এখনও এই মন্দিরে নিত্য পুজো করেন, রহস্যময় এই স্থানের গল্প চমকে দেবে
আরও পড়ুন- শ্রাবণ মাসে যদি এই নিয়মগুলি মানতে পারেন, বাস্তু মতে বাড়িতে কখনও আসতে পারে না আর্থিক সমস্যা
আরও পড়ুন- শ্রাবণ মাসে বাড়িতে এই গাছগুলি লাগালে শিব ও লক্ষ্মীর আশির্বাদে হবে টাকার বৃষ্টি
নন্দীর কথা শুনে বিস্মিত হলেন ধর্মরাজ। তিনি শিবের মাহাত্মর কথা ভাবতে ভাবতে যমপুরীতে চলে গেল। শিব পার্বতীকে আরও বলেলেন, এই হল শিব ব্রতের মাহাত্ম।শিবের কথা শুনে শিবজায়া হিমালয় কন্যা পার্বতী বিস্মিত হলেন। তিথি শিবব্রতের মাহাত্ম্য নিকটজনের কাছে বর্ণনা করলেন। তাঁরা আবার তা ভক্তি ভরে জানালেন পৃথিবীর বিভিন্ন রাজাকে। এ ভাবে শিব ব্রত পৃথিবীতে প্রচলিত হল।