নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি ভারতের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একথা বলেও হাসিনা মনে করেন, নাগরিকত্ব আইন বা এনআরসি লাগু করার কোনও প্রয়োজন ছিল না। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গাল্ফ নিউজ- কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান।
এর আগে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। যদিও, তিনিও বলেছিলেন যে এই সিএএ এবং এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি কার্যকর হলে তার কী প্রভাব বাংলাদেশের উপরে পড়বে, তা নিয়ে এখন কিছুটা সন্দিহান সেদেশের সরকার। যদিও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, সরকারিভাবে এখনও ভারতে আসা কোনও শরণার্থী বাংলাদেশে ফেরত যায়নি।
আরও পড়ুন- বাড়ছে বাংলাদেশে ফেরার প্রবণতা, এক বছরেই বৃদ্ধি প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০.৭ শতাংশ হিন্দু এবং ০.৬ শতাংশ বৌদ্ধ। নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে অত্যাচারিত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান , শিখ, জৈন এবং পার্সিরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে আশ্রয় নিয়ে থাকলে নাগরিকত্ব পাবেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য স্বীকার করেছেন, নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে খোদ নরেন্দ্র মোদী তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এই মুহূর্তে সবথেকে ভাল জায়গায় রয়েছে বলেও দাবি করেছেন শেখ হাসিনা। সেই কারণেই বাংলাদেশ এই দুই বিষয় নিয়ে নীরব রয়েছে। তবে তিনি মেনে নিয়েছেন, ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিদের কেউ এখনও সরকারিভাবে সেদেশে ফেরত না গেলেও সিএএ এবং এনআরসি-র জন্য ভারতে অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন।
হাসিনা বলেন. 'ভারত সরকার বার বারই বলেছে যে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব আইনের বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া। ২০১৯ সালের অক্টোবরে আমার দিল্লি সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে আমায় এ কথা বলেছেন।
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বিদেশ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল হওয়া নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক ছড়িয়েছে। নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি-র নিয়ে ভারতে প্রতিবাদ শুরু হওয়ার পর পরই ডিসেম্বর মাসে ভারত সফর বাতিল করেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আসাদুজ্জামান খানের মেঘালয় সফরে আসার কথা ছিল। আর বিদেশমন্ত্রী মোমেন ১২ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের পর্যন্ত দিল্লি সফর করবেন বলে ঠিক ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই সফর বাতিল করেছিলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহলের মতে, নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে ভারতের তৎপরতার প্রতিবাদেই এই পদক্ষেপ করেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের দুই শীর্ষ মন্ত্রী।