'জয়ার সঙ্গে বন্ডিংটা আরও মজবুত হল', লকডাউনে একান্ত আলাপচারিতায় বিক্রম

  • লকডাউনে  জয়া আর ছোট ছেলের সাথে সময় কাটাচ্ছেন বিক্রম 
  • বাড়িতে বসে রেওয়াজ করতে গিয়ে আরও নতুন জিনিস শিখলেন বিক্রম
  •  মায়াকুমারির কাজ তো বাড়িতে বসেই করেছেন তিনি
  •  জয়াও সারাক্ষন বিক্রমের নতুন কম্পোজিশন গুলো শুনছে

Asianet News Bangla | Published : Jun 2, 2020 12:01 PM IST / Updated: Jun 02 2020, 05:42 PM IST

বিক্রম ঘোষ। ভারতীয় বাঙালি তবলা বাদক হিসেবে তিনি  সর্বস্তরে জনপ্রিয়। তার তবলার  তালে দুলে ওঠে সকলের মন। শাস্ত্রীয় থেকে আধুনিক,রক, ফিউশন সঙ্গীত থেকে চলচ্চিত্র-সবেতেই তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে। করোনা রুখতে  ইতমধ্যেই পঞ্চম দফার লকডাউন শুরু হয়েছে। তারকা থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই এই লকডাউনে ঘরবন্দি। তিনিই রয়েছেন সেই তালিকায়। বন্দিদশায় সময় কাটাতে  একদিকে চলছে রেওয়াজ এবং তার পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গেই চুটিয়ে সময় কাটাচ্ছেন বিক্রম।

 

 

রেশমি- বিক্রমদা কেমন আছো? লকডাউনে চূড়ান্ত ভাবে ক্রিয়েটিভ রেখেছ তুমি।

বিক্রম- হ্যাঁ রেশমি।  লকডাউন শুরু হওয়ার পর আমি বেশ বুঝেছিলাম যে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের মুক্তি নেই। কিছু না করে বসে থাকা খুবই বেদনাদায়ক । তখনই আউট অফ দ্য বক্স সিরিজটা করব ঠিক করি। মোবাইলেই রেকর্ডিং, বাড়িতে বসেই, আমি, আমার সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার, সকলে মিলে করা কাজ, যা সবার খুব ভালো লেগেছে।

 

রেশমি- তার বাইরে সময় কীভাবে কাটছে? 

বিক্রম- এতটা সময় বাড়িতে কবে কাটিয়েছি মনে পড়ে না। জয়া আর আমার ছোট ছেলের সাথে অনেক সময় কাটাচ্ছি। বড় ছেলে ফিরতে পারে নি,ও গুয়াহাটিতে বোর্ডিং-এ পড়ে। গুয়াহাটিতে ওর মাসির বাড়ি,ওখানেই আছে । আর আমিও বাড়িতে বলাই বাহুল্য বেশ খাওয়া দাওয়া করছি। ভালোই আছি। 

 

রেশমি- এই এতগুলো দিন আমরা কাটিয়ে দিলাম, কোনোদিন ভেবেছিলে যে বাড়িতে বসে এত কাজ করা সম্ভব?

বিক্রম- এটা ঠিক বলেছ, ভাবিনি এই সময়টা এতটা প্রোডাক্টটিভ হবে। পুশিং দ্য বাউন্ডারিতে গিয়ে কাজ গুলো হয়েছে। যেমন নতুন প্রোডাকশন হয়েছে, তেমনই রেওয়াজের অনেক সময়ও পেয়েছি,যা সচরাচর পাই না। প্র্যাক্টিস করতে করতে আরও নতুন কিছু শিখলাম, জানলাম। তবে হ্যাঁ এবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই, তাড়াতাড়ি। (হেসে)


রেশমি- ঝড় থেমে যাবে, তারপর মায়াকুমারির কাজ তো বাড়িতে বসেই করলে? 

বিক্রম- একদম, অরিন্দমের সাথে, কলকাতা পুলিশের ও একটা কাজ করলাম, ঝড় থেমে যাবে করলাম। এরপর মুক্তি পেল মায়াকুমারির গান মধুমাসে... যা বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই দারুণ হিট হয়েছে। একটা রেট্রো ফিল আছে গানে, পঞ্চাশ ষাটের দশকের গল্প যেখানে উঠে এসেছে। ট্রিবিউট দেওয়া হচ্ছে ফিল্মের মধ্য দিয়ে। মোট বারোটা গান আছে ফিল্মে। বুঝতেই পারছ, গানের খুব বড় ভূমিকা আছে গল্পে। আর অরিন্দমের সাথে কাজের মজা হল, যে মুহূর্ত থেকে আমরা গল্প নিয়ে আলোচনা করি, তারপর যার যার কাজে ঢুকে যাই,কিন্তু গ্রাফটা বজায় রেখে চলি। মধুমাসে গানটি নিয়ে প্রচুর ফোন পাচ্ছি। প্রশংসা করছেন সকলে । বেশ লাগছে। 


রেশমি- এখন যেরকম ভয়ের বাতাবরণ,কনসার্ট শুনতে কি আসবেন শ্রোতারা? অনেক শিল্পীই এই নিয়ে চিন্তিত, এরপর কি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেই এই কনসার্ট হবে,সেটাই কি ভবিষ্যৎ? 

বিক্রম- এটা বাস্তব যে ডিজিটাল ভাবে মানুষ অনেক বেশী অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। আমার মতে দুটোই থাকবে । অনেক শ্রোতারা হয়ত পছন্দ করবেন, ডিজিটাল কনসার্ট শুনতে। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী তে অনেকেই ঝুঁকি নেবেন না। ডিজিটালই শুনবেন বা দেখবেন। আমিও বেশ স্বচ্ছন্দ এই পদ্ধতিতে । তবে করোনা তো সারাজীবন থাকবে না, তাই অডিটোরিয়ামে বসে নিশ্চয় পারফর্ম করব,আর তার যে কি মজা, সেটা প্রত্যেক পারফর্মার বোঝেন। 

 

 

রেশমি- এখন অনেক শিল্পীদের আমরা পাচ্ছি, যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের ট্যালেন্ট শো-কেস করছেন, লক্ষ করার সুযোগ পাও তাদের? নতুন শিল্পীরা কীভাবে পৌঁছাবে তোমার কাছে? 

বিক্রম- নতুন শিল্পীরা খুব সহজেই আমার কাজে পৌঁছোতে পারেন। আমি অনেক নতুনদের সুযোগ দিয়েছি, গায়ক, মিউজিশিয়ান,প্রোগ্রামার। ইন্ডাস্ট্রিতে এ ব্যাপারে সবাই জানেনও। আমার কাছে গান পৌঁছে দেওয়া, বা মিউজিত পৌঁছে দেওয়া সহজ। ফেসবুকের মাধ্যমেও পাঠাতে পারেন, অনেকে ফোনেও পাঠান । ঠিক সময় করে শুনে নিই আমি। আর তার রেসপন্সও করি।

 

রেশমি- মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা ডিজিটাল যুগে কি তুলনামূলক ভাবে সোজা? কীভাবে কেরিয়ার গড়বেন কেউ, তোমার কি পরামর্শ হবে? 

বিক্রম- হয়তো এখন অনেকে বেতালা বা বেসুরো হয়েও টেকনলজির সাহায্যে কারসাজি করতে পারে। কিন্তু ট্যালেন্টকে নিয়ে সঠিক পথে এগোনোর স্ট্রাগলটা একই আছে। আগে কারোর কাছে পৌঁছাতে হলে, কত কাঠখড় পোড়াতে হত, ট্রাঙ্কল বুক করা,কথা শোনা যেত না। এখন বারুইপুর হোক বা ফ্রান্স,আমাকে যে কোনো জায়গা থেকে শিল্পী যোগাযোগ করছেন,আমিও তাদের ইন্সট্রাকশন দিতে পারছি। কিন্তু নিজেকে গড়ে তোলার লড়াই আগে যা ছিল,আজও তাই আছে।


রেশমি- জয়াদির জন্য নতুন কোনও মিউজিক পিস অ্যারেঞ্জ করলে নাকি?

বিক্রম- জয়া আমার অনেক কাজ নিয়েই কোরিওগ্রাফ করে যেটা ওর ভালো লাগে। ও সারাক্ষন আমার নতুন কম্পোজিশন গুলো শুনছে। বুঝতেই পারছ,বাড়িতে ফ্রি-মিউজিক যখন আছে, সেগুলো ভালোই কাজে লাগায় জয়া।(হাসি)

 

রেশমি- তুমি টানা এতোদিন বাড়িতে, হাউজ অন ফায়ার নাকি, হাউজ অন রেস্ট? বাড়ির কি কি কাজে তোমাকে পাওয়া যায়?

বিক্রম- হাউজ অন রেস্ট-ই বলা ভালো। আমি বরাবরই আমার জগতে থাকি, বাড়িতেও। লকডাউনে  জয়া আর ছোট ছেলের সাথে সময় কাটালাম, বন্ডিংটা আরও মজবুত হল। বাড়ির কাজ খুব একটা করতে হয় না আমাকে যদিও । লোকজন আছে, ওরাও আমাদের পরিবার। সবমিলিয়ে ভালোই কেটে গেল, লকডাউন পিরিয়ড। 

 

রেশমি- অনেক ধন্যবাদ বিক্রমদা, আড্ডা দেওয়ার জন্য, খুব ভাল থেকো, আশা করি তাড়াতাড়ি দেখা হবে।

 


 

রেশমি  বাগচি- দেড় দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। বাংলা গণমাধ্যমের একাধিক প্রথমসারির সংবাদ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের সঙ্গে শূন্য নামে এথনিক বুটিক ফ্যাশন স্টোর খুলেছেন। একজন আন্তেপ্রঁণে হিসাবে এই মুহূর্তে কাজ করছেন রেশমি। এছাড়াও নৃত্যশিল্পী ও আবৃত্তিকার হিসাবেও স্বনামে উজ্জ্বল  তিনি। 

Share this article
click me!