'জ্যান্তকে পুড়িয়ে দিয়েছে আর মরাকে দাফন করেছে', গল্পকার যখন গুলজার

  • দক্ষতার জন্য সমালোচকরা তাঁকে ‘শব্দের মোজার্ট’ খেতাবে ভূষিত করেছেন
  • তিনি হলেন গুলজার, যাঁর কাব্য ছন্দ সেরার সেরা
  • জন্মদিনে সেই উপলক্ষ্যেই বিশেষ প্রতিবেদন
  • তিনি গীতিকার, কখনো চিত্রনাট্য রচয়িতা কখনো চলচ্চিত্র নির্মাতা

 

Latest Videos

কলমে অন্যস্বাদ

তখন সদ্য দেশ ভাগ হয়েছে। কেউ চলেছে ওদিকে, কাউকে আসতে হচ্ছে এদিকে। যারা চলেছে আর আসছে; তাদের একটাই পরিচয়- উদ্বাস্তু। তেমনই এক উদ্বাস্তু শিখ পরিবার বেড়িয়ে পড়েছে নতুন ঠিকানার সন্ধানে। রাতের অন্ধকারে ওরা হাঁটতে হাঁটতে... চলেছে। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে ভারত ভূখন্ডে। স্বামী আর স্ত্রী হাঁটছে, কোলে রয়েছ সদ্য ভূমিষ্ঠ যমজ দুটি শিশু। ওভাবেই ওরা রাভি নদী পেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কোলের মধ্যেই যমজ শিশুরএকটি মারা যায়।

শোকাতুর মা সেই মৃত শিশুটিকে পরম মমতায় বুকে ধরে রাখে। কিন্তু কতক্ষণ আর মরা শিশু বুকে আগলে রাখা যায়। শিশুটির বাবা তাই ‘ওয়াহেগুরু’-র নাম উচ্চারণ করে নদীতে ফেলে দেয় মরা শিশুটিকে। চারদিক থেকে সমবেত চিৎকারে অনুরণিত হতে থাকে ওয়াগাহ্! ওয়াগাহ্! কিন্তু অন্ধকারে বড় ভুল হয় যায়। যে শিশুটিকে মরা ভেবে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে সেটি তখনও বেঁচে ছিল। আর যেটি কোলে আগলে রাখা সেটি মৃত।

 

গল্পগাঁথা

একজন মুসলমান তার জীবিত অবস্থাতেই তাঁর স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন যে, মৃত্যুর পরে তাঁকে দাফন করার পরিবর্তে হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী যেন শ্মশানে দাহ করা হয়। এটাই তার অন্তিম ইচ্ছা। মৃত্যুর পরে ওই মুসলমানের স্ত্রী পড়লেন মহা মুশকিলে। সামাজিক দুর্নাম এবং ধর্মভীরুদের ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে তিনি কিভাবে তার স্বামীর শেষ ইচ্ছে পূরণ করবেন। শেষ পর্যন্ত মৃত স্বামীর শেষ ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করলে ওই মহিলা ধর্মান্ধদের হাতে খুন হয় এবং দাফনের জন্য ওই মুসলমানের শবদেহ চুরি হয়ে যায়। গল্পের শেষে গল্পকার লিখছেন, ‘জিন্দা জ্বালা দিয়ে গায়ে থে, আউর মুর্দে দাফন হো চুকে থে’ অর্থাৎ জীবিতকে পুড়িয়েছে এবং দাফন করেছে মৃতকে। প্রথম গল্পটির নাম ‘রাভি পার’। আর পরেরটির নাম স্মোক বা ধোঁয়া। গল্পকার সম্পূরণ সিং কালরা। লোকে চেনে গুলজার নামে। 

মাস্টার ওয়ার্ডস্মিথ

ভারতীয় সিনেমার দুনিয়ায় তিনি কখনো গীতিকার, কখনো চিত্রনাট্য রচয়িতা কখনো চলচ্চিত্র নির্মাতা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি কবি গুলজার। স্মৃতি, গন্ধমেদুরতা, বিষণ্ণ আলোর মতো অনিমেষ মুহূর্তগুলো তিনি তুলে আনেন কবিতায়। এসব পাঠককে রীতিমতো সম্মোহিত করে। গুলজারের এই দক্ষতার জন্য সমালোচকরা তাঁকে ‘শব্দের মোজার্ট’ খেতাবে ভূষিত করেছেন। এছাড়া তাঁর কাব্য ভাষায় চরিত্র চিত্রণ, বিশেষ করে শব্দ প্রয়োগের জন্য তাঁকে ‘মাস্টার ওয়ার্ডস্মীথ’ও আখ্যায়িত করা হয়। হিন্দি, উর্দু এমনকি পাঞ্জাবি ভাষাতেও গুলজার লিখেছেন। ইংরেজি ভাষায় তার ছোটগল্প সংকলন ‘রাভি পার অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’, এবং ‘হাফ এ রুপি স্টোরিজ’ বেশ জনপ্রিয়।

 

গুলজার ও কলম

উল্লেখ্য; দেশভাগের দুঃসহ অভিজ্ঞতা, মানসিক চাপ এবং দেশভাগ-পরবর্তী ঘটনা নিয়ে গুলজার একাধিক ছোটগল্প, কবিতা এবং নিবন্ধ লিখেছেন। হিন্দি বা উর্ধু সাহিত্যে সাদাত হাসান মান্টো কিংবা ইসমত চুগতাইয়ের লেখার সঙ্গে যারা খুব পরিচিত তারা হয়ত গুলজারের গদ্য সাহিত্যকে সমান মর্যাদা দেবেন না। দেওয়ার কথাও নয়। গুলজারের ছবির মতোই তাঁর লেখার মধ্যেও জনপ্রিয়তার প্রতি ঝোঁক যতটা সাহিত্যগুণ ততটা নয়। তাছাড়া গুলজারের সব লেখাই পাঠক মন নাড়া দিতে পারেনি। কিছু কিছু গল্প তুলনামূলকভাবে দূর্বল, খাপছাড়া, একটি ঘটনার সঙ্গে অন্যটি সম্পূর্ণ আলাদা। 

দেশভাগ

তবু দেশভাগ যেহেতু অনেক মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে ওলটপালট করে দিয়েছে। অনেক পরিবারের আত্মীয়-স্বজন সীমান্তের দুপাশে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং অনেকে দেশভাগের বদলে অখন্ড ভারতবর্ষে, অর্থাৎ মাতৃভূমিতে থাকতে চেয়েছে। এই সব অনুভূতি নিয়ে লেখা যারা পছন্দ করেন তারা নিঃসন্দেহে গুলজারের গল্প পছন্দ করেন।


                                              

Share this article
click me!

Latest Videos

Bangladesh-এ হিন্দুনেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার, মুক্তির দাবিতে Md Yunus-কে হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর
Live | India vs Australia : পারথে সাড়ে তিন দিনে টেস্ট জয়, বিদেশের মাটিতে ভারতের সেরা সাফল্য?
ওয়াকফ বিলের (Waqf Bill) আঁচ বাংলার বিধানসভায়, দেখুন কী বললেন Suvendu Adhikari
'ভোট ব্যাঙ্কের জন্য Mamata রোহিঙ্গাদের হিন্দুদের জমি দিচ্ছে' বিস্ফোরক অভিযোগ Agnimitra-র
হাড়োয়ায় তৃণমূল জিততেই বিজেপি প্রার্থীর জমি তচনচ, ক্ষোভ উগরে যা বললেন Samik Bhattacharya