তপন বক্সী : দিলীপ কুমারের ৯৮ বছরের দীর্ঘ জীবন আর খ্যাতির পিছনেও এক গল্প। যে কাহিনি এই দীর্ঘ জীবনের জন্মলগ্নের শুরুতেই ঘটেছিল।পেশোয়ারের যে পৈতৃক বাড়িতে জন্মেছিলে ছোট্ট ইউসুফ, সেই বাড়ির দরজায় মাঝে মাঝেই এক ফকির আসতেন। এই ফকিরকে আশপাশের আরও প্রতিবেশীদের মত ইউসুফের মা আয়েষা বেগমও কিছু খাবার আর টাকা হাতে দিতেন। মধ্য বয়স্ক ফকির তার আগে মূল ফটকের সামনে পৌঁছে নিজের ভাষায় গান ধরতেন। ইউসুফ তখন পাঁচ বছরের। বাড়ির সামনে খুড়তুতো ভাইদের সঙ্গে খেলছেন। হঠাৎ ফকিরের চোখ গেল ইউসুফের দিকে।
আরও পড়ুন-BIG NEWS, বড়সড় জালিয়াতির অভিযোগ উঠল সলমন খান ও তার বোনের বিরুদ্ধে, সমন পাঠাল পুলিশ
আরও পড়ুন-শারীরিক নির্যাতনের পর বেদম মারধরের অভিযোগ, তাও কেন সলমনকে হাতের মুঠোয় রেখেছিলেন ঐশ্বর্য
কোনও এক বিশেষ আনন্দ আর উৎসাহ নিয়ে ফকির সামনে বসে থাকা ঠাকুরমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'এই ছেলেকে আমার সামনে একটু আনবেন?' ঠাকুরমা ইউসুফকে ডেকে সেই ফকিরের কাছে যেতে বললেন। ঠাকুরমার নির্দেশ মত বালক ইউসুফ সেই ফকিরের কাছে এলেন। দুটি বিস্ফারিত চোখে মেলে, ভাল করে ইউসুফের মুখের ওপর তাকালেন তিনি। বললেন, 'চোখ দুটো বন্ধ করে দু মিনিট দাঁড়াও তো বেটা।' তারপর শুরু হল জরিপ।
ভীরু ভীরু বুকে বালক ইউসুফ চোখ বন্ধ করলেন। এবার ফকির ইউসুফের ঠাকুরমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকলেন,'এই ছেলেকে বিশেষ যত্নে রাখবেন। এই ছেলে বড় হয়ে প্রচুর খ্যাতি আর কৃতিত্ব অর্জন করবে। একে আপনারা সমস্ত কুদৃষ্টির বাইরে রাখার চেষ্টা করবেন। যদি একে আপনারা সব অশুভ দৃষ্টির বাইরে রাখতে পারেন, তাহলে অনেক বয়স পর্যন্ত এই ছেলে সৌম্যদর্শন থেকে যাবে। কালো সুতো দিয়ে এর মুখকে একটু খারাপ করে রাখবেন। যখন ও বাইরে অনেক লোকের মাঝখানে যাবে। এসব না মানলে একে কিন্তু আপনারা বয়সের আগেই হারাতে পারেন। এমনিতে আল্লাহ কি নূর (আল্লাহর আলো) এর মুখের ওপর সদা বিরাজমান।' এই কথাগুলি বলে, একটা বড় হাসি হেসে দানের খাবার আর কিছু অর্থ নিয়ে ফকির বাবা চলে গেলেন।
চোখ খুলে ছোট্ট ইউসুফ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। বুঝতে পারলেন, নাঃ, এই ফকির আমার সম্পর্কে আর যাই বলুন, খারাপ কিছু বলেন নি। কিন্তু সেই 'অনেক লোকের মাঝখানে' ইউসুফকে এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া তো চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াল। মহা ফাঁপরে পড়লেন ইউসুফের মা আর ঠাকুরমা। পরদিন ইউসুফ স্কুলে যাওয়ার আগে ঠাকুরমা ইউসুফের মাথা কামিয়ে ফকিরের কথামতো কালো সুতো দিয়ে কপালে আঁকাবাঁকা দাগ দিয়ে ইউসুফের মুখের আদলে একটা বদসুরত ভাব তৈরি করে দিলেন। এটি চলতে থাকল দিনের পর দিন।
স্কুলে যেতেই তো হাঙ্গামা হওয়া শুরু হতে থাকল। বয়সে বড়রা, ক্লাসমেটরা ইউসুফকে ক্ষ্যাপাতে শুরু করলেন। বাড়ি ফিরে ইউসুফ সারাদিনের টিজিং নিয়ে একরাশ অভিমান উগরে দিতে থাকতেন মা আর ঠাকুরমার ওপর। ঠাকুরমা ইউসুফকে মা-র চেয়েও বেশি আগলে রাখার চেষ্টা করতেন। আর এ নিয়ে ঠাকুরমা-ঠাকুরদার মধ্যে বাকযুদ্ধ লেগেই থাকত। পরে ঠাকুরমা, মা-র মতই দিলীপ কুমারকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন সায়রা বানু।