যত বড় সিনেমা মেকার, তত বড় স্টার মেকার ছিলেন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়

  • ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়
  • সিনেমা মেকার হিসাবে আজও তিনি দর্শকের মনের মণিকোঠায়
  • কেবল সিনেমা মেকারই নয়, বড় স্টার মেকারও ছিলেন তিনি
  • ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়

বিএ পাস করে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন। কিন্তু তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল অন্য কিছু। তাই স্কুলে বিজ্ঞান আর অঙ্ক শিখিয়ে তাঁর মন ভরছিল না কিছুতেই। যেটা করতে চাইছিলেন সেই পথে যাওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। কিন্তু সেটা একদিন পেয়েও গেলেন। এরপরই স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দিলেন। কলকাতার নিউথিয়েটার্স স্টুডিওতে যোগ দিলেন ক্যামেরাম্যান হিসেবে। ঢুকে গেলেন সিনেমা নামক স্বপ্নের জগতে। ক্যামেরার কাজ করতে করতে যোগাযোগ এবং সম্পর্ক তইরি হয়ে গেল ফিল্ম তিনিই করেন। এভাবেই বোম্বাইয়ের সিনেমা দুনিয়ায় তাঁর পায়ের নীচের মাটি শক্তপোক্ত হয়ে গেল। একে একে বোম্বাইয়ের হিন্দি সিনেমা জগতের সব দরজাই তাঁর জন্য খুলে যেতে থাকে। বলিউডে সিনেমা বানাতে যেসব বাঙালীজাত নির্মাতারা এডিটর সুবোধ মিত্র-র সঙ্গে। ক্যামেরার কাজ ছেড়ে তাঁর কাছে শিখতে লাগলেন চলচ্চিত্র সম্পাদনার কাজ। একদিন ডাক এল বোম্বাই থেকে, ভাবনায় পড়লেন। বিমল রায়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হাত ছাড়া করা মানে বোকামি। তাই দেরি না করে কলকাতা থেকে বিদায় নিলেন। 

শেষ পর্যন্ত বোম্বাইতেই থিতু হলেন। পরিচালক বিমল রায়ের বিখ্যাত দুটি ছবি ‘দো-বিঘা জামিন’ ও ‘দেবদাস’-এর সম্পাদনার কাজ ব্রতী হয়েছিলেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। প্রকৃত অর্থে বোম্বাইয়ের সিনেমায় ‘স্টার মেকার’ বলে যদি কেউ থেকে থাকেন, তবে তিনিই সেই জায়গাতে অবস্থান করছেন। তিনি যে ক’টি ছবি বানিয়েছিলেন, তার প্রত্যেকটি সব ধরনের দর্শককেই খুশী করেছিল। বোম্বাই সিনেমা জগতের তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তিনিই প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। প্রতিভাবানদের চিনে নেওয়ার মতো জহুরি ছিলেন তিনি। রাজেশ খান্না, অমিতাভ বচ্চন, অমল পালেকর, জয়া ভাদুড়ির মতো প্রতিভাবানদের তিনিই সিনেমা জগতে এনে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন। তবে আপাদমস্তক বাঙালি হয়েও বাংলা ভাষায় কোনও সিনেমা তিনি তৈরি করেননি। হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি ‘মুসাফির’। এরপর বলরাজ সাহানী ও লীলা নাইডু অভিনীত ‘অনুরাধা’ দর্শকদের মনে অন্য ধরনের স্বাদ এনে দিয়েছিল। একজন বিবাহিত মহিলাকে কেন্দ্র করে ছবি, যার স্বামী নিজের আদর্শকে সামনে রেখে স্ত্রীকে ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। তখনকার সময়ে ব্যতিক্রমী ছবিটি বোদ্ধা মহলে জনপ্রিয়তা পেলেও বক্স অফিস হিট করতে পারেনি। তবে এই ছবিটির জন্য হৃষিকেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবেও বিশেষ ক্যাটাগরির চলচ্চিত্র হিসেবে সম্মান অর্জন করে।

Latest Videos

জাতিভেদ প্রথা ও জমিদারির উপর কুঠারাঘাত, সিনেমায় অন্য মোড়কে দলিতদের জীবন কথা, পাশাপাশি এক পিতার হৃদয়ের যন্ত্রণাকে অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সঙ্গে তুলে সাদা-কালো পর্দায় ধরেন ‘আশীর্বাদ’ ছবিতে। ছবিটি ‘সুপার-ডুপার হিট’ সেই সঙ্গে অশোক কুমারের ‘লিপ’-এ ‘রেলগাড়ি ছুক্ ছুক্ ছুক’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ব্যতিক্রমী আরেকটি ছবি ‘সত্যকাম’। একটি যুবক যে কিনা স্বাধীনতার পর এক ভিন্ন ভারতের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু সে স্বপ্ন সফল হওয়ার পথই পায় না। তাকে হতাশা কুরে কুরে খায়। জয়া ভাদুড়ি মূলত হৃষিকেশের হাত ধরেই বোম্বাই সিনেমা জগতে প্রতিষ্ঠা পান। জয়া প্রথম হিন্দী ছবিতে সুযোগ পান হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘গুড্ডি’ ছবিতে।  সিনেমা জগতের প্রতি ছেলেমেয়েদের অবাস্তব ধারণা ও স্বপ্নের জগতের নায়ক-নায়িকাদের প্রতি তাদের অসার আকর্ষণকে নৈপুণ্যের সঙ্গে সেলুলয়েডে হৃষিকেশ অসামান্য দক্ষতায় তুলে ধুরেন ‘গুড্ডি’ ছবিতে। জয়াকে নিয়ে এরপর বাবুর্চি, অভিমান, মিলি, চুপকে চুপকে করেন। সবক’টি ছবিই জনপ্রিয় হয়। আনন্দ’ থেকে শুরু করে ‘চুপকে চুপকে’— হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ন’টি ছবিতে অভিনয় করেছেন অমিতাভ। অমিতাভ বলেছিলেন, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ছিলেন তাঁর গডফাদার। 

গুলজার লিখেছেন, ‘গুড্ডি’র শুটিং চলছে। সিনও লেখা চলছে। শুটিং চলাকালীন অন্য একটা ছবির খুব বড় একটা সেট পুড়ে যায়। হৃষীদা তাঁর ছবির চিত্রনাট্যকার গুলজারকে বলেন, একটা সিন লিখতে, যেখানে এক জন স্টিল ফোটোগ্রাফার ধর্মেন্দ্র-র ছবি তুলতে আসবে আর ধর্মেন্দ্র বলবেন, ‘আমার ছবি তুলে কী হবে, ওই সব কর্মীদের,  স্পট বয়দের ছবি তুলুন, যাদের ক্ষতি হল। তাদের ছবি তুলে বলুন, কী অবস্থা এদের। গুলজার বলেছিলেন,  ‘হৃষীদা, ভীষণ মেলোড্রামাটিক হয়ে যাবে। হৃষীদা এক বকুনি লাগিয়ে বললেন, ‘যা বলছি, তাই কর।’ সিন লেখা হল, শুটিং হল, কিন্তু আমরা বলতেই থাকলাম, এই সিনটা বাদ দিন, ঠিক যাচ্ছে না সিনেমার সঙ্গে। হৃষীদা শুনলেন না। রিলিজের প্রথম শোতে দর্শকদের রেসপন্স দেখে আমরা তো অবাক। যেই ওই সিনটা এল, দর্শক চেঁচিয়ে বাহবা দিল, হাততালিতে ফেটে পড়ল গোটা হল।

Share this article
click me!

Latest Videos

‘২৬ এর নির্বাচনই তৃণমূলের শেষ নির্বাচন!’ Samik-এর সাবধানবাণী Mamata-কে, দেখুন | By Election Results
'আমি বলছি, আমার নাম করে লিখে রাখুন' ঝাঁঝিয়ে উঠে যা বললেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
বিয়ে করার জন্য পাত্রী তুলতে এসে শ্রীঘরে পাত্র, হুলুস্থুলু কাণ্ড কুলতলিতে | Kultali News
'উপনির্বাচনে জিতে আরও অত্যাচার বাড়াবে TMC' উদ্বেগ প্রকাশ Adhir Ranjan Chowdhury-র
প্রকাশ্যে হুমকি! মমতার এই নেতার মুখের ভাষা...বিরোধীদের যা বললেন! দেখুন | Malda News Today |