দেখতে দেখতে ৪৫ পার, আজও ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে রোমাঞ্চকর কাহিনির এক নতুন অধ্যায় 'শোলে'

  • দেখতে দেখতে ৪৫ বছর পেরিয়ে গেল রমেশ সিপ্পির শোলে
  • তবু ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে শোলে আজও নতুন
  • পরিচালক রমেশ সিপ্পির শোলে-কে নিয়ে আকর্ষণ ও আগ্রহের শেষ নেই
  • ৪৫ বছর পার হয়ে গেলেও শোলে-র অজানা রহস্যের রোমাঞ্চকর কাহিনি এখনও অফুরন্ত

তপন বক্সী, প্রতিনিধি, মুম্বই : দেখতে দেখতে ৪৫ বছর পেরিয়ে গেল। তবু ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে 'শোলে' আজও নতুন। ভারতের 'ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট' এই ছবির চিত্রনাট্য ওই বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের এখন নিয়মিত পড়ানো এবং বোঝানো হয়। মুম্বইয়ের বান্দ্রায় নিজের বাড়িতে বসে এই ছবির গল্প ও চিত্রনাট্যকার সেলিম খান আমাকে তাই বলেছিলেন। গত ৪৫ বছরে 'শোলে' নিয়ে অনেক আলোচনা প্রশংসা হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি এই ছবির  নির্মাণকে ঘিরে সমালোচনার চোরাস্রোতও বয়ে গিয়েছে। আর এসব নিয়েই আজও 'শোলে'-কে নিয়ে আকর্ষণ ও আগ্রহের শেষ নেই । 

আরও পড়ুন-বাবা হতে তৈরি যশ, তবে কি পাকাপাকি দায়িত্ব নিলেন অন্তঃসত্ত্বা নুসরত ও তার ৬ মাসের গর্ভের সন্তানের...

Latest Videos

আরও পড়ুন-'আমার থেকে ঐশ্বর্যর পারিশ্রমিক প্রায় দ্বিগুণ', টাকার অঙ্কের আক্ষেপ কি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় অভিষেককে...

আরও পড়ুন-চুল দিয়ে ঢাকা সুডৌল স্তনযুগল, সেক্সিয়েস্ট তকমা ঝেড়ে নিজেকে 'Cat Lady' বললেন শাহরুখ কন্যা সুহানা...

 

 

'শোলে' নিয়ে প্রযোজক-পরিচালক রমেশ সিপ্পি, লেখক সেলিম খানদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলার সুযোগ হয়েছ। আর তা থেকেই বুঝেছি, সাতের দশকের প্রথম পর্বে পরিচালক রমেশ সিপ্পি যখন 'আন্দাজ', 'সীতা অউর গীতা'-র কাজ শেষ করেছেন, তখনই বাবা জিপি সিপ্পির সঙ্গে আলোচনায় বসে হলিউড ঘরানার অ্যাকশনধর্মী একটি হিন্দি ছবি করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তার আগে সেলিম জাভেদ 'শোলে'-র গল্প নিয়ে প্রযোজক মনমোহন দেশাই আর প্রকাশ মেহেরার কাছে গিয়েছিলেন। ওরা দুজনেই রাজি হননি। তারপর তাঁদেরই গল্প নিয়ে 'সীতা অউর গীতা' করা পরিচালক রমেশ সিপ্পির দ্বারস্থ হন তাঁরা।  তারপর এই গল্পে কিছু অদল বদল হয়। 'শোলে' নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বুঝেছি, এই গল্পের পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত  চেহারায় হলিউডের বেশকিছু প্রভাব এসেছিল। কিছুটা রমেশ সিপ্পির পরামর্শে, কিছুটা লেখক জুটির গবেষণায়।

 

 

বেসিক স্টোরিলাইনে জয় (অমিতাভ), বীরু(ধর্মেন্দ্র), ঠাকুর(সঞ্জীব কুমার) -দের মত চরিত্রগুলো ছিল। পরে আনা হয়েছিল একদিকে 'বাসন্তী'(হেমা মালিনী)-র মত প্রাণোচ্ছ্বল, চুলবুলে নারী চরিত্র। আর অন্যদিকে 'রাধা' (জয়া ভাদুড়ি) -র মত বিষণ্ণ, আপাত গম্ভীর ট্র‍্যাজিক চরিত্র। সেইসময় পরিচালক রমেশ সিপ্পি তরুণ কুমার ভাদুড়ির(জয়া ভাদুড়ির বাবা এবং সাংবাদিক) লেখা 'অভিশপ্ত চম্বল' বইটির হিন্দি সংস্করণ পড়েছিলেন। বই পড়া ছাড়াও রমেশের ওপর প্রভাব  ছিল জাপানি পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়ার 'সেভেন সামুরাই' এবং জন স্টারজেসের 'দ্য ম্যাগনিফিশিয়েন্ট সেভেন'-এর। বলিউডে পরে যেমন চেতন ভগতের 'ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান' এর পাঁচটি চরিত্র থেকে কমিয়ে তিনটি চরিত্রে 'থ্রি ইডিয়টস' হয়েছিল, তেমনই ওই দুটি বিদেশি ছবির সাতটি চরিত্রকে কমিয়ে মূল দুটি/তিনটি  পুরুষ চরিত্রে ভারতীয় গল্পকে বাঁধার প্রয়াস হয়েছিল 'শোলে'-তে। 

 

 

এক কথায়, সাতের দশকের প্রথম ভাগে রমেশ সিপ্পি 'কারি ওয়েস্টার্ন ' ভাব ধারায় প্রভাবিত হয়েছিলেন। মানে, 'আন্দাজ', 'সীতা অউর গীতা'-র মত একঘেয়ে মিউজিক্যাল, রোমান্সের ঘ্যানঘ্যানানি থেকে বেরিয়ে এসে একটু পাশ্চাত্য ঘরানায় ভারতীয় মশালা ছবি  তৈরি করতে চেয়েছিলেন । যাকে বলে, ওয়েস্টার্ন ফিল্ম মেকিংয়ের কলাকৌশলে ভারতীয় গল্প বলা। হলিউডের ট্র‍্যাডিশনাল সিনেমা বানানোর মাঝখানে এরকম মিশেল ভাবধারার পন্থা চালু করেছিলেন ইতালিয়ান  পরিচালক সারজিও লিওনে। যার জন্য খাঁটি আমেরিকান  হলিউড ঘরানার পৃষ্ঠপোষক আর ওই ছবির দর্শকবৃন্দ এই পাঁচমিশালি ছবি তৈরির ধারাকে মানতে না পেরে এই ধরণের ছবিকে 'স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্ন' বলতেন। 'স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্ন' ঘরানায় চিরকালীন ইন্টারন্যাশনাল ছবির ভাব ধারার সঙ্গে অন্য দেশের, সংস্কৃতির ভাব ধারাকে মিশিয়ে দেওয়া হত।  সমালোচকদের আগুনে দৃষ্টিতে পড়লেও এই মিশ্র ভাব ধারার আমদানিকারী ছবির তাৎক্ষণিক ব্যবসায়িক সাফল্য পাশ্চাত্য দেশগুলোয় একটা প্রভাব এনেছিল। এই ধরনের ছবিতে ক্লিন্ট ইস্টউড-এর মত আরও অনেক নামকরা হলিউড স্টারেরাও অভিনয় করেছিলেন এবং আগ্রহী ছিলেন। 

'শোলে' বানানোর সময়  পরিচালক রমেশ সিপ্পির মাথায় এই স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্ন ছবির চিন্তাধারা ভর করেছিল। আর একে একে ওই ভাব ধারার ছবিগুলি ঘুরেফিরে এসেছে রমেশের মাথায়। যেমন, 'বাচ ক্যাসিডি অ্যান্ড দ্য সানড্যানস কিড', 'হাই নুন', 'নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার', 'ওয়ানস আপন আ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট', দ্য ওয়াইল্ড বাঞ্চ', 'প্যাট গ্যারেট অ্যান্ড বিলি দ্য কিড' ইত্যাদি ছবিগুলি। সবার ওপর কিছু তৎকালীন হিন্দি ছবি। তারমধ্যে একটি তো রমেশের নিজের মতেই, 'মেরা গাঁও মেরা দেশ'।১৯৭১-এ তৈরি হওয়া ডাকাতদের নিয়ে সুপারহিট ছবি 'মেরা গাঁও মেরা দেশ'- এ মুখ্য ভিলেন বিনোদ খান্নার চরিত্রের নাম ছিল 'জব্বর সিং'। 'শোলে' করার সময় রমেশ সিপ্পির ওই নামকরণে নিজের ছবির ভিলেনের নাম করলেন 'গব্বর সিং'। 'শোলে' তৈরি নিয়ে এরকম আরও অনেক কিছু রয়েছে। 

 

 

গল্পে 'ঠাকুর' চরিত্রের ন্যারেশন শুনে একসঙ্গে প্রায় সবাই ওই চরিত্রটি নিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইলেন। অমিতাভ চাইলেন তিনি করবেন। ধর্মেন্দ্র চাইলেন তিনি করবেন। এসময়ে পরিচালক রমেশ সিপ্পি ধর্মেন্দ্রকে বোঝালেন, ধর্মেন্দ্র যদি ওই রোল করেন, তাহলে হেমাকে তিনি পাবেন না৷ সেই সময়  ধর্মেন্দ্র ডেট করছিলেন হেমাকে। তাই ধর্মেন্দ্র তাড়াতাড়ি 'বীরু'-র রোলে ফিরে এসেছিলেন। সঞ্জীব কুমার, যিনি 'ঠাকুর'-এর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, 'শোলে'- র সেটে হেমার কাছে প্রেম নিবেদন করতে যান। কিন্তু তখন অলরেডি ধরমের সঙ্গে হেমা এনগেজড হয়ে গিয়েছেন। তাই ধরম আর হেমা এটা নিয়ে প্রতিবাদ করেন। রমেশ সিপ্পি সেই আশঙ্কাজনক পরিবেশে না যাওয়ার জন্যই 'শোলে'-তে হেমা আর সঞ্জীব কুমারের একটিও ফ্রেম রাখেন নি। 

 

 

ছবিতে বীরুর চরিত্রে প্রথমে ঠিক হয়েছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। কিন্তু শত্রুঘ্ন তখন ভিলেনের রোল ছেড়ে একক নায়ক হিসেবে হিন্দি ছবিতে প্রতিষ্ঠা পেতে চাইছিলেন। তাই রমেশ সিপ্পির মাল্টিস্টারার ছবির  অফার তিনি নিলেন না। এমনকি নিজেদের হিরো ইমেজ থেকে বেরিয়ে এসে গব্বর সিং চরিত্র করার জন্য অমিতাভ, ধর্মেন্দ্ররাও মুখিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরিচালক রমেশ ওই চরিত্রে ভেবেছিলেন ড্যানি-কে। কিন্তু ড্যানি সেই সময়ে ফিরোজ খানের 'ধর্মাত্মা' ছবির শুটিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তাই ওই চরিত্র করতে পারেননি। আসলে 'গব্বর'- এর চরিত্রে আমজাদ খানের নাম রমেশ সিপ্পি কে সুপারিশ করেছিলেন সেলিম-জাভেদ।  হিন্দি সিনেমার পুরনো দিনের ভিলেন  জয়ন্তের (স্ক্রিন নেম। আসল নাম ছিল জাকারিয়া খান) বড় ছেলে আমজাদ খান কে রমেশ সিপ্পি স্টেজে  অভিনয় করতে দেখেছিলেন। তারপর তাঁকে দাড়ি গোঁফ বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছিলেন রমেশ সিপ্পি। সেই সঙ্গে 'অভিশপ্ত চম্বল' বইটি পড়তেও দিয়েছিলেন। 

 

 

'শোলে' এমন একটি ছবি, যে ছবির শুধু ডায়ালগ নিয়েই সিডি বাজারে বেরিয়েছিল এবং তার বিক্রি অভূতপূর্ব রেকর্ড তৈরি করেছিল। এই প্রথম কোনও হিন্দি ছবির অ্যাকশন সিকোয়েন্স পরিচালনা করেছিলেন ব্রিটিশ  টেকনিশিয়ানরা। 'শোলে' প্রথম হিন্দি ছবি, যার এডিটিং হয়েছিল ব্রিটেনে। 'শোলে' প্রথম হিন্দি ছবি, যা দেখানো হয়েছিল ৭০ মিলিমিটারের জায়ান্ট স্ক্রিনে। ১৯৭৫ সালে তিন কোটি টাকার বাজেটের ছবির শুধু ভারতেই ব্যবসা হয়েছিল ৩৫ কোটি টাকার। রাশিয়ায় ব্যবসা করেছিল ৬ কোটি টাকার। দিল্লির প্লাজা সিনেমায় শোলে চলেছিল একটানা  দু'বছরেরও বেশি। সব মিলিয়ে 'শোলে' ভারতীয় হিন্দি সিনেমার জগতে এমন এক কাল্ট ক্ল্যাসিক এবং ঐতিহাসিক ছবি হয়ে রয়ে গিয়েছে, যে ছবির মুক্তির পর ৪৫ বছর পার হয়ে গেলেও তাকে নিয়ে অজানা রহস্যের রোমাঞ্চকর কাহিনি এখনও অফুরন্ত।

Share this article
click me!

Latest Videos

Suvendu Adhikari Live : বিধানসভার বাইরে বিস্ফোরক শুভেন্দু অধিকারী, সরাসরি | Bangla News
'তৃণমূলের শান্তির ছেলেরা...মমতা-বিনীতকে জেলে ঢোকাবই' RG Kar কাণ্ডে বিস্ফোরক Suvendu Adhikari
Daily Rashifal: বুধবারে কেমন থাকবে অর্থনৈতিক অবস্থা, দেখে নিন ১২ রাশির আজকের আর্থিক রাশিফল
মাননীয়া জঙ্গিদের ঢুকতে দিচ্ছেন, কিন্তু চাকরি দিচ্ছেন না, শিল্প আনছেন না : Suvendu Adhikari
নওশাদ সিদ্দিকীকে জঙ্গি আখ্যা Saokat Molla-র, পাল্টা বড় পদক্ষেপ Naushad Siddiqui-র