হিন্দি ভাষার উপর দক্ষিণ ভারতীয়দের ক্ষোভ মেটানোর চেষ্টায় ছিলেন যেসুদাস, কেমন ছিল সেই ভূমিকা

  • হিন্দির ওপর রাগ ছিল রাধাকৃষ্ণন, সঞ্জীব রেড্ডি, ভিভি গিরি সহ অনেকের
  • সেই রাগ মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন কেজে যেসুদাস
  • হিন্দি ভাষার ওপর দক্ষিণ ভারতীয় মানুষদের রাগ-বিদ্বেষ কমানোর অদম্য চেষ্টা
  • অবশেষে কতখানি সফল হয়েছিলেন তিনি

তপন মল্লিক

বিগত শতকের সাতের দশকেও দক্ষিণ ভারতের কেরল, অন্ধ্র বা তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্যের মানুষ হিন্দি বুঝতে পারতেন না। অনেকে বলতেন ওরা আসলে হিন্দি বুঝতেই চায় না। ওরা হিন্দি শুনলে যেমন রেগে যায় তেমন বলতেও চায় না। হিন্দির ওপর রাগ বা অপছন্দ ব্যাপারটা নাকি রাধাকৃষ্ণন, সঞ্জীব রেড্ডি, ভিভি গিরি, আন্নাদুরাই, কামরাজ, নাম্বুদ্রিপাদ, নিজলিঙ্গগাপ্পাদের মতো মানুষদেরও ছিল। সেই কারণে দিল্লি ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে একটা মানসিক ব্যবধান তখন ছিল বলে শোনা যায়। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে সেই ব্যবধান অনেকটাই মুছে যায়। হায়দরাবাদ, চেন্নাই, তিরুবনন্তপুরম, বেঙ্গালুরুর মানুষরা খুব ভাল হিন্দি বলতে বা বুঝতে না পারলেও হিন্দির ওপর রাগ কমেছে। বলিউডের ছবি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এক্ষেত্রে সামান্য হলেও কাজ দিয়েছে। যদিও এটা সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা নয় কিন্তু হিন্দি ছবির পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতীয় ছবির রমরমা এবং সেইসব জনপ্রিয় ছবির হিন্দিকরণ ক্রমেই হিন্দি ভাষার ওপর দক্ষিণ ভারতীয় মানুষদের রাগ-বিদ্বেষ কমানোর ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা ভূমিকা পালন করে। 

 

Latest Videos

 

ইতিমধ্যে দক্ষিণ ভারত থেকে এসে বলিউডের ছবির জনপ্রিয় অভিনেত্রী হয়েছেন অনেকেই। বৈজয়ন্তীমালা, হেমা মালিনী, রেখার নাম যেমন বলতে হয় তেমনি আরও দুটো নাম এসেই পরে, কমল হাসান এবং রজনীকান্ত। কিন্তু শুধু তো এঁরা নন, বলিউডের সঙ্গীত দুনিয়ায় যেসুদাস এবং এস পি বালসুব্রহ্মণ্যম স্মরনীয় দুটি নাম। মনে হয় এই দু’জনের গান হিন্দিতে জনপ্রিয় হওয়ায় দক্ষিণ ভারতীয় মানুষদের মধ্যে থেকে হিন্দি বিদ্বেষ অনেকাংশেই কমেছে। যেসুদাস যেভাবে বলিউডের ছবির গানে তাঁর সুরেলা ও গম্ভীর কন্ঠ দিয়ে শ্রোতাদের ভক্তি আদায় করেছেন তা আর কোনও নেতা-মন্ত্রী-অভিনেতা-ক্রিকেটার করতে পারেন নি। এসপি বালসুব্রহ্মণ্যম একবার বলেছিলেন, ‘কেরালা ঈশ্বরের দেশ। আর যেসুদাস হলেন ঈশ্বরের বরপুত্র’। আজ সেই বরপুত্রের জন্মদিন।তার কন্ঠে আমরা প্রথম হিন্দি ভাষায় গান শুনেছিলাম ১৯৭৬ সালে ‘জানে মন জানে মন তেরে দো নয়ন’। দ্বৈত কন্ঠের এই গানটিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আশা ভোসলে। বাসু চট্টোপাধ্যায়ের ‘ছোটি সি বাত’ ছবির এই গানটিতে সুর করেছিলেন সলিল চৌধুরী। 

১৯৬২ সালে মালয়ালম ছবিতে তাঁর প্রথম প্লেব্যাক। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি যেশুদাসকে। একটার পর একটা ছবিতে গানের সুযোগ এসেছে তার কাছে, তেমনি নিপুণ ভাবে প্রতিটা গান গেয়ে মুগ্ধ করেছেন সকলকে। ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তের পেশাগত জীবনে কোনও অবসর নেননি তিনি। একটানা ছ’ দশক ধরে ৮০ হাজারের বেশি গান রেকর্ড করেছেন। আজ তিনি আশী পেরলেন। হিসেব বলছে, যেসুদাস ৮০ হাজার গান গেয়েছেন।  এই সংখ্যা নিয়ে এখনও বিতর্ক নেই। রফি এবং লতার গানের হিসেব নিয়ে ১৯৭৪ সালে জোর বিতর্ক হয়েছিল। লতা ২৫০০০ গান গেয়ে রেকর্ড করেছেন শুনে রফি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, তাঁর গানের সংখ্যা ২৮ হাজার। পরে দেখা যায়, দুটি হিসাবই ভুল। একানব্বই সালে আশা ভোঁসলের গানের সংখ্যা ১০,২০০ কেই রেকর্ড ধরা হয়। পরবর্তীতে বিশিষ্ট রেকর্ড সংগ্রাহক হরমিন্দর সিং হামরাজ জানান, রফির গানের সংখ্যা ৫ হাজারের কম। লতার গান ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ছিল ৬ হাজারের কাছাকাছি। তবে যেসুদাসের প্রতিভার বিচার কেবলমাত্র তার গান রেকর্ডের সংখ্যা দিয়ে করা বোকামি ছাড়া কিছু নয়। তিনি মালয়ালাম, তামিল, তেলুগু, হিন্দি, কন্নড়, বাংলা, ওড়িয়া এমনকি গান গেয়েছেন আরবি, লাতিন, রাশিয়ান এবং ইংরাজি ভাষাতেও। হিন্দি ‘জানেমন জানেমন’ সুপার হিট হওয়ার পর ‘চিতচোর’ ছবির ‘গোরি তেরা গাঁও বড়া প্যায়ারা’ রাতারাতি তাঁকে সেনসেশনে পরিণত করে।  

 

 

এ আর রহমানের কাছে তাঁর কণ্ঠস্বরই সবচেয়ে প্রিয়। সুরেলা কণ্ঠে ঈশ্বরের ছোঁয়া লেগে আছে বলে মনে করতেন বাপি লাহিড়ি। প্রায় সমস্ত খ্যাত্নামা সুরকারের সুরেই তিনি গান গেয়েছেন। ছবিতে প্লেব্যাকের পাশাপাশি ভক্তিমূলক গানেও তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। যেসুদাসের গাওয়া ‘হরিভরাসনম’ প্রত্যেকদিন শবরীমালা মন্দিরের দরজা বন্ধ হওয়ার আগে বাজানো হয়। প্রতি বছর তাঁর জন্মদিনে কর্নাটকের কল্লুরের মুকাম্বিকা মন্দিরে যান যেশুদাস। সেখানে গানের মাধ্যমে সরস্বতী দেবীর আরাধনা করেন। ২০০০ সালে তাঁর ৬০ তম জন্মদিন থেকে ওই মন্দিরে সঙ্গীত উৎসব শুরু হয়। প্রতি বছর ওই দিন থেকে শুরু করে টানা ন’দিন ধরে চলে এই উৎসব।
 

 

এদেশের এমন কোনও পুরস্কার বোধহয় নেই, যা যেসুদাস পান নি। আট বার জাতীয় পুরস্কার, ৪৩ বার রাজ্যস্তরে সেরা প্লেব্যাক সিঙ্গার হয়েছেন কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে। এছাড়া পেয়েছেন পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ ও পদ্মবিভূষণ সম্মান। ২০০৬ সালে একদিনে দক্ষিণী ছবির জন্য তিনি ১৬টি গান রেকর্ড করেছিলেন। এরপরও প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত শিল্পীর পিছু ছাড়েনি বিতর্ক। তিনি খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু হয়েছেন কি না, এ নিয়ে চর্চা অনেকদিনকার। অজস্র ভজন গাইলেও বহুকাল অবধি তাঁকে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ২০১৪ সালে ২ অক্টোবর গাঁধী জয়ন্তীর একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, “মেয়েদের জিনস পরা উচিত নয়, এতে অন্যদেরও সমস্যা হয়। শালীনতা বজায় রেখে পোশাক পরা উচিত এবং ছেলেদের মতো পোশাক পরা উচিত নয়।” এর পরই বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন এবং রাজনৈতিক সংগঠন তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়। বিক্ষোভ শুরু হয় কেরালায়।

Share this article
click me!

Latest Videos

'Uttar Pradesh-এর মতো সুশাসন আনবো West Bengal-এ' Suvendu Adhikari- র চরম প্রতিশ্রুতি #shorts
Narendra Modi : বড়দিনের অনুষ্ঠানে মাতলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সকলকে জানালেন শুভেচ্ছা
২৬-এ Mamata Banerjee-কে বিদায়! মমতাকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বানানোর শপথ Suvendu Adhikari-র
‘West Bengla-এ Uttar Pradesh-এর মতো সুশাসন দেবে BJP’ সনাতনী হিন্দুদের প্রতিশ্রুতি Suvendu Adhikari-র
'ইয়ে ডর মুঝে আচ্ছা লাগা' হিন্দুদের প্রতি সহানুভুতি, বাংলাদেশী জঙ্গিদের টার্গেট Suvendu Adhikari