ক্রিস্টিন ফেয়ারের ইন্টারভিয়ের ভিডিও ভাইরাল। বিবিসি-র বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রোপাগান্ডা প্রচারের অভিযোগ করলেন শশী থারুর-সহ নেটিজেনরা।
পাকিস্তানের প্রোপাগান্ডা প্রচার করছে বিবিসি! এক প্রখ্যাত দক্ষিণ এশিয় রাজনৈতিক ও সামরিক বিশেষজ্ঞের সাক্ষাতকার ঘিরে গুরুতর সমালোচনার মুখে পড়ল ব্রিটিশ টেলিভিশন নেটওয়ার্কটি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে সেই সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতকারের ভিডিও ক্লিপটি। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর থেকে শুরু করে ভারতীয় নেটিজেনরা কড়া সমালোচনা করেছেন বিবিসির। এমনকী সেই দলে যোগ দিয়েছেন, শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূতও।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও সামরিক বিষয়ে বিশিষ্ট পণ্ডিত বলে মনে করা হয় মার্কিন বৈদেশিক সম্পর্ক বিশারদ ক্রিস্টিন ফেয়ারকে। সম্প্রতি বিবিসি ওয়ার্ল্ড চ্যানেলে আফগানিস্তানের চলমান সংকটে ইসলামাবাদের ভূমিকা সম্পর্কে তার একটি সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। সেখানে পাকিস্তান কীভাবে বিশ্বে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে থাকে, তা ব্যাখ্যা করছিলেন ক্রিস্টিন। তাকে বারেবারে বাধা দেন বিবিসির উপস্থাপিকা। শুধু তাই নয়, ওই উপস্থাপিকা একেবারে পাকিস্তানের মুৎপাত্র হয়ে ওঠেন সাক্ষাতকার চলাকালীন। এক পর্যায়ে, পাকিস্তানের পক্ষে বলার মতো কেউ তাদের সঙ্গে সেই মুহূর্তে যুক্ত নেই, ই যুক্তি দেখিয়ে সাক্ষাতকার থামিয়ে দেন বিবিসির উপস্থাপিকা।
ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে, ক্রিস্টিন ফেয়ার বলেন, পাকিস্তান গত ২০ বছর ধরেই আফগানিস্তানে একটা স্থিতিশীল সরকার গঠনে বাধা দিয়ে আসছে। তিনি বক্তব্য শেষ করার আগেই, বিবিসির উপস্থাপিকা তাকে জিজ্ঞেস করেন, আফগানিস্তান অস্থিতিশীল হলে পাকিস্তানে আরও শরণার্থীর ভিড় বাড়বে। তা কীকরে ইসলামাবাদের স্বার্থ সিদ্ধি করবে?
পাকিস্তানে শরণার্থী সমস্যাকেও ক্রিস্টিন 'আরেকটি মিথ' বলে উড়িয়ে দেন। তিনি দাবি করেন, ইসলামাবাদ সবচেয়ে বেশি যেটা চায় তা হল অস্থিতিশীলতা। কারণ তারা সেটা পরিচালনা করতেই অভ্যস্ত। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান এমন ভাব দেখায় যেন তারা দমকল, আগুন নেভাতে এসেছে। বাস্তবটা হল, তারাই আসলে অগ্নিসংযোগকারী। সঙ্গে সঙ্গে বিবিসির অ্যাঙ্কর বলে ওঠেন, 'পাকিস্তান অবশ্যই এটা একেবারেই অস্বীকার করবে।'
ক্রিস্টিনকে এরপর পাকিস্তানকে "সন্ত্রাসের ভার্চুয়াল চিড়িয়াখানা' বলেন। আবার তাকে মাঝপথে থামান ওই উপস্থাপিকা। বিস্ময়করভাবে, তিনি বলেন, পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে যে তারা তালেবানকে তৈরি করেছে। এরপরই তিনি ক্রিস্টিনকে বলেন, পাকিস্তানেরল পক্ষে কেউ নেই বলে, তিনি এই সাক্ষাতকার আর চালিয়ে যেতে পারেছেন না।
বিবিসির উপস্থাপক ক্রিস্টিনের সাক্ষাৎকার শেষ করার ঠিক আগে, ক্রিস্টিন বিবিসি ওয়ার্ল্ড চ্যানেলের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে প্রোপাগান্ডা প্রচারে লিপ্ত থাকার অভিযোগও আনেন। পরে সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকেই বিবিসির সমালোচনা করে জানিয়েছেন, উপস্থাপকের ভূমিকা ছিল 'পাকিস্তানের মুখপাত্রের মতো'।
কংগ্রেস নেতা শশী থারুর টুইট করে বলেছেন, ভারসাম্য রাখার চেষ্টাই হল পশ্চিমী সাংবাদিকতার সমস্যা। তিনি আরও দাবি করেন, পাকিস্তান কখনই তালিবানদের সৃষ্টির কথা অস্বীকার করেনি। কিন্তু, বিবিসি ওয়ার্ল্ডের উপস্থআপিকা ভারসাম্য বদায় রাখতে এতটাই ব্যগ্র ছিল যে, তাও বলে ফেলে।
শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূত এম আশরাফ হায়দারি বিবিসিকে কটাক্ষ করে বলেছেন, 'উপস্থাপিকাকে ভারসাম্যপূর্ণ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয়গুলো শিখতে বলা হোক'।