-অতিমারি করোনা পরিস্থিতির জন্য গোটা বিশ্বের রক্তচক্ষুর শিকার হয়েছে চিন। চিনা বদ্রব্য বর্জন করেছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তার ফলে এবছর দীপাবলিতে ৫০ কোটি ক্ষতির সন্মুখীন হতে পারে চিন
একটা সময় ছিল যখন চিনা দ্রব্যের(Chaina Products) রমরমা বাজারে রীতিমতো কপালে চিন্তা ভাঁজ পরে যেত বিভিন্ন দেশের নিজস্ব প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর। বিশেষ করে দিওয়ালির(Diwali) মরশুমে চিনা লাইটের আকাশেছোঁয়া চাহিদা ছিল চোখে পরার মতো। বিভিন্ন জায়গায় ভিন্নস্বাদের টুনিব্লাবের পসরা সাজিয়ে উৎসবের মরশুমে পকেট গরম করত ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন সেসব অতীত। অতিমারি করোনা(Covid) পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বের রক্তচক্ষুর শিকার হয়েছে চিন। আট থেকে আশি, আজ সকলেই চিনা দ্রব্যের(Chaina Products) নাম শুনলে নাক সিটকায় বা ভ্রূ কুচকায়। শুধু তাই নয়, একসময় যে রংবে রঙের চিনা লাইটে সেজে উঠত বাড়ি থেকে গোটা শহর, এখন তো সেই আলোর উৎসব দীপাবলিতে চীনা লাইট বিক্রির জনপ্রিয়তা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে।
করোনা অতিমারীর পর থেকে লাগাতার চিনা দ্রব্য বর্জনের(Refuse To Chaina product) আহ্বান করা ব্যবসায়ীরা অনুমান করছেন এবার একটা বড়সড় ধাক্কা খাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে চিনের। গোটা দেশজুড়ে ব্যবসায়ীরা কোভিড মহামারীর কারণে যথেষ্ট চিন্তিত ছিলেন, কিন্তু এখন সময় বদলেছে। দীপাবলি উৎসবের(Diwali) মরশুমে দেশের বাজারে বেড়েছে গ্রাহক সংখ্যা। আর তাই দিওয়ালিতে ব্যবসা আবারও মাথা তুলে দাঁড়াবে বলে অনুমান করছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয় ব্যবসায়ীদের মতে এবার দেশে পালিত হবে স্বদেশী দীপাবলি।
কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (CAIT)-এর মতে, দীপাবলি উৎসবের বিক্রিবাট্টা চলাকালীন গ্রাহকদের খরচা করা টাকার মাধ্যমে দেশের অর্থব্যবস্থায় প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ হতে পারে। গত বছরের মতো এবছরও ব্যাবসায়ীরা চিনা দ্রব্য বর্জনে আহ্বান জানিয়েছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমদানিকারীরা চিন থেকে জিনিসপত্র আমদানি করা একপ্রকার বন্ধই করে দিয়েছে। যার ফলস্বরূপ এই বছরের দীপাবলির উৎসবের মরশুমে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়ীক লোকসানের (Losses of 50 Cr) সন্মুখীন হতে চলেছে চিন। এছাড়াও আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, গত বছর থেকেই উপভোক্তারাও চিনা দ্রব্য(Chinese Products) কিনতে একেবারেই আগ্রহী নন। তাই দেশীয় সম্পদ বা ভারতীয় দ্রব্যের চাহিদা বাড়ার ((Increase The Demand Of Indian Product) অনেকটাই সম্ভবনা রয়েছে।
ক্যাটের জাতীয় সভাপতি বিসি ভরতিয়া(B.C Bharatiya) আর জাতীয় মহামন্ত্রী প্রবীণ খান্ডেলওয়াল(Prabin Khandelwal) জানিয়েছেন, ক্যাটস(CAIT) রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেড ডেভলপমেন্ট সোসাইটির তরফে সম্প্রতি দিল্লি(Dilhi) সহ আহমেদাবাদ(Ahamedabad), মুম্বই(Mumbai), নাগপুর(Nagpur), জয়পুর(Jaipur), লখনউ(Lakhnow), চণ্ডীগঢ়(Chandigarh), রায়পুর(Raipur), ভুবনেশ্বর(Bhubaneswar), কলকাতা(Kolkata), রাঁচী(Ranchi), গুয়াহাটি(Gwahati), পাটনা(Patna), চেন্নাই(Chennai), বেঙ্গালুরু(Bangaluru), হায়দরাবাদ(Hyderabad), মাদুরাই(Madurai), পণ্ডিচেরী(Pandechari), ভোপাল(Bhupal) এবং জম্মুর(jammu) মতো প্রায় ২০টি শহরে সমীক্ষা করেছে। আর সেই সমীক্ষায় উঠে এসেছে, এখনও পর্যন্ত ভারতীয় ব্যবসায়ী এবং আমদানীকারকদের তরফে দীপাবলির জিনিসপত্র, বাজি বা অন্যান্য কিছুরই অর্ডার চিনকে দেওয়া হয়নি। ফলে এ বছরের দীপাবলি(Diwali) বিশুদ্ধভাবে ভারতীয় দীপাবলি হিসেবে পালন করা হবে।
ক্যাটের তরফে আরও জানানো হয়েছে, প্রত্যেক বছর রাখীবন্ধনের সময় থেকে নতুন বছর পর্যন্ত ৫ মাসের উৎসবের মরশুমে ভারতীয় ব্যাবসায়ী ও আমদানীকারীরা চীন(Chin) থেকে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার জিনিসপত্র আমদানী করে থাকে। ক্যাটের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই বছর রাখীবন্ধন উৎসবে চিনের লোকসান হয়েছে প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা ও গণেশ চতুর্থীতে ক্ষতি হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। বলা বাহুল্য, এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মেক ইন ইন্ডিয়া এবং আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পে ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর একটি শক্তিশালী যোগদান।