১৯৯১ সালে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হন রতন টাটা। ১৯৯৮ সাল থেকে সাফল্যের মাইলস্টোন গড়া শুরু। প্রেমটাও হয়েছিল, হল না শুধু বিয়েটা
এক নতুন উদ্যোগ নিতে চলেছে টাটা টেলিকম সার্ভিস(TCS)। অতিমারি করোনা পরিস্থিতিতেও টাটা সংস্থা তার বিভিন্ন কোম্পানিগুলো এবং সেখানের কর্মীদের ওপর বিশেষ কোনও প্রভাব পরতে দেয়নি। না মাস মাইনেতে কাঁচি চালিয়েছে না কর্মী ছাটাই করেছে। ওয়ার্ক ফর্ম হোম বা বাড়ি থেকে কাজের সুবিধা দিয়েছে। টাটা কোম্পানির অধিনস্থ সংস্থা টাটা টেলিকম সংস্থার কর্মীদর জন্য আসতে চলেছে দুর্দান্ত একটা খবর(Good News)। এই সংস্থার কর্মীদের কাজের সময়সীমাটা বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। এবার সেই নিয়মে চলবে কাঁচি। হ্যাঁ, আর কোনও অতিরিক্ত সময় অফিসের কাজের জন্য ব্যায় করতে হবে না। ৮-৯ ঘন্টার বদলে মাত্র ৬ ঘন্টা কাজ করার প্রস্তাব(6 Hours Duty) দিচ্ছে টাটা টেলিকম সংস্থা। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে কাজের সময়সীমা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাটা সংস্থা। এই ধরনের কাজের প্রকৃতিকে সংস্থার তরফে বলা হয়েছে ২৫/২৫ মডেল(25/25 Model)। সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও অফিসে থাকতে হয়। বাড়তি কাজের প্রেসার সামলাতেই কর্মীদের অতিরিক্ত সময় অফিসে কাটানোর প্রয়োজন হয়ে পরে। অনেক সময় পরিবার-পরিজনদের বা নিজের প্রয়োজনকেও বিসর্জন দিয়ে অফিস সামলাতে হয়। এই ধরনের কাজের পরিবেশে এবার ইতি টানতে চলেছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস(TCS)। দৈনিক কাজের সময়ের পুরনো ধারণাও বদলে ফেলতে চলেছে তারা। টাটার তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তকে কর্মীমুখী বলে প্রশংসাও করেছেন অনেকে। ভাল কাজে অগ্রণী হওয়া বা বাকিদের দিশা দেখানোর ভূমিকা অবশ্য এই প্রথম নয়,আগেও পালন করেছে টাটা গোষ্ঠী। তার অনেকগুলির কৃতিত্ব আবার টাটার বর্তমান ‘চেয়ারম্যান এমিরেটাস’রতন টাটার।
সম্প্রতিই প্রায় ধুঁকতে থাকা সরকারি উড়ান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার দায়ভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ঋণে জর্জরিত এয়ার ইন্ডিয়া টাটার স্পর্শে প্রাণ পেয়েছে বলে স্বীকার করেছেন অনেকেই। প্রসঙ্গত, প্রায় ৯ দশক আগে টাটা গোষ্ঠীর(Tata Company) হাত ধরেই শুরু হয়েছিল দেশের প্রথম উড়ান সংস্থা। দেশের প্রথম পাইলট জে আর ডি টাটা প্রতিষ্ঠিত সেই টাটা এয়ারলাইন্সের নাম বদলে ১৯৪৬ সালে হয় এয়ার ইন্ডিয়া (এআই)। স্বাধীনতার পরে তার দখল চলে গিয়েছিল সরকারের হাতে। ২০১৪ সালে দেশের উড়ান পরিষেবায় বিদেশি লগ্নির পথ চওড়া করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সে বছর জুনে মালয়েশিয়ার ধনকুবের টনি ফার্নান্ডেজের এয়ারএশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ভারতের আকাশে এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া-র পরিষেবা শুরু করে টাটা। পরে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের সঙ্গে যৌথ ভাবে চালু করে বিমান পরিষেবা সংস্থা‘বিস্তারা’।
আরও পড়ুন-Tata Motors VS Maruti Suzuki-১০ বছরে প্রথম ইতিহাস গড়ল টাটা মোটরস, টেক্কা দিল মারুতি সুজুকিকে
রতন টাটার আমলে টাটা গোষ্ঠীর সাফল্যের তালিকাটা বেশ লম্বা। ১৯৯১ সাল থেকে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান রতন টাটা(Rtan Tata)। দীর্ঘ কয়েক বছরে রতন টাটার আমলে টাটা গোষ্ঠীর সেরা কৃতিত্বগুলো একবার দেখে নেওয়া যাক। তাঁর হাতে যেন রয়েছে আলাদিনের যাদুকাঠি। যেটাতেই হাত রাখেন সেটাই যেন হয়ে যায় রতন টাটার। সাফল্যের সুত্রপাতটা ছিল ১৯৯৮ সাল(Start Success From 1998)। তারপর থেকে আজ অবধি আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি বিজনেস টাইকুন রতন টাটাকে(Ratan tata)। সেই বছরই প্রথম সম্পূর্ণ ভারতে তৈরি যাত্রীবাহী গাড়ি বাজারে আনে টাটা। নাম দেওয়া হয় টাটা ইন্ডিকা। ২ বছরের মধ্যে গাড়িটি এক নম্বর ব্র্যান্ডের জায়গা ছিনিয়ে নেয়। এরপর ২০০০ সালে ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় চা বিক্রেতা সংস্থা টেটলির সম্পূর্ণ স্বত্ব কিনে নেয় টাটা টি। আর এখন টাটা টি আন্তর্জাতিক পানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত। ২০০১ সালে বিমা ব্যবসায়(Policy Business) পা রাখল টাটা। আমেরিকান ইন্টারন্যাল গ্রুপ (AIG)-এর সঙ্গে মিলে হল টাটা এআইজি। ২০০২ সালে সরকারি টেলি যোগাযোগ সংস্থা বিএসএনএল(BSNL) বা বিদেশ সঞ্চার নিগম লিমিটেডের স্বত্ব চলে এল টাটার দখলে। ২০০৩-এ টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস(TCS) বার্ষিক ১০০ কোটি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াল। প্রথম কোনও ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা এত বড় মাইলস্টোন গড়েছিল। ২০০৪ সালে নিউ ইয়র্কের শেয়ার বাজারে এ বার নাম উঠল টাটা মোটর্সের(Tata Motors)। সেই বছরই দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা দেয়ু মোটর্সেরও স্বত্ত্ব কিনে নেয় টাটা মোটর্স। ২০০৭ সালে ইউরোপের দ্বিতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী সংস্থার দখল এল টাটার হাতে। টাটা স্টিল কিনে নিল অ্যাংলো-ডাচ সংস্থা কোরাস-কে। ২০০৮ সালে মধ্যবিত্তের কথা ভেবে টাটা বাজারে নিয়ে এল ন্যানো(Tata nano)। ১ লাখ টাকায় অনেকেই গাড়ি কেনার শখ পূরণের সুযোগ পেয়েছে।
সেই বছরেই আন্তর্জাতিক সংস্থা ফোর্ড-এর জাগুয়ার আর ল্যান্ড রোভারের ব্যবসা কিনে টাটা তৈরি করল নতুন সংস্থা জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার। বিদেশি এই কফি নির্মাতা সংস্থা স্টারবাকস(Starbucks) ২০১২-এ টাটার সঙ্গে হাত মেলায়। তারপর এখন স্টারবাকসে বসে এক কাপ খফির সঙ্গে চলে জমিয়ে আড্ডা বা নিজের মতো করে একটু সময় কাটানো। টাটা তার প্রথম দোকান খুলেছিল মুম্বইতে। সম্প্রতি একটি ফেসবুক পেজে নিজের জীবন কাহিনী বর্ণনা করেছেন শিল্পপতি রতন টাটা। সেখানে উঠে এসেছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের কথা। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন, লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি মেয়ের প্রেমে(Love story) পড়েছিলেন। বিয়ে করবেন ঠিকও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু মেয়েটির পরিবার তাঁকে ভারতে আসতে দেয়নি। তারপর আর বিয়ের কথা সেভাবে ভাবার সুযোগটাই আসেনি।