একজন রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তন ছাত্র, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী। আরেকজন আইনজীবী। অন্যজন চিকিৎসক। সেয়ানে সেয়ানে লড়াইয়ের ক্ষেত্র দমদম উত্তর। ডিলিমিটেশন কমিশনের সুপারিশ মেনে ২০১১ সালে দমদম উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের পত্তন হয়েছিল। ২০২১ সালে বিধানসভা জয়ের লড়াইয়ে সেখানকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন সিপিএমের তন্ময় ভট্টাচার্য, তৃণমূল কংগ্রেসের চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং বিজেপির অর্চনা মজুমদার।
দমদম উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র দমদম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত। ২০১১ সালে, এই বিধানসভা তৈরির বছরে এখানে জিতেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পরে তিনি মমতা সরকারের মন্ত্রী হন। তিনি হারিয়েছিলেন সিপিএমের রেখা গোস্বামীকে। চন্দ্রিমা পেয়েছিলেন ৯৪ হাজার ৬৭৬ ভোট। রেখা পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ৬৫০ ভোট।
২০১৬ সালের নির্বাচনে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে হারিয়ে দেন তন্ময় ভট্টাচার্য। তবে জয়ের ব্যবধান খুব বেশি ছিল না। তন্ময় পেয়েছিলেন ৯১ হাজার ৪৫৯টি ভোট। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পান ৮৫ হাজার ৪১০ ভোট।
বিজেপি প্রার্থী ২০১১ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ৫ হাজার ভোটও পাননি। ২০১৬ সালে তাদের ভোট বাড়ে অনেকটাই। পদ্মপ্রার্থী পান ১৫ হাজারেরও বেশি ভোট।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সারা রাজ্যে শক্তিবৃদ্ধি ও বামেদের শক্তিহ্রাসের যে চিত্র দেখা গিয়েছিল, দমদম উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র যেন তারই প্রতিচ্ছবি। এই কেন্দ্রে সৌগত রায় এগিয়ে থাকলেও, দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য। সিপিএমের নেপালদেব ভট্টাচার্য চলে যান তৃতীয় স্থানে। তৃণমূলের সৌগত রায় ৮৩ হাজার ৯৯৫ ভোট, শমীক ভট্টাচার্য ৭৮ হাজার ৩৪৬ ভোট, এবং নেপালদেব ৩৫৬০৪ ভোট পেয়েছিলেন এই কেন্দ্রে।
পাঁচ বছর আগের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২ বছর আগের লোকসভা নির্বাচনের হিসেব মাথায় রাখলে, স্পষ্টতই এখানে এবার লড়াই হাড্ডাহাড্ডি।
তন্ময় ভট্টাচার্য সুবক্তা হিসেবে পরিচিত। তবে তাঁকে নিয়ে দলের অভ্যন্তরে মাঝে প্রশ্ন উঠেছিল। বছর দুয়েক আগে তিনি বলেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আন্দোলন করা যেতে পারে। এর প্রেক্ষিতে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিও ওঠে।
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য প্রথম মমতা সরকারের সময় থেকেই মন্ত্রী। বর্তমানে তাঁর হাতে চারটি দফতরের আংশিক ও পূর্ণ দায়িত্ব। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য, আইনের মত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকও। তিনি তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রীও বটে।
অর্চনা মজুমদার পেশায় চিকিৎসক। তিনি সম্প্রতি এক বৃদ্ধার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। সার্টিফিকেটে তিনি যে যে কারণে মৃত্যু বলে ঘোষণা করেছিলেন, তা পোস্ট মর্টেম ছাড়া বলা সম্ভব নয়, অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। এ ছাড়া ওই সার্টিফিকেটে তাঁর স্ট্যাম্পে তিনি যে বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী, সে কথারও উল্লেখ ছিল। অর্চনার সম্পত্তির পরিমাণও চোখ ধাঁধানোর মত। হলফনামায় দেওয়া হিসেব অনুসারে তিনি ২৮ কোটি টাকার সম্পত্তির অধিকারী।
এ হেন দমদম উত্তর নিয়ে কৌতূহলের কমতি নেই। এ কেন্দ্রর ভোটগ্রহণ ষষ্ঠ দফায়, ২২ এপ্রিল।