তাপস দাসঃ দিনহাটা বড় আশ্চর্য জায়গা এখন। এখানে মুখোমুখি লড়াইয়ে শামিল এমন দুজন, যাঁরা কিছুদিন আগে পর্যন্ত অন্য দলে ছিলেন, এবং পুরোনো দলেও তাঁরা ছিলেন পরস্পরের শত্রু। ফরোয়ার্ড ব্লকের উদয়ন গুহ। এখন তৃণমূল। আর লড়াই হচ্ছে তৃণমূলের প্রাক্তন ও বিজেপির বর্তমান এমপি নিশীথ প্রামাণিকের। ১৯৭৭ সাল থেকে এ আসন ছিল কমল গুহের। এ অঞ্চলের তিনিই ছিলেন একচ্ছত্র নেতা। ১৯৭৭ সালে থেকে ২০০১ সাল, পরপর ছবার তিনি এই আসন থেকে জিতেছেন। মাঝে একবার, তিনি ফরোয়ার্ড ব্লক থেকে বেরিয়ে গিয়ে ফরোয়ার্ড ব্লক সোশালিস্ট নামে দল তৈরি করে সেই দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৯৯৬ সালে, সেবারও তিনিই জেতেন দিনহাটায়। ২০০১ সালে তিনি ফেরত আসেন ফরোয়ার্ড ব্লকের টিকিটে, এলাকা তখনও তাঁর থেকে মুখ ফেরায়নি।
২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে এখান থেকে ফরোয়ার্ড ব্লকের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কমল গুহের পুত্র উদয়ন। তিনি হেরে যান তৃণমূল কংগ্রেসের অশোক মণ্ডলের কাছে। এর এক বছর পরেই মারা যান কমল গুহ। ২০১১ সালের ভোটে উদয়ন গুহ ফরোয়ার্ড ব্লকের টিকিটে ভোটে দাঁড়ান এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দল প্রার্থী মহম্মদ ফজলে হককে ৩০ হাজারের মত ভোটে হারিয়ে জয়লাভ করেন। ২০১৫ সালে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। ২০১৬ সালের ভোটে উদয়ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে। পুরনো দল ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী অক্ষয় ঠাকুরকে তিনি হারান ২২ হাজারের মত ভোটে।
নিশীথ প্রামাণিক ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের তরুণ তুর্কি। ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের আগে তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন। কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে তিনি সাংসদও হন। এ হেন নিশীথকে এবার দিনহাটা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ২০১১ সালের ভোটে দিনহাটা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩,৯৬৪টি ভোট। ২০১৬ সালের ভোটে বিজেপি এখানে পায় ২৫ হাজার ৫৯৮ ভোট। দিনহাটা বিধানসভা কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নিশীথ প্রামাণিক এই বিধানসভায় লিড নিয়েছিলেন প্রায় ১২ হাজার ভোটের। তিনি পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৮১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পরেশ অধিকারী পেয়েছিলেন ৯৯ হাজারের কিছু বেশি ভোট।
নিশীথ যে কতটা করিৎকর্মা তা বোঝা গিয়েছিল ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে। তিনি প্রায় ৩০০ জনকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এঁদের মধ্যে অনেকেই জেতেন। দিনহাটায় গুহ পরিবারের ক্ষমতা খর্ব করতে নিশীথ প্রামাণিকের মত ডাকাবুকো কাউকে দরকার ছিল, এমন স্বর ফিসফিস থেকে ক্রমাগত জোরালো হচ্ছে। ফরোয়ার্ড ব্লক অবশ্য দান ছাড়তে রাজি নয়। তারা প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে আবদুর রউফকে। গুহ-প্রামাণিক দ্বৈরথে রউফ কতটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবেন, তা জানা যাবে চতুর্থ দফায়, ১০ এপ্রিল। তবে দিনহাটায় যে এনার টানটান লড়াই তা এক বাক্যে বলা যায়।